পাতা:প্রবাসী (ত্রয়স্ত্রিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৩৪২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

سواOe হইতে পারিত না। যে মধ্যস্থ মাপকাঠির কথা এইমাত্র উল্লেখ করিলাম তাহারই নাম অর্থ ( money )। অর্থশাস্ত্রে অর্থকে ধন বা সম্পদের প্রতিভূ মাত্র বিবেচনা করা হয়। দেশের ধন বা সম্পদ বলিতে সেই দেশের অর্থকে বুঝায় না, সেই দেশের কাচা বা তৈরি মাল বিশ্বের হাটে যাহার চাহিদা আছে—তাহাকেই বোঝায়। অর্থ ব টাকা কাগজের তৈরি নোটও হইতে পারে, তাহার ত নিজের কোন মূল্যই নাই। রৌপ্য বা স্বর্ণমুদ্রা হইলে তাহদের মধ্যস্থিত ধাতুর যাহা বাজার দর ঐটুকুই দেশের সম্পদ হিসাবে তাহার কদর। পণ্যবিনিময়ের সুবিধার জন্য এই যে প্রতিনিধিত্বের স্বষ্টি হইয়াছে, ভিন্ন দেশে ইহার ভিন্ন নাম ও ভিন্ন মূল্য। ইংলণ্ডের মুদ্রা পাউণ্ড ষ্টার্লিং নামে পরিচিত, আমেরিকার মুদ্রার নাম ডলার, ফ্রান্সের মুদ্রাকে ফ্র্যা বলা হয়। তিনটি মুদ্রারই স্বর্ণের পরিমাণ জানা থাকায় তাহাদের বিনিময়ের হার নিদ্ধারণ করা কঠিন হয় না। অবগু কোন দেশের মুদ্র বলিতে আমরা এক্ষণে শুধু সেই দেশের স্বর্ণমুদ্রাকেই বুঝিব না-ব্যাঙ্ক নোট, চেক ইত্যাদিকেও বুঝিব। আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে ধাতব মুদ্র ব্যবহারের প্রয়োজনীয়তা ক্রমে ক্রমে অত্যন্ত হ্রাস পাইয়া গিয়াছে। বর্তমান যুগে বাণিজ্যের অধিকাংশ লেন-দেন ব্যাঙ্ক নোট ও ব্যাঙ্ক চেক দ্বারাই চলিয়াছে ; ধাতব মুদ্রার সহিত বাহতঃ তাহার সম্পর্ক খুবই কম। কিন্তু ভিতরের ব্যাপার অন্যরূপ। আমরা তাম, নিকেল, রৌপ্য, কাগজের নোট বা চেক—যাহারই সাহায্যে পণ্য ক্রয় করি না কেন, এই সকলের পশ্চাতে পাউণ্ড, ডলার, ফ্রাঙ্ক প্রভৃতি মুদ্রা যে ধাতুতে গঠিত সেই ধাতু সমপরিমাণে থাক চাই। একটি দৃষ্টান্ত দ্বারা বিযয়টি আরও পরিষ্কার করিবার চেষ্টা করা যাক। এক পাউণ্ড ছাপের নোট গ্রহণ করিয়া আমি আমার পণ্য বিক্রয় করিলেও তংপরিবর্কে আমি গবৰ্ণমেণ্টের নিকট হইতে এক পাউণ্ডের জন্য নির্দিষ্ট পরিমাণ স্বর্ণ বা রৌপ্য পাইতে অধিকারী। ১৯৩১ সালে স্বর্ণমান পরিত্যাগ করার পূর্ব পর্যন্ত এক পাউণ্ড নোটের পরিবর্তে, ব্যাঙ্ক অব ইংলণ্ড হইতে ১২৩৫ গ্রেণ ওজনের সোনা পাওয়া যাইতে পারিত। উনবিংশ শতাব্দীর মধ্যভাগ পৰ্য্যন্ত অধিকাংশ দেশের মুদ্র রৌপানিৰ্ম্মিত ছিল। উনবিংশ শতাব্দীর শেষার্ধে 윤 SSCBO অষ্ট্রেলিয়া ও ক্যালিফৰ্ণিয়ার সোনার খনি আবিষ্কারের সঙ্গে মুত্র ব্যাপারে রৌপ্যের স্থান স্বর্ণ অধিকার করিতে আরম্ভ করে। লড়াইয়ের সময় অর্থাৎ ১৯১৪ সাল ও ১৯১৯ সালের মধ্যে অর্থনৈতিক ব্যাপারে একটা মস্ত ওলটপালট হইয়া যায় এবং অধিকাংশ দেশষ্ট স্বর্ণমান পরিত্যাগ করিতে বাধ্য হয়। কিন্তু ১৯১৯ ও ১৯২৫ সালের মধ্যে প্রধান প্রধান দেশগুলির সমবেত চেষ্টায় আন্তর্জাতিক স্বর্ণমান পুনরায় স্বদুড় ভিত্তির উপর প্রতিষ্ঠিত হয়। কোন দেশের মুদ্র স্বর্ণমানের উপর প্রতিষ্ঠিত বলিলে আমরা কি বুঝিব? আমরা বুঝিব, (১) স্বর্ণ সেই দেশের 'লিগেল টেণ্ডার’ অর্থাৎ সেই দেশে স্বর্ণের বিনিময়ে বেচাকেন। চলে ; (২) আমরা সেই দেশের রাজকোষে সোনার থান দাখিল করিয়৷ তদ্বিনিময়ে তুল্যমূল্যের স্বর্ণমুদ্রা পাচতে অধিকারী ; (৩) জনসাধারণের অবাধ স্বর্ণ আমদানী ও রপ্তানীর অধিকার আছে । এই স্বর্ণমান হইতে কি উদ্বেগু সাধিত হয় এক্ষণে তাহা বুঝিবার চেষ্টা করা যাক। প্রত্যেক দেশের মুদ্র। যদি একটা নির্দিষ্ট ওজনের স্বর্ণ দ্বারা গঠিত হয়, তাহ। হইলে বিভিন্ন দেশের মুদ্রার বিনিময়ের হারও ( rate of exchange ) নির্দিষ্ট হইয়া যায়। যদি এক ষ্টালিঙে ১২৩৪ গ্রেণ, এক ডলারে ২৫ গ্রেণ, এবং এক ফ্রাতে প্রায় ৫ গ্রেণ খাটি সোনা থাকে তাহ হইলে এক পাউণ্ড ষ্টার্লিং, ৪৮৬ ডলার ও ২৫ ফ্রার সমান হইবে (কাছাকাছি হিসাব ধরা হইল ) । আন্তর্জাতিক বাণিজ্য অতিমাত্রায় বৃদ্ধি পাওয়ায় এই বিনিময়ের হার যথাসম্ভব ঠিক রাখ৷ অত্যন্ত প্রয়োজন । বিশেষতঃ বৰ্ত্তমান কালে অধিকাংশ কেনাবেচার কাজ ধারে হওয়ায় ইহার প্রয়োজন আরও বেশী এবং স্বর্ণমান দ্বারা সেই প্রয়োজনই সাধিত হইয় আসিতেছিল। একটা দৃষ্টান্ত দেওয়া যাক। আমেরিকা হইতে ইংরেজ ব্যবসায়ী তুলা খরিদ করিলে তাহাকে তাহার মূল্য ডলারে হিসাব করিয়া দিতে হইবে। যদি ডলার ও ষ্টার্লিঙের মধ্যে বিনিময়ের হার নির্দিষ্ট থাকে তবেই কত টালিং হইলে তাহার চলিবে তাহা বুঝিয়া লাভালাভ হিসাব করিয়া সে ব্যবসা করিতে পারে। এক টালিং=৪৮৬ ডলার হইলে (উভয় দেশ স্বর্ণমানে থাকাকালীন বিনিময়ের হার এইরূপ চিল)