পাতা:প্রবাসী (ত্রয়স্ত্রিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৪২৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

|ess চাপাইয়া দেয়। বারকয়েক বলিবার পর স্ববলের সেই কাল্পনিক দোষগুলিতে তার বিশ্বাস জন্মিয়া যায়। মেয়ের মত মেয়ের সেই অপদার্থ জামাইটাও বেচারীর সজ্ঞান মুহূৰ্ত্তগুলিতে অধিকার করিয়া থাকে। আজও সমস্ত সময়ট সে মাখমের সঙ্গে মুবলকে মিলাইয়া দেখিতেছিল। স্ববলের সঙ্গে সম্পর্ক একপ্রকার রহিত করিয়া এবং কালীকে পাঠাইতে রাজী না হইয়া সে যে ভালই করিয়াছে এর সপক্ষে সমস্ত যুক্তিগুলি তার কাজে ক্রমেই পরিষ্কার ও অকাট্য হষ্টয় উঠতেছিল। ‘ভয় দেখিয়ে পত্র লিখিছে দাদা, এবার মেয়ে না পাঠালে ফের বিয়ে করবে। আমি বলি, কর । কর গিয়ে তুই ফটা পারিস বিয়ে। ওতে ভয় পাবার পাত্র কৈলেস ধর নয়। একটা মেয়েকে সে রাজার হালে পু্যতে পারবে। হঠাৎ ভয়ানক রাগিয়া, ‘আরে আগে তুই গাজ গুণ্ডামি ছাড়, মানুষ হ’ তবে তো পাঠাব মেয়ে। নিজের গর্ভধারিণী মার গায়ে তুই হাত তুলিস, তোকে বিশ্বাস কি ! এটুকু কল্পনা। রামগতি বলিল, “মার গায়ে হাত তোলে না কি ? ‘তোলেন ? ওর অসাধা কৰ্ম্ম আছে জগতে ? মেয়ে কি আমি সাধে পাঠাই না দাদা-- মেরে ফেলবে যে !’ প্রকৃতপক্ষে মেয়েকে স্বামীর ঘর করিতে না পাঠানোর কৈফিয়তই সে আগাগোড় রামগতিকে দিয়া যায়। স্ববলের মেজাজটা বিশ্রী, অন্য দোষও তার কমবেশী আছে, কিন্তু মেয়ে পাঠানো চলে না এমন অজুহাত সেটা নয়। কিন্তু নিজে রাজা না হইলেও রাজকন্যার সঙ্গে কালীর বিশেষ পার্থক্য আছে বলিয়া কৈলাস মনে করে না এবং মাখমের মত রাজপুত্রগুলির একটাকে ও সে যে কালীর জন্য সংগ্ৰহ করিতে পারিত না এ কথাটাও সে ভুলিয়া থাকে। সে ভালবাসে বলিয়াই স্ববলের চেয়ে ভাল স্বামীর ভাগ্য কালীর অজিত হইয়৷ গিয়াছে এই রকম একটা ঝাপস ধারণাই বরং তার আছে। তবু মাঝে মাঝে স্ববলের দোষগুলি তার কাছে সংসারের রোগশোকের মতই অপরিহার্য্য ও মার্জনীয় মনে হয়। কালীকে না পাঠানোর অনেকগুলি সমর্থনই কমজোরী হইয় যায়। তখন সে আশ্রয় করে জামাইয়ের সঙ্গে তার মনান্তরকে। কালীকে নিতে আসিলে বিনাপ্ররোচনায় স্নবলকে সে এমন SనOBO অপমানই করে, যে, স্কবলও তাকে অপমান না করিয়া পারে না। কৈলাস তখন পাড়াপ্রতিবেশীকে ডাকিয়া জামাইয়ের . মেজাজ দেখায়, তার গালাগালির সাক্ষী করে, এবং সকলের সামনে জোর গলায় ঘোষণা করিয়া দেয় যে জামাই যতদিন জামাইয়ের মত না আসিবে মেয়ে সে কোনমতেই পাঠাইবে না। সপী পোষ্টাপিসের সে হেডপিয়ন তার একটা সম্মান আছে, মেয়ে তার ফেলনা নয় । o কালী ঘরের ভিতর থ’ হইয়া থাকে । ভাবে এত গোলমালে কাজ কি বাবু, দিলেই হয় পাঠিয়ে! মারে যদি না হয় খাবই একটু মার। দাতে দাত ঘষিয়া মুবল সকলের কাছে তার একটা নালিশ জানায়। শুনিয়া, কৈলাস যায় ক্ষেপিয়া। কালীকে ঘরের ভিতর হইতে হাত ধরিয়া টানিয়া আনিয়া চড়া গলায় জিজ্ঞাসা করে, ‘চাস্ ? চাস তুই যেতে ? বল, চেচিয়ে বল, সবাই শুমুক । কালী মুস্পষ্ট মাথা নাড়ে। সুবল সহসা কেমন ঝিমাইয়া পড়ে, আর তেমনভাৰে কৈলাসের সঙ্গে কলহ চালাইতে পারে না। সকলকে শুনাইয়া একটা অশ্রদ্ধেয় কথা বলিয়া ঘাড় উচু করিয়া সে চলিয়া যায়। স্থবল যতক্ষণ উপস্থিত থাকে প্রতিবেশীর তাকে এত বেশী ছিছি করে যে, তার প্রতি কালীর পর্য্যন্ত একটা সাময়িক অশ্রদ্ধা জন্মিয় যায়। স্কবল চলিয়া গেলে তারা একটু স্বর বদলায়। বলে যে জামাই যাই হোক মেয়ে না পাঠাইয়া উপায় কি ? আরও বলে যে কালীর যখন বয়সের গাছপাথর নাই তাকে আর এভাবে রাখা উচিত নয়। কারণ, গ্রামটা খারাপ ছেলেতে ভৰ্ত্তি, কালীর খারাপ হইতে কতক্ষণ ? কৈলাস কটমট করিয়া ইহাদের দিকে তাকায়, কিন্তু কিছু বলে না। নিজেই এক ছিলিম তামাক সাজিয়া টানিতে থাকে। একজন বয়স্ক বিধবা কথাটা আরও স্পষ্ট করিয়া দেয়। ‘হ্যা লো কালী, সেদিন দুপুরবেলা বংশী কি করতে এসেছিল রে ? তোর কাছে তার কি দরকার ?” কালী মুখ লাল করিয়া বলে, কবে মাসী ? কৈলাস লাফাইয় ওঠে। বলে ‘খুন করে ফেলব কাতুর ম। যতনের পিসি রোজ দুপুরে এসে বসে থাকে জানিল নে छूहे ?’