পাতা:প্রবাসী (চতুস্ত্রিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৫৫৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

শ্রাবপ সাধনশ 位、位 ভদ্রলোক একমনে পড়িয়া যাইতেছিলেন। দ্বিধাভরে রতিরাম খানিকক্ষণ চুপ করিয়া থাকিয়া বলিল—সমাচারমে কোই খবর আছে বাবুজী ? রতিরাম বাংলা বলে । ভদ্রলোক মুখ তুলিয়া চাহিয়া বলিলেন –কিসের খবর ? রতিরাম বিশেষ কোন খবরের প্রত্যাশায় ছিল না, আর এক পাটের খবর ছাড়া বহির্জগতের কোনো কথাও তাহার জান ছিল না ; বলিল-পাটুয়াক কেয়া হাল ? ভদ্রলোকটি আশ্চর্ঘ্য হইলেন কি না বুঝা গেল না, তবে আশ্চর্য হইবার কোন লক্ষণ র্তাহার মুখেচোখে দেখা গেল না বটে। হয়ত এ-শ্রেণীর জীব হইতে এই প্রশ্ন ছাড়া অন্য কিছু প্রত্যাশা তিনি করেন নাই। বলিলেন-পাটের খবর ত কিছু জানি না, তবে পঞ্জাবের দিকে খুব বেশী ভূমিকম্প হইয়াছে। রতিরাম বলিল—ভূইডোলা ? কাহা হোয়েছে ? —পঞ্জাবের দিকে ; সব খবর ত এখনও বাহির হয় নাক্ট । রতিরাম বলিল-হামার তে। খবর মিলে নাই । ভদ্রলোকটি বলিলেন—আজই খবর বাহির হইয়াছে ; আজিকার কাগজ পড়িয়াছেন ? রতিরাম মাথা নাড়িয়া বলিল-লেহি। শুধু আজিকার কেন, কোনোও দিনের কাগজই সে পড়ে না ; তাহার ঘরের পাশে বাঙালী পানওয়ালার নিকট হইতে সে শুধু পাটের বাজারের খবরটুকু পড়াইয়া নেয়। খবরের কাগজওয়ালার সহিত তাহার বন্দোবস্ত আছে ; এজন্য তাহাকে সে মাসে চারি আনা পয়স দেয়—অবগু কাগজধান। তাহাকে তখনই ফিরাইয়া দিতে হয়। রতিরাম খানিকক্ষণ চুপ করিয়া রহিল। তারপর বলিল—কোেনা লোকসান হোম্বেছে ? কমুঠে আদমী মরা ? —সে খবর ত এখনও বাহির হয় নাই। ভদ্রলোক জাবার কাগজে মন দিলেন। মিনিট-দুই পরে আবার ৱতিয়ামের দিকে চাছিলেন। দেখিলেন সে অর্থহীন দৃষ্টিতে র্তাহারই দিকে চাহিয়া আছে। বলিলেন—আপনার ঘর কোথায় ? —নোহর বিকানীর রিয়াপথ । —বালবাচ্চ কোথায় আছে ? —ঘরমে—ওতে পাঞ্জাবকা নজদিগই আছে। —ত চিঠিপত্র পান ত ? —হঁ, মাহিনামে একঠো। রূপেয় ভেজ দেই, আওর কুপনমে সমাচার লিখ দিই –আজ চার বছর ঘর নেহি গিয়া । ভদ্রলোক কথা বলিলেন না। রতিরামও চুপ করিয়া জানাল দিয়া বাহিরের দিকে চাহিল। লাইনের দুই ধারে বন ; শিশু, শাল, আম ও বঁাশ— ঘনায়মান সন্ধ্যার আব ছায়া গায়ে মাধিয়া একান্তে দাড়াইয়া আছে । মাঠ হইতে রাখালের গরু লইয়া গিয়াছে—দুই একটি এখনও দলছাড়া হইয় এ-দিকে ও-দিকে ঝোপের পাশে খাদ্যসংগ্রহে ব্যস্ত। মাঠের মাঝে মাঝে ছোট ছোট কুটীর ; বঁাশ ও বাথারির আব্রু-দেওয়া অঙ্গন ; সে বেড়ার উপরে লতার ঝাড় ; কি লতা তা বুঝা যায় না । গাড়ী ষ্টেশনে দাড়াইল । ছোট ষ্টেশন। ষ্টেশন-ঘরের পাশেই ছোট ছোট ঘর—বোধ হয় কুলীদের। রতিরাম চাহিয়া রহিল। একটা ঘরেব কোণে বাহিরে দাড়াইয়া একটি মেয়ে-বছর-কুড়ির ; কোলে তাহার বছরখানেকের একটি শিশু –বোধ হয় তাহারই মেয়ে । ষ্টেশনের আলো আসিম্বা তাহাদের মুখে পড়িয়াছে। রতিরামের মনে হইল, শিশুটি যেন দেখিতে অনেকটা তাহার নিজের মেয়েরই মত । তাহাকে বছরখানেকের দেখিয়া সে ঘর হইতে আসিয়াছে— • তখন তাহাকে সে “বুড়ী বলিয়া ডাকিত। আজ চারি বৎসর সে তাহাকে দেখে নাই । রতিরামের মনে পড়িল, মেয়েটার চুল ছিল কোকৃড়ানো, রংটা বেশ ফস1; বেশ গোলগাল মাংসল চেহার। নরম্ব নরম ছুটি গাল—চুমো খাইলেই ফিক্‌ করিয়া হাসিয়া উঠিত্ত আর কোলে আসিতে চাহিত। ঘর হইতে কে ভারি গলায় ডাকিল,—মুদ্ধি । মা বা মেয়ে কেহই উত্তর দিল না। কালে রঙের কাপড় ও সেই রঙেরই কোর্ভ গাম্ব দিয়া দীর্ঘাবয়ব এক মূৰ্ত্তি বাহির হইয়া আসিল । মা হাসিয়া, মেয়ের মুখের দিকে চাহিল—মেৰে নবাগতের দিকে হাত বাড়াইয়া দিল । গাড়ী আবার চলিল । মাধের শুক্লাচতুৰ্থ । চন্দ্র উঠিয়া পড়িয়াছে। ধোয়৷