পাতা:প্রবাসী (চতুস্ত্রিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৯৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

বৈশাখ এনট্রান্স পরীক্ষা অবধি দিতে পারিলে সে ছেলেদের মাথায় চাটি মারিয়া প্রথম স্থান অধিকার করিবে। সুবিধা পাইলেই তাহারা লতার মাকে বলিয়া পাঠান, যেন অনর্থক বিবাহ দিবার জন্য তাড়াতাড়ি করিয়া এমন মেয়ের ভবিষ্যৎ তিনি নষ্ট না করেন । লতার বয়স এখন বছর তেরো । চেহারাটি আগেরই মত আছে, শুধু লম্ব হইয়াছে খানিকট, আর ঘন চুলের গুচ্ছ ক্যধ ছাড়িয়া পিঠের মাঝামাঝি নামিয়া আসিমাছে । চোথ দুটি বুদ্ধিতে সমুজ্জল, হাত দুটি কৰ্ম্মে তৎপর। নীহারিকার মেয়ের বিবাহ দিবার ইচ্ছাট মাঝে মাঝে মাথা ঝাড়া দিয়া ওঠে, আবার শিক্ষয়িত্রীদের কথা ভাবিয়া সে উৎসাহটাকে তিনি চাপিয় যান। অপদাৰ্থ ছেলের জন্য র্তাহার মনে একটা প্রচ্ছন্ন লজ্জা সৰ্ব্বদাই গুমরিতে থাকে । পাড়ার অন্য ছেলেরা টপাটপ ক্লাসে উঠতেছে, স্পোর্টে প্রাইজ পায় । বড় হইয়া, কাহাকে কোন লাইনে দেওয়া হইবে, তাহ লইয়া বাপ-মায়েরা কত আশা উৎসাহে আলোচনা করে । আর র্তাহার ছেলে দেখ না ? ইহাকে পুতুল সাজাইম এক দেয়ালের তাকে বসাইয় রাখা চলে, আর কোনো কাজ ইহার দ্বারা হইবে না। মেয়ে হইতে হয়ও, তাহার মুখের জননী হওয়ার অপবাদ ঘুচিবে। রামহরির আর যা দোষই থাক, মূখ তিনি নন, স্বতরাং নীহারিকার জন্যই ছেলে মুখ হইল, এ কথা কি আর লোকে বলিতে ছাড়িবে ? কাজেই মেয়ের বিবাহের বিষয় তিনিচুপ করিয়াই আছেন। মেমেট কপালক্রমে দেখিতে ছোটখাট, এখনও তাহাকে দশ-এগার বছরের বলিলে লোকে জোর করিয়া মিথ্যাবাদী বলে না। কাস্তি এখনও বেশীর ভাগ সময় বাড়িতেই পড়ে। স্কুলে তাহার নাম আছে, কিন্তু ঐ নাম পৰ্য্যন্তই। স্কুলে পাঠাইলেই তাহার হজমের গোলমাল হইতে স্বরু হয়, আর নীহারিকা ব্যস্ত হইয়া তাহাকে আবার ঘরে আটক করেন । দেখিতে সে কিশোর কমাপের মত সুন্দর, বেশ সাজিয়াগুঞ্জিয়া থাকে । সবে গোফের রেখা দিতে আরম্ভ করিয়াছে। বাক্সের ভিতর একখানি মোট বাধান খাতা আছে, মাঝে মাঝে তাহাতে কাব্যলক্ষ্মীর আরাধনাও করে। সম্প্রতি এ-বিষয়ে তাহার বিশেষ উৎসাহ দেখা যাইতেছে । শুামলতার স্কুলের গাড়ীতে উমা বলিয়া একটি মেয়ে ধাম, মেয়েটি দেখিতে ভারি স্বন্দর । झिम्रुङ्गौड ፃናት মেয়েটি আবার ঠিক দরজার সামনেই বলে, বড় বড় হরিণনম্বন মেলিমা কাহার সন্ধানে যেন এদিক ওদিক তাকায় । কাস্তিকেই সে দেখিতে চায় কি ? তাহার মত সুদৰ্শন অন্ততঃ এ গলির ভিতর আর কেহ নাই । উমা লতারই বয়সী হইবে বোধ হয়. তবে লতার চেয়ে লম্বায় বড়, চোখ দুটিও একেবারে শিশুর ' সারল্যেই শুধু পূর্ণ নয়। স্কুলের গাড়ীর সহিস আসিয়া বথন ডাক দেয়, “গাড়ী আয় বাবা,” তখন লতার আগে কাস্তিচন্দ্রই তাড়াতাড়ি বাহির হইয় আসে। কিন্তু দুষ্ট মেয়েগুলি আবার ইহা লইয়াও হাসাহসি করে । তাই মাঝে মাঝে সে সামনের ঘরের জানালার আড়াল হইতে দেখে। মধ্যে মধ্যে সে অবশ্য বাহিরও হয়, কারণ উমাকে দেখাই ত তাহার কাজ নয়, উমাকে দেখ দেওয়াও কাজ । কি সুন্দর মেয়েটি । আর সর্বদাই হালকা এক একটা রঙের শাড়ী পরে, এমন চমৎকার তাহাকে মানায় । কাস্তি যদি কবি না হইয়। চিত্রকর হুইত, তাহ। হইলে উমার একখানি ছবি আঁকিয়া নিজে ধন্ত হুইত, উমাকেও • ধন্য করিয়া তুলিত, বোধ হয় । শ্যামলতা দাদার কাগু দেখে আর রাগে তাহার সর্বাঙ্গ জলিয়া যায়। আর উমালক্ষ্মীছাড়ার রকম দেখ। বিষের সঙ্গে খোজ নাই সব কুলোপান চক্র । বিদ্যা দাদারও যত, উমারও তত । রাগের চোটে আর কিছু করিতে না পারিয়া লতা গাড়ীতে উঠিবার সময় বেশ করিম উমার পা মাড়াইয়। দেয় । উমা আপত্তি করিলে বলে, “ ত ভোদা শরীর নিম্নে সামনেট জুড়ে বসিস্ কেন ? তোকে কি ডিঙিয়ে উঠব ?” উমাদের বাড়ি কাছেই, কলিকাতা শহর তাই, না হইলে হাটিয়া ষাওয়া-আসা চলিত। তাহার বাবার অবস্থা ভাল নয়, মেয়ে অনেকগুলি, ছেলে মাত্র তাহারও একটি। মেয়েদের ভিতর উমা দ্বিতীয়, বড়মেয়েটির অর্থাভাবে অতি জপাত্রে বিবাহ হইয়াছে । ইহাকে তাই কষ্ট করিয়াও তিনি স্কুলে দিয়াছেন । মেষে দেখিতে খুব ভাল, পড়াশুনা করিলে ভাল বিবাহ হয়ত হইবে । চেহারার গুণে লোকের স্বনজরেও পড়িতে পারে । স্কুলের প্রাইজ ইত্যাদিতে লোকের চোখের সামনে তাহাকে ভাল করিয়াই তুলিয়া ধরা হয় । উমার ভাই সকলের বড় । কান্তিচন্দ্র কয়েক দিন ঘোরাফের করিয়াই বিনয়ভূষণের সঙ্গে ভাব জমাইয়া লইল । সে অন্য স্কুলে পড়ে, না