পাতা:প্রবাসী (ত্রয়স্ত্রিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৫৫৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

6X* কাছে আর আমার মুখ দেখাবার জো নেই ; যে-ই দেখে, বলে - ওম, কেমন পাষাণ বাপ ম' গো ! এতদিন হ’ল মেয়েকে পাঠিয়েচে একবার নিয়ে যাবার নাম করে ন! ঐ চিঠি যা আসে তাহাতে এসবের উত্তর হিসাবে কিছুই থাকে না ; একরাশ উপদেশ থাকে মাত্র । চপল মনে মনে বলে- ‘চপীর ভাগ্যে সব সমান ; আচ্ছা বেশ...’ Vo দুপুরুবেল। শ্বশুর আপিসে, স্বামী কলেজে, ননদ স্কুলে। চপল শাশুড়ী আর পিস্শাশুড়ীকে রামায়ণ পড়িয়া শুনাইতেছিল, তাহার একে একে ঘুমাইয়া পড়িলেন। একটু পরে বই বন্ধ করিয়া বাহিরে আসিল। রামায়ণে তিনজনে আসিয়৷ পঞ্চবটী বনে আসিয়া বাস বাধিস্থাছেন। ঠিক এই জায়গাটিতে শাশুড়ীর ঘুমাইয় পড়িলেও চপল বিন্ধাকাননের সেই অপূৰ্ব্ব বর্ণনা শেষ না করিয়া উঠিতে পারে নাই।...অযোধ্যার রামচন্দ্রের চেয়ে পঞ্চবটীর রামচন্দ্রকে বেশী ভাল লাগে। কাননচারিণী সীতার উপর একটা ঈর্ষামিশ্রিত সহানুভূতি জাগিয়া উঠিয়৷ মনটাকে তৃপ্তি আর অস্বস্তি দুইয়েই ভরিয়া তোলে। বারান্দায় আসিমা দাড়াইল । চাওয়া যায় না ; মনে হয় সারা কলিকাতাটায় যেন আগুন লাগিয়াছে -উচু নীচু লক্ষ বাড়ির দেওয়াল বাহিম ছাদ ফুড়িয়া শিখা লকৃ লক্ করিয়৷ উঠতেছে কি এক রকম শাদাটে নীল আগুনের- যাতে এতটুকু ধোয়ার স্নিগ্ধতা নেই। এই সময়ে বেলপুকুরের কথা বেশী করিয়া মনে পড়ে দীঘির পাড়ে সেই অন্ধকার সপ্তপর্ণী গাছের তলা কালে জলের উপর তরতর ঢেউ... “চিঠি আছে!” সঙ্গে সঙ্গে সদর দরজায় পিয়নের মুঠির ঘ পড়িল। চপলা তাড়াতাড়ি নামিয়া যাইতে যাইতে দরজার ফাক বাহিম একখানি পোষ্টকার্ড উঠানে আসিয়া পড়িল । বাবার চিঠি শ্বশুরকে লেখা। পড়িল – মামুলি চিঠি, তাহার উল্লেখও নাই। “আশা করি বাড়ির সর্বাঙ্গীন কুশল”— এরই মধ্যে সে যতটুকু আসিয়া পড়ে। - স্বামীর পড়িবার ঘরে গিয়া বসিল। এটা-সেটা লইয়া খানিকটা নাড়াচাড়া করিয়া আবার বাবার চিঠিটা লইয়া SOBC পড়িল। বাবার চমৎকার লেখা! এদের বাড়িতে কাহার লেখা এমন নয়। বলিতে নাই গুরুজন—কিন্তু শ্বশুরে লেখা ত একেবারে বিশ্রী ! স্বামীর লেখাটা অত খারাপ ন বটে, তা বলিয়া বাবার লেখার সামনে ঘেষিতে পারে না।... স্বামীর গানের খাতাটা টানিয়া লইয়া তুলনা করি:ে লাগিল।--কিসে আর কিসে! ডাগর ডাগর ছাপার ম অক্ষর, ওপরে ঢেউখেলান মাত্রা এ এক জিনিষই আলাদা ...স্বামী বলে—‘একটু কাচা লেখা—কি সব পাক লেখা ে নিজেদের ! লেখার দিকে বাবার ঝোঁক ছিল বড় ; চপলাকে লইয়া অনেকটা চেষ্টা করিয়াছিলেন। একেবারে বাবার মত লেঃ হওয়া বরাতের কথ, তাহ হইলেও স্বামীকেও সে খুব হারাইয় দিতে পারে। - লেখার কথাতেও বেলপুকুর আসিয়া পড়ে। বাবা-মা মধ্যে তর্ক হইতেছে। বাবা বলিতেছেন- “চপীর লেঃ দেখেই তে ওর শ্বশুর পছন্দ ক’রে ফেললে।” ম৷ বলিতেছেন- “আহ, আর ওর অমন চোখ, মুখ গড়ন বুঝি কিছু নয় ?” - আজকাল শ্বশুরবাড়িতে নানা মুখে প্রশংসা শুনি মা'র অত গুমরের ‘চোখ, মুখ, গড়ন সম্বন্ধে একটু কৌতুহ হইয়াছে একটা সজ্ঞানত আসিম পড়িয়াছে। টেবিলে উপর হইতে হাত-আরশিটা তুলিয়া লইয়া প্রতিচ্ছায়ার দি৷ে চাহিল--হাসি হাসি সলজ্জ–যেন অন্ত কাহার চোখ। বাপে বাড়ির আরশিতে এরকম ছায় পড়িত না যত চায় চোখদুটে যেন লজ্জাম ভরিয়া আসে... “ছাই চোখ মুখ, ছাই গড়ন”—বলিয়া আরশিটা রাখি দিল। অন্যমনস্ক হইয়া কলমটা লইয়া পোষ্টকার্ড দেপি লিখিতে লাগিল,--“অনেক দিন যাবৎ আপনাদের কোন সংবা ন পাইয়া...ঘাড় নাড়িয়া নাড়িয়া মিলাইতে লাগিল।-- বে: একটু আদল আসে। তবুও অনেক দিন অভ্যাস ছাড়ি গিয়াছে । কি রকম একটা কোকের বশে লিখিতে লাগিল—‘অনেক দিন যাবৎ অনেক দিন যাবৎ—দুইবার চারবার–আটবারদশবারেরটা অনেকটা মেলে। এখনও আছে তফাৎ, তবে বাপের মেয়ের লেখা বলিয়া দিব্য চেনা যায় বটে।