পাতা:প্রবাসী (ত্রয়স্ত্রিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৪৭৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

£8e দোকানদারের জাত বলিয়াছিলেন সেই ইংরেজ জাতি পর্যান্ত অতিষ্ঠ হইয়া উঠিয়াছে। বাঙালীদের মধ্যে আগে বড় বড় সওদাগর ছিল, ইংরেজরাজত্বেরও গোড়ার দিকে বড় বাঙালী বণিক ছিল, এখনও অল্পসংখ্যক এরূপ লোক আছে। তাহাতেই প্রমাণ হয়, যে, বাঙালীর বুদ্ধি ব্যবসা-বাণিজ্যের ক্ষেত্রেও তাহার কৃতিত্বের কারণ হইতে পারে। ফেযে অবস্থা ও কারণের জন্যই হউক, বাঙালীর একটু আগে ইংরেজী শিখিয়াছিল। কেরানী ও অন্য নিম্নপদস্থ কৰ্ম্মচারীর দরকার হওয়ায় ইংরেজ রাজপুরুষেরা প্রথমটা বাঙালীদিগকে ঐ সব চাকরি দিত এবং অনুগ্রহ করিত। ডাক্তারী ওকালতী ব্যারিষ্টারীতেও প্রথম প্রথম বাঙালীদের বিশেষ সুবিধা হইয়াছিল তাহাদের ইংরেজী শেখার গুণে। এই হেতু বাঙালীর ধনাগমের প্রধান উপায় ব্যবসা-বাণিজ্যে মন দেয় নাই। ইত্যবসরে অন্যেরা সেই ক্ষেত্র দখল করিয়াছে। তা ছাড়া, আরও একটা কারণে বাঙালীদের ব্যবসা-বাণিজ্যে অবনতি হুইয়াছে। হিন্দু বাঙালীদের মধ্যে যে-সব জাতির লোকে বৈশুবৃত্তি করে, তাহদের সামাজিক মৰ্য্যাদা ও সম্মান যথেষ্ট নহে। ইংলণ্ডের বড় বড় ব্যবসাদার লর্ড-শ্রেণীতে উন্নীত হইয়া অভিজাতদের মধ্যে পরিগণিত হয়। আমাদের সমাজে তাহা হইবার জো নাই। এখানে এক জন সরকারী কেরানী বাবুর যে সামাজিক মর্যাদা আছে, তাহার শতগুণ আম্বের শতগুণ দানশীল ব্যবসাদারের সে সম্মান না-থাকিতে পারে । এইরূপ অবজ্ঞাত বৃত্তি অবলম্বন করার চেয়ে পনের কুড়ি টাকার কেরানীগিরি পছন্দ করার ইহা একটা কারণ। বাঙালী যদি ব্যবসা-বাণিজ্যে মন দেয়, তাহা হইলে নিশ্চয়ই তাহাতেও সফলতা লাভ করিতে পারে। অবশ্য" ব্যবসায়ী হইতে ইচ্ছা করিলেই হওয়া যায় না। ইহারও শিক্ষা এবং শিক্ষানবিশী চাই। এই শিক্ষা কেহ যাচিমা দিবে না, পাইবার বিধিমত নানা চেষ্টা করিতে হইবে। তাহার পর মূলধনের কথা। কিছু টাকা না-থাকিলে ব্যবসা করা চলে না। আগেকার কালের অনেক বাঙালী ব্যবসাদার অতি সামান্য অবস্থা হইতে ধনী সওদাগর হইয়ছিলেন। বর্তমানে যেসব মাড়োমারী ও অন্ত ব্যবসাদারের কলিকাতার প্রধান বণিক, তাহারা প্রত্যেকেই উত্তরাধিকার S<>8O, স্বত্রে প্রভূত মূলধন পাইয় তাহার সাহায্যে ব্যবসা আরম্ভ করেন নাই। অনেককে সামান্ত মজুরীর কাজ করিয়া তাহা হইতে টাকা জমাইয়া ক্রমশঃ বৃহৎ হইতে বৃহত্তর কারবার করিতে হইয়াছিল। দরিদ্র বাঙালীদিগকেও তাহা করিতে হইবে - , ব্যবসাতে বুদ্ধি খাটাইতে হইবে, হিসাবী অবিলাসী স্বল্পবামী সঞ্চমী পরিশ্রমী হুইতে হইবে, বার-বার অকৃতকাৰ্য্য হইলেও অদম্য উৎসাহে নূতন চেষ্টা করিতে হুইবে । তবে ব্যবসা-বাণিজ্যে বাঙালী কৃতী হইতে পারিবে। বঙ্গের বাহির হইতে আগত ব্যবসাদারদের বুদ্ধি ব্যবসাতে বাঙালীর চেয়ে বেশী মনে হুইবার কারণ আছে। “যাদৃশী ভাবনা যন্ত সিদ্ধিৰ্ভবতি তাদৃশী” “যাহার ভাবনা যেরূপ সিদ্ধিও সেইরূপ হয়” । যাহারা বাহির হইতে বঙ্গে ব্যবস করিতে আসে তাহদের প্রত্যেকের প্রধান চিন্তার বিষয় অর্থ-উপার্জন, অধিকাংশের একমাত্র চিন্তার বিষয় টাকা রোজগার। বঙ্গনিবাসী বাঙালীদের সম্বন্ধে ঠিকৃ এ-কথা বলা চলে না । ব্যবসা ছাড়া আরও অনেক ভাল মন্দ জিনিষ বঙ্গীয় অবাঙালী রোজগারীদের চেয়ে বাঙালীদের হৃদয়-মনের উপর আধিপত্য করে । এক কথায়, বঙ্গের ব্যবসাদার অবাঙালীরা ব্যবসাতে যেমন একাগ্ৰ, বাঙালীরা ব্যবসাতে ততটা একাগ্র নহে। যে-সব কারণে বাঙালীদের ব্যবসাবুদ্ধি কম মনে হয়, ইহা তাহার মধ্যে একটি। অনেক বাঙালী ছেলে বিদেশে ও স্বদেশে নানাবিধ পণ্যশিল্প শিথিয়াছে। তাহদের অনেকে মুলধন ও মূলধনীর অভাবে কারখানা খুলিয়৷ আপন আপন বিদ্যার পরিচয় দিতে ও ধন বাড়াইতে পারে না। ধনী বাঙালী বেশী নাই বটে ; কিন্তু যাহাদের বেশী বা অল্প সঞ্চয় আছে, তাহারা যৌথকারবার হিসাবে কারখানা খুলিয়া পণ্যশিল্পবিং বাঙালী যুবকদের অর্জিত বিদ্যার সদ্ব্যবহারের স্বযোগ দিলে উভয় পক্ষেরই সুবিধা হয় এবং বঙ্গেরও ধন বাড়ে। অবশ্য, যে-কেহু বলিবে, সে একটা পণ্যশিল্পের ওস্তাদ, তাহাকেই ওস্তাদ ধরিয়া লইলে চলিবে না ; পরখ করিতে পারা চাই। আবার, কোন কোন বাঙালী পণ্যশিল্পবিদের চেষ্টা ব্যর্থ হইয়াছে বলিয়া সকল বাঙালী পণ্যশিল্পবিংকে অকেজো মনে করা ষায় না। ভারতবর্ষে ইংরেজজাতীয় কোন কোন “বিশেষজ্ঞের”