পাতা:প্রবাসী (চতুস্ত্রিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৫৩৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

শ্রাবণ দৃষ্টি-প্রদীপ BసెNరి হতচ্ছাড়া ছেলেট পালিয়ে এসে বাড়ি থেকে এই সমিসির দলে যোগ দিয়েচে। এখানে ত এই খাওয়া, এই থাকা। যাত্রার দলের মত এক ঘরে একশো লোক শোয় । ছেলেটা হাড়ির হাল হয়েচে—আগে একবার ফিরিয়ে নিতে এসেছিলাম— তা যায় নি । এবার আমি আসচি শুনে কোথায় পালিয়েচে হতভাগা । আহা, কোথায় খাচ্চে, কি হচ্চে-ওদিকে বাড়িতে ওর মা অন্নজল ছেড়েছে। ওই সমিসির দলই তাকে সরিয়ে রেখেচে কোথাষ। আজ তিন দিন এখানে বসে আছি--তা ছোড়া এল না । এর তলায় তলায় তাকে খবর দিচ্চে । আবার আমার ওপর এদের রাগ কি ? বলচে--ছেলে তোমার মুক্তির পথে গিয়েচে, বিষয়ের কীট হয়ে আছ তুমি, আবার ছেলেটাকে কেন তার মধ্যে ঢোকাবে ? শোন কথা। ওদের এখানে বিনি পয়সায় চাকর হাতছাড়া হয়ে যায় তা হলে যে ! আমাক্ষ এই মারে ত এই মারে। দু-বেল অপমান করছে। —কোথা থেকে আপনার ছেলে এদের দলে এল ? –এই সন্নিসির দল গেছল আমাদের মাদারিপুরে। খুব কীৰ্ত্তন করে, ভিক্ষে করে, শিষ্য-সেবক তৈরি করে বেড়ালে ক'দিন ! সেখান থেকে ছেলেটাকে ফুসলে নিয়ে এসেচে। পয়সা হাতে থাকৃত আমার ত ব্যাটার খাতির করত। এখানে খেতে দেয় না ; ওই বাজারের হোটেল থেকে খেয়ে আসি। একটু এই দালানটাতে রাত্রে গুয়ে থাকি, তাও দু-বেলা বলচে-বেরো এখান থেকে। ছোড়াটা ফিরে আসবে, সেই আশায় আছি। স্বামিজীর সঙ্গে দেথা হ’ল না। সন্ধ্যার পরে ষ্টীমারে পার হয়ে বেলুড়ে এলাম ; মনে কত আশা নিয়ে গিয়েছিলাম ওবেলা। মানুষের সঙ্গে মামুষের ব্যবহার যেখানে ভাল নয়, সেই জ্যাঠাইমাদের বাড়ির গোপীনাথ জিউএর পুঞ্জোর সময় যা দেখেচি, হীরু ঠাকুরের প্রতি তাদের ব্যবহার যা দেখেচি– সেই সব একই যেন। দিন দুই পরে ছোট বউঠাকরুণের বাপের বাড়ি থেকে বড় ভাই তাকে নিতে এল । আমার সঙ্গে দশ-পনের দিন দেখা হয়নি, ভাবলুম যাবার সময় একবার দেখা করবই। দুপুরের পরে ঘোড়ার গাড়ীতে জিনিষপত্র ওঠানো হচ্চে, আমি নিজের ঘরে জানলা দিয়ে দেখচি আর ভাবচি ওঠবার সময় গাড়ীর কাছে গিয়ে দাড়াব, না ওপরে গিয়ে দেখা করে আসব ? পায়ের শব্দে পেছনে চেয়ে দেখি ছোটবৌঠাকরুণ দোরের কাছে দাড়িয়ে, রোগশীর্ণ মুখ, হাতায় লাল পাড়বসানো ব্লাউজ গায়ে, পূরণে লালপাড় শাড়ী। আমি থতমত থেয়ে বললাম-আপনি ! আমুন, এই টুলটাতে— তিনি মৃদু, সহজ সুরে বললেন– খুব ত এলেন দেখা করতে । —আমি এখুনি যাচ্ছিলাম, আপনি এলেন, তাই নইলে— ছোটবৌঠাকুরুণ মান হেসে বললেন—ন, নিজেই এলাম। আব আপনার সঙ্গে কি দেখা হবে ? আপনি ত পরীক্ষা দিয়ে চলে যাবেন । বি-এ পড়বেন না ? আমি একটু ইতস্ততঃ করে বললাম-ঠিক নেই, এখানে হয়ত আর আস্ব না। তিনি বললেন—কেন আর এখানে আসবেন না ? আমি কোন কথা বললাম না। দু-জনেই থানিকক্ষণ চুপচাপ । - তারপর তিনি আমার কাছে এগিয়ে এসে মৃদু অক্ষযোগের স্বরে বললেন—আপনার মত ছেলে যদি কখনও দেখেচি ! আগে যদি জানতাম তবে সেবার আপনাকে নিয়ে যে ওরা ঠাট্ট করেছিল, আমি তার মধ্যে যাই ? এখন সে-কথা মনে হ’লে লজ্জায় ইচ্ছে হয় গলায় বঁট দিয়ে মরি। তারপর গভীর স্নেহের স্বরে বললেন—না, ওসব পাগলামি করে না, আসবেন এখানে, কেন আসবেন না, ছিঃ– দরজার কাছে গিয়ে বললেন—না এলে বুঝবো আমায় খুব ঘেন্না করেন, তাই এলেন না। (ক্রমশঃ)