পাতা:প্রবাসী (ত্রয়স্ত্রিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৪৯৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

শ্রাবণ চোখ আর কান গিয়ে ভারি বিপদ হয়েচে । প্রত্যেক বছরেই আশা করি এবার উনি ভাল হবেন, সংসারের ভার নেবেন— কিন্তু তা আর হন না। আত্মীয়রা আসেন, দেখে চলে যান... উনি আবার একটু খিটখিটে মানুষ কি-না ! ‘আপনাকেই সব করতে হয় ত?” ‘করি কোনো রকমে, আর কাজ ত এমন কিছু নয় ! সকাল বেলায় ওঁকে মুস্থ করে রেখে ট্রেনে বেরিয়ে যাই, সন্ধ্যের আগেই ফিরে আসি —দাড়ান, ভয় পাবেন না, ওর অমন হয় মাঝে মাঝে । বলিতে বলিতে হরিপদ তাড়াতাড়ি আসিয়া স্ত্রীর অৰ্দ্ধেক দেহটা কোলের উপর তুলিয়া লইল। হাত-মুখ কিছুতকিমাকার বাকাইয়া মেমোট তখন গে। গে৷ করিতেছে। সযত্নে তাহার গায়ে হাত বুলাইয়া শান্ত হাসি হাসিয়া হরিপদ কহিল, ‘আপনাকে কাছে পেয়ে আনন্দ হয়েচে কি-না...ডাক্তার বলে এর নাম মৃগী।’ ভয়ে আড়ষ্ট হইয়া নীলা বসিয়া রহিল। হরিপদ কহিল, ‘বিয়ের এক বছর না যেতেই এই অমুখ। পরের চাকরি করি, চাকরিই ত ভরস, তাই সেবাযত্ন করার তেমন সময় পাইনে। একদিন অজ্ঞান অবস্থায় আমার হাতটা কামড়ে দিয়েছিলেন... এই দেখুন না হাসপাতালে গিয়ে এই আঙুলটা বাদ দিতে হমেচে । বলিয়া সে আবার হাসিল । এই পরিচ্ছন্ন হাসিটুকুর মধ্যে কোথাও ক্লাস্তি নাই, অবসাদ নাই, বিরক্তি নাই। এই চিররশ্ন কুরূপ স্ত্রী, এই দারিদ্র্য ও স্বজন-সহায়হীন দুঃস্থ জীবন—ইহাদেরই আসনের পরে বসিয়া এই শান্ত নিরীহ মানুষটি যেন কঠিন তপস্যা করিয়া চলিয়াছে। ইহ সংগ্রাম নয়, সাধন। একটি অপরিসীম সৌন্দর্ঘ্যোপলব্ধিতে নীলার সর্বশরীর রোমাঞ্চ হইয়া উঠিল। আকাশের ধ্রুবতারার আচঞ্চলতাকে তাহার মনে পড়িল, তাহার মনে পড়িল প্রভাতসুৰ্য্যের প্রথম রশ্মিটির পবিত্রতাকে ! চুপ করিয়া সে বসিয়া রহিল, বাহিরে রাত্রি গভীর হইতে লাগিল, স্বামী অপেক্ষা করিতেছেন, কিন্তু তাহার উঠতে ইচ্ছ। হইল না। দেবতার মন্দিরে সে যেন এক সামান্ত পূজারিণী, তাহার ইচ্ছা হইল ধূপ-ধূনা দিয়া এই প্রদীপটি লইয়৷ এই অৰ্দ্ধশয়ান হরপাৰ্ব্বতীর আরতি করিয়া যায়। চক্ষু তাহার বাস্পাকুল হইয়া আসিল । جسمسيحي :C अजfबांझु ква একটু পরে রোগিণী আবার স্নস্থ হুইল। স্থস্থ হইয়া সে হাসিল, সে হাসি দেখিলে মানুষ ভয় পায়। হাতটা বাড়াইয আন্দাজে সে নীলার একখানি হাত ধরিল, তারপর সেখানি লইয়৷ নিজের মাথার পরে রাখিয়া কহিল, "আশীৰ্ব্বাদ কর দিদি। নীলা তাহার মুখের কাছে মুখ লইয়া কহিল, "আশীৰ্ব্বাদ যে চাইতে এলাম !’ এমন সময় বাহিরে মিষ্টার মুখার্জির গলার আওয়াজ শোনা গেল। নীল আর বসিতে পারিল না, উঠিয় দাড়াইয় কহিল, এখানে থাকলে কাল আবার আসতুম, কিন্তু ওঁর থাকার উপায় নেই ত!’ হরিপদ উঠিয়া আসিয়া প্রণাম করিতে চাহিল, নীল সরিম। দাড়াইয় কহিল, ‘অমন, কাজ করবেন না, প্রণামের যোগ্য আমি নয়, আপনি ? হরিপদ অবাক হইয় তাহার দিকে তাকাইল। নীল তাড়াতাড়ি রোগিণীর মুখখানি নাড়িয়া আর একটু আদর করিয়া বাহির হইয়া আসিল । হরিপদ আলো ধরিতে গেল, কিন্তু সে বাধা দিয়া কহিল, কিছু দরকার নেই, বেশ যাব আমরা, আপনি গিয়ে বন্ধন ওঁর কাছে।’ উঠানে নামিয়া স্বামীর সহিত গিম৷ সে মিলিত হইল। জ্যোৎস্নায় চারিদিক ভাসিয়া যাইতেছে, পথ দেখিয়া লইবার কিছুই অন্ধবিধা হইল না। মিষ্টার মুখাজি একটু উত্যক্ত হইয়াছিলেন, একজন নগণ্য সর্টারের বাড়ির উঠানে স্বপারিন্টেণ্ডেণ্ট হইয় এতক্ষণ অপেক্ষ করাট। তাছার সম্মানে আঘাত করিয়াছে । ‘গল্প জমেছিল না-কি ? চলিতে চলিতে নীল কহিল, ‘ন । তবে বুঝি হরিপদ জলখাবার খাওয়াচ্ছিল । ওর স্ত্রীর সঙ্গে ‘গঙ্গাজল পাতিয়ে এলে না কেন ? নীল বিদ্রুপ শুনিয়াও চুপ করিয়া রহিল। মিটার মুখার্জি পুনরায় কহিলেন, ‘সামান্ত লোককে প্রাধান্ত দেওয়া তোমার স্বভাব।” নীল একবার তাহার মুখের দিকে তাকাইল, তারপর মুখ নীচু করিম চলিতে চলিতে কহিল, ‘সামান্ত নয় ? এইবার তাহার চক্ষে জল নামিমা আসিল ।