পাতা:প্রবাসী (ত্রয়স্ত্রিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৩৯৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

குமூல চুকিল। শিশির তখনও বসিয়া খাইতেছে দেখিয় তাহার : চটা মেজাজ আরও খানিকটা চটিয়া গেল। তাহাকে ধমকধামক করিয়া বাড়ি হইতে বাহির করিয়া তবে ছাড়িল। শিশির যে দাদার খুব বেশী বাধ্য তাহা নয়, তবে বিদেশেবিভূমে নিতান্তই এখন সে দাদার হাতের মুঠতে আসিয়া পড়িয়াছে, কাজেই তাহাকে বেশী ঘাটাইতে ভরসা করিল না। কলিকাতার বাড়ি হুইত, আর মা কাছে থাকিতেন, তাহ হুইলে সে দেখিয়া লইত। সম্প্রতি ক্রুদ্ধ দৃষ্টিতে দাদার দিকে তাকাইতে তাকাইতে সে বাহির হইয় গেল । সুরেশ্বর আর ধৈর্য্য ধরিতে পারিল না। চিঠির কাগজের প্যাড এবং কলম লইয়া টেবিলের কাছে আসিয়া বসিল। একটা খবর না পাইলে আর ত চলে না, কিন্তু কাহার কাছে চিঠিখানা লিখিবে। যামিনীকে লিখিতে পারিলেই হুইত ভাল, কিন্তু তাহার কাছে আসল খবর কিছুই পাওয়া যাইবে না। এমন কি একেবারে কোনো উত্তর না পাওয়াও বিচিত্র নয়। নৃপেন্দ্রবাবুকে লিখিতে তাহার সাহস হইল না, তিনি সম্প্রতি স্বরেশ্বরের সম্বন্ধে কিরূপ মনোভাব পোষণ করিতেছেন, তাহ জানা ত নাই। মিহিরকে লিখিয়া কোনই কাজ হুইবে না, সুতরাং বাকি থাকেন জ্ঞানদা। র্তাহাকেই লিখিতে বসিল। দুই-তিনবার চিঠি আরম্ভ করিয়া কাগজ ছিড়িয়া ফেলিয়া দিল। অবশেষে সংক্ষেপে দুষ্ট চার লাইন লিথিয়াই লেখা শেষ করিয়া, চিঠি খামে পূরিয়া বন্ধ করিয়া ফেলিল। লিখিল যে গতকাল তাহার শরীর কিঞ্চিৎ অস্থস্থ দেখিয়া আসিয়াছে, আজ কেমন আছেন, জানাইয়া স্বরেশ্বরকে নিশ্চিন্ত করিবেন। চিঠিতে নাম লিখিয়া চাকরের হাতে পাঠাইয়া দিয়া স্বরেশ্বর বসিয়া বসিয়া ভাবিতে লাগিল, এই চিঠিতেই কাজ হুইবে । জ্ঞানদা অতিশয় বুদ্ধিমতী, বুঝিতেই পরিবেন যে কেবলমাত্র তাহার শরীরিক কুশল-জিজ্ঞাসার জন্যই চিঠিখানা লেখা হয় নাই। কি খবর জানিবার জন্য যে স্বরেশ্বর উদ্‌গ্ৰীব হইয়া আছে, তাহা তাহার জানাই আছে। কোনও কারণে এতক্ষণ খবর দিতে পারেন নাই, এখন নিশ্চয়ই দিবেন। স্বরেখরের চাকরের সঙ্গে সঙ্গে নিশ্চয়ই তাহারও চাকর নিমন্ত্রণের চিঠি বহন করিয়া আসিয়া উপস্থিত হইবে। কলিকাতা হইতে আসিবার সময় সাহেবী দোকান SOBO হইতে সে কয়েকখানা ইংরেজী উপন্যাস কিনিয়া আনিয়াছিল। এতদিন সে-সব নাড়িয়া-চাড়িয়া দেখিবার সময় হয় নাই। আজ আর কিছু করিবার যখন খুঁজিয়া পাইল না, তখন বইয়ের প্যাকেটটা টানিয়া আনিয়া খুলিয়া বসিল । সব কখন উন্টাইম্ব-পাটাইয়া দেখিল, কোনটাই বিশেষ লোভনীয় বোধ হইল না। কিন্তু চাকর ফিরিয়া আসা পৰ্য্যন্ত সময়টা কোনমতে ত তাহাকে কাটাইতে হুইবে ? সে পুরা এক ঘণ্টার ব্যাপার। একে ত পাহাড়ে রাস্তায় হঁটিতেই গজাননের অত্যধিক সময় খরচ হইয়া যায়। তাহার পর সেখানে পৌছিয়া খানিকটা তাহাকে বসিতেও হইবে। এ ত আর যে-সে চিঠি নয় যে পাইবামাত্র যেমন হয় দু-লাইন জবাব লিখিয়া চাকরকে বিদায় করিয়া দিলেই চলিবে ? কৰ্ত্তাগিল্পীর পরামর্শ হইবে, হয়ত বা যামিনীরও ডাক পড়িবে। তাহার পর চিঠি লেখা হুইবে, চাকরকে দেওয়া হইবে। গজাননচন্দ্র ষে এই স্বযোগে ও-বাড়ির চাকরদের সঙ্গে এক পালা গল্পও করিয়া লইবে না, তাহাও বলা যায় না। জমিদারবাবুর বিবাহ, অতি খোশ খবর। তাহারা এতদিন ভাল করিয়া কিছুই জানিতে পারে নাই বলিয়াই তাঁহাদের আগ্রহট হুইবে বেশী। বই উল্টাইতে উল্টাইতে এবং নানা ভাবনা ভাবিতে ভাবিতে খানিকট সময় কাটিয়া গেল। দূরে রাস্তায় গজাননের মূৰ্ত্তি দেখা গেল। একলাই আসিতেছে সে, সঙ্গে কোনো চাকর নাই। লক্ষ্মীছাড়ার হাটবার রকম দেখ না, যেন সদ্য আজ হাটিতে শিথিয়াছে। সুরেশ্বরের ইচ্ছা করিতে লাগিল যে ছুটিয়া গিয়া হতভাগার ঘাড় ধরিয়া টানিয়া লইয়া আসে। কিন্তু জমিদারী গাম্ভীৰ্য্য বজায় রাখিয়া তাহাকে যথাস্থানে বসিয়া থাকিতে হইল। গজানন আসিয়া একখানা চিঠি প্রভুর হাতে দিয়া সরিয়া গেল। স্বরেশ্বর অধীরভাবে থামখানা নিৰ্ম্মভাবে ছিড়িয়া ফেলিম চিঠিট টানিয়া বাহির করিল। নিমন্ত্রণ-পত্র একেবারেই নয়। জ্ঞানদা লিথিয়াছেন র্তাহার শরীর অত্যন্ত অমুস্থ। ডাক্তার নড়াচড়, এমন কি কথা বলা পৰ্যন্ত বারণ করিয়া দিয়াছেন। একটু স্বস্থ হইলেই তিনি স্বরেশ্বরকে খবর দিবেন। আর কোনো সংবাদই নাই। স্বরেশ্বর চিঠিখান দল