পাতা:প্রবাসী (ত্রয়স্ত্রিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৩৭১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

আষাঢ় ভৰিভৰ্যতা

  • ළO]

হয়ে কি ভাবছিল। মুহিতাকে চাইতে দেখে বললে, উপবাসে আর গোলমালে মানুষের চোখণ্ড মানুষকে ঠকায়। কাল রাতের অন্ধকারে তোমার যা মুখ দেখেছি, আজ মনে হচ্ছে তার চেয়ে কত সুন্দর তুমি !" মানুষের চারি পাশের আবেষ্টন এমন ধাধা স্বষ্টি করে! নইলে কালকের নিশীথে দেখ। সেই আড়ষ্ট বস্ত্রের পুটুলির মাঝে এই অগ্নিশিখার দুপ্ত রূপ লুকিয়ে ছিল !... সুহিতাকে নিদ্রাতুর দেখে অমিতাভ শয্যার বন্ধন মুক্ত করে চৰ্ম্মাসনের উপর বিছিয়ে দিলে। স্বহিতাকে বললে, "একটু শুলে ভাল হত, যা হৈ হৈ গেছে।’ এমন ভাবে অপরিচিত আবাসে নিদ্রা যেতে স্বহিত সম্পূর্ণ অনভ্যস্ত, অমিতাভ বললেও সে শুধু খানিকটা হেলান দিয়ে বসল। গাড়ীর গতির দোলায় কখন মুহিতা গভীর নিদ্রায় মগ্ন হয়ে গেছল জানতেও পারে নি। পরদিন প্রভাতে ভোরের আলোর রঙীন অঞ্জলি সার দেহে ছড়িয়ে গিয়ে জাগিয়ে দিলে তাকে। তখনও অন্ত সকলে ঘুমিয়ে। অমিতাভের শালটা নিজের গায়ে জড়ান দেখে মুহিতার কুষ্ঠা লাগল-অমিতাভের উপাধানটাও তার পিঠের দিকে ঠেসিয়ে দেওয়া। পাশের চৰ্ম্মাসনে অমিতাভ বাহুর ওপর ললাট রেখে ঘুমিয়ে পড়েছে। একটি আলোর রেখা তিৰ্য্যকু ভঙ্গীতে তার মুখে এসে পড়েছে, বাতাসে কয়েক গুচ্ছ চুল উড়ছে। উদিতহুর্য্যের দীপ্ত আলোর মাঝ দিয়ে স্নহিত তাকিয়ে দেখল, কি সন্ত্রম-ভর স্বন্দর মুখ এ ! এ মুখের দেখা কি সে পেয়েছে আগে ? মানান্তে সিক্ত কেশে শুচিবস্ত্রে সে যখন শুভ্র শিবসুন্দরের পূজা করেছে তখনই কি এ মুখের ছবি তার অস্তরে অঙ্কিত হয়েছে ? তাই কি অতি আপনার বলে মনে হয় এ মুখ ? গোধূলির গেরুয়৷ আকাশ দিয়ে যখন বকের দল নীড়ে উড়ে গেছে, আমলকি বনের আড়াল দিয়ে চাদ দেখা দিয়েছে, তুলসীতলায় প্রদীপশিথাটি কেঁপে কেঁপে উঠেছে, তখন তার আপন-ভোলা মন কি এরই স্বপ্ন দেখেছে ! গৃহপ্রত্যাগামী গো-দল সাথে রাখালের পুত্রবীর বঁাশী, দেবালয়ের বিলীয়মান ঘন্টাধ্বনি, পল্লীবালার সন্ধ্যা-শন্থের মিলিয়ে যাওয়া স্বর তার মনে ত এরই আগমনী বাজিয়েছে ! কতদিনের রঙ-বুলানো মনের আকাশে অমিতাভ কি আজ আলোর রূপে এল ? 6 حمصصوها8 এত দিনের ছন্দে বাধা চিত্তবীণায় এবার কি সে স্বর জাগাল ?.. অমিতাভ চোখ মেলে মুহিত। তার দিকে আছে দেখে হেসে উঠে বসল। গৃহে পৌছলে দেশীয় দাসী ভূত্যের হাসিমুখে মুহিতাকে অভ্যর্থনা করে নামালে । তাদের ভাষা, তাদের দেশ সবই মুহিতার রহস্য-সুন্দর লাগছিল। অমিতাভের ব্যস্ততার সীমা ছিল না, মুহিতাকে কোথায় বসাবে, কি করবে সে যেন ভেবেই পাচ্ছিল না। বেশীক্ষণ কাছে বসবার অবসরও নাই. অথচ কাছে পাওয়ার আগ্রহ অসীম। তার অতিরিক্ত ব্যগ্রতায় কুষ্ঠিত হলেও মুহিত মনে মনে পুলক পাচ্ছিল। সার দ্বিপ্রহরটা সে আপন মনে ঘুরে বেড়াল । আকাশের সীমাছোয়া তৃণবিরল মাঠ, কত দূরে নীলাভ একটা পাহাড়, তালীবনের মাঝ দিয়ে বিশীর্ণ নদীর বালুবক্ষে জলের রূপালি রেপ । এক দিকে ফুলের আগুন লাগী সরষে ক্ষেত, কপি ক্ষেতে গরু দিয়ে জল টেনে দেওয়া। সামনের উদাসী পথ আপন মনে কোথায় চলে গেছে, রঙীন শাড়ীপরা ঋজু-দেহ মেয়েদের সে পথে আনাগোনা. চলার তালে তাদের কোচার ফুল ফেঁপে উঠছে—মুহিত বিস্ময়োজ্জল নয়নে তাকিয়ে দেখছিল। তারই মাঝে এই অল্পকালের মধ্যে পাওয়া অমিতাভের অসীম অঙ্গরাগের পরিচয়গুলি তার দেহমনকে পুলকিত করে তুলছিল। অমিতাভ সমস্ত দিন বাদে সেই মাত্র গৃহে ফিরেছে। স্বহিত তখন মৃদু সঙ্কোচ ও আগ্রহে তার কাছে ঘেঁষে দাড়িয়ে তার হাতে হাত দিয়ে পথ দেখছিল। হঠাৎ বলে উঠল, "একি দাদা আসছেন যে " উমানাথ উদ্যান-পথে জোরে হেঁটে আসছেন। অমিতাভ তার পরিচয় পেয়ে বিস্মিত হয়ে তাকে এগিয়ে আনতে নেমে গেল । - স্বহিত শঙ্কায় পাংগু হয়ে গেল, চন্দ্রনাথ কেমন আছেন ভাবতেও তার সাহস হচ্ছিল না। উমানাথ প্রবেশ করতেই ভগ্নকণ্ঠে জিজ্ঞাসা করল, “বাবা কেমন আছেন ? তার বিকৃত স্বরে উমানাথও একটু চম্কে উঠেছিলেন, তারপর বলে উঠলেন, ‘বাবা, ও বাবা, কতকটা সামলেছেন । ও অম্লখ কি আর সারবে, কিন্তু তোমায় এখনই আমার সঙ্গে