পাতা:প্রবাসী (ত্রয়স্ত্রিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৫৪৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

© e B হইয়াছে। এই দুর্দিনে লোক আবার পল্লীগ্রামের কথা মনে করিতেছে ; লোক বুঝিতেছে, পল্লীগ্রামে যাইয় আবার সরল জীবন-যাত্রার পদ্ধতি অবলম্বন না করিলে আর উপায় নাই। কিন্তু বাংলার পল্লীগ্রামের যে অবস্থা হইয়াছে, তাহাতে তথায় যাইয়া ‘ভদ্র’-সম্প্রদায়ের লোক কিরূপে অল্পসংস্থান করিবে ? সরকার এতকাল পল্লীগ্রামের দিকে দৃষ্টিপাত করেন নাই। ফলে পল্লীগ্রাম শ্ৰীভ্রষ্ট হইয়াছে। আর কোন দেশে সরকারের পক্ষে এরূপ ভাবে প্রদেশের শতকরা ৯৫ জন লোকের বাসস্থান উপেক্ষা ও অবজ্ঞা করা সম্ভব কিনা সন্দেহ ; কারণ, আর কোন দেশে শাসনের ব্যয়বাহুল্যে দেশের কল্যাণকর কার্য্য সম্পন্ন করিবার উপযোগী অর্থের অভাব হইলে শাসকদিগের পরিবর্তন অবশ্যম্ভাবী হয়—মন্ত্রিমণ্ডল কাৰ্য্য ত্যাগ করিতে বাধ্য হইয়৷ থাকেন। বাংলার ব্যবস্থাপক সভা থানায় থানায় একটি করিয়া দাতব্য চিকিৎসালয় প্রতিষ্ঠা করিবার প্রস্তাব গ্রহণ করেন। সরকার অর্থাভাবে সেই ক্ষুদ্র প্রস্তাবটিও কার্য্যে পরিণত করেন নাই। সংপ্রতি বাংলা সরকার ম্যালেরিয়|নাশের নূতন উপায় পরীক্ষার জন্য বার্ষিক বিশ হাজার টাকা মঞ্জুর করিয়াছেন। কিন্তু বড়লাটের কলিকাতায় সফরে আগমনে যে ইহা অপেক্ষ অনেক অধিক অর্থব্যয় হইয়াছে, তাহা বলাই বাহুল্য। মন্ত্রীর পর মন্ত্রী আশা দিয়াছেন, পল্লীগ্রামে পানীয় জল সরবরাহের সুব্যবস্থা শীঘ্রই হইবে ; কাৰ্য্যকালে দেখা গিয়াছে বিশেষ কিছু হয় নাই । চিত্তরঞ্জন দাশ মহাশয় যখন বাংলার রাজনীতি ক্ষেত্রে আবিভূর্ত হন, তখন তিনি পল্লী-সংস্কারের প্রয়োজন উপলব্ধি করিয়া দেশবাসীর নিকট হইতে সংগৃহীত অর্থে একটি ধনভাণ্ডার স্থাপিত করিয়া তাহার আয় পল্লী-সংস্কারকার্ষ্যে ব্যয়ের ব্যবস্থা করিয়াছিলেন। কিন্তু তাহার কি হইয়াছে, তাহা সেই ভাণ্ডারের ভারপ্রাপ্ত ব্যক্তির দেশের লোকের গোচর করা প্রয়োজন বা কৰ্ত্তব্য বলিয়া বিবেচনা করেন নাই। বলা বাহুল্য, পল্লী-সংস্কারের কতকগুলি কাজ সরকার ব্যতীত দেশের লোক সঙ্ঘবদ্ধ হইয়াও করিতে পারেন না। দৃষ্টান্তস্বরূপ বাংলার হাজা-মজা নদীসমূহের সংস্কারের উল্লেখ করা যাইতে পারে। এইরূপ বিরাট কাৰ্য্য সরকারকেই করিতে হয়। বাংলার নদীগুলির দুর্দশা যে বাংলার স্বাস্থ্য ও "প্রবাসী" SO8O সম্পদ নষ্ট করিয়াছে, তাহা সকলেই জানেন। যিনি মিশরে নীল নদের প্রবাহ নিয়ন্ত্রিত করিয়া অসাধ্য সাধন করিয়াছিলেন সেই বিশ্ব-বিখ্যাত পূৰ্ত্তবিদ্যাবিং স্তর উইলিয়ম্ উইলকক্স স্বতঃপ্রবৃত্ত হইয়া পরিণত বয়সে এ-দেশে আসিয়া বাংলার নদীগুলির উন্নতি সাধনোপায় নির্দেশ করিয়াছিলেন। বাংলা সরকার সে-কথায় কর্ণপাত করেন নাই । এইরূপে সরকারের কৰ্ত্তব্যে উপেক্ষায় ও দেশের লোকের অসহায় ভাবজনিত উদ্যমাভাবে বাংলার পল্লীগ্রাম রোগের আকর ও দারিদ্র্যের কেন্দ্র হইয়াছে। অথচ আজ সকলেই উপলব্ধি করিতেছেন, গ্রামে ফিরিয়া যাওয়া প্রয়োজন । শিক্ষিত লোকের গ্রামে থাকিলে তবে গ্রামের স্বাস্থ্যোন্নতির উপায় হইতে পারে। র্তাহাদিগের আন্দোলনে সরকার, জেলা বোর্ড প্রভৃতি কৰ্ত্তব্যে অবহিত হইতে পারেন। কিন্তু তাহদিগের গ্রামে থাকিবার সর্বপ্রধান অন্তরায়—গ্রামে অর্থেপার্জনের উপায়ের অভাব। সকল দেশ যখন স্ব-স্ব শিল্পের উন্নতিসাধন করিয়া অর্থোপার্জনের উপায় করিতেছে, তখন এ-দেশে সে-বিষয়ে কোন প্রয়াসই লক্ষিত হয় নাই। কোন কোন শহরে প্রতীচ্য প্রথায় বড় বড় কলকারখানা প্রতিষ্ঠিত হইয়াছে বটে, কিন্তু পল্লীগ্রামে যে-সব শিল্প স্বল্পব্যয়ে প্রতিষ্ঠিত ও পরিচালিত হইতে পারে, যে-সব শিল্পের দ্বার গ্রামের লোকের নিত্যব্যবহার্য্য পণ্য উৎপন্ন করা যায়, সে-সব শিল্পের দিকে এতদিন কেহ দৃষ্টিপাত করেন নাই। আয়ালণ্ডে স্তর হোরেস প্লাংকেট প্রমুখ উৎসাহী কৰ্ম্মীর সরকারের সাহাধ্য গ্রাহ না করিয়া সমবায় নীতিতে দেশের শিল্পের উন্নতিসাধনের চেষ্টা করিয়াছিলেন, সফলকামও হইয়াছিলেন। তাহার পর বিলাতের পালেমেণ্ট আয়ালণ্ডে শিল্পের উন্নতিসাধনের উপায় নিৰ্দ্ধারণের জন্য কমিটি গঠিত করিয়াছিলেন। আমাদিগের দুর্ভাগ্যক্রমে এ-দেশে সেরূপ কোন লোকনামকের আবির্ভাব হয় নাই। কিন্তু দেশের দারিদ্র্য দিন-দিন বৰ্দ্ধিত হইয়াছে, দেশে বেকারের সংখ্যাও বাড়িয়াছে। দেশে সন্ত্রাসবাদ বা বিভীষিকাবাদের বিস্তারে সরকার বিত্রত হইয়াছেন–র্তাহারা সৰ্ব্বরোগহর মনে করিয়া দমননীতি অবাধে প্রয়োগ করিয়া বুঝিয়াছেন তাহু উপযুক্ত ভেষজ নহে। সঙ্গে সঙ্গে তাহারা বুঝিতে পারিয়াছেন, যতক্ষণ লোককে অন্নার্জনের উপায়