পাতা:প্রবাসী (ত্রয়স্ত্রিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৫৯৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

শ্রাবণ शृचण «es এতটা সত্যই সে আশা করে নাই। কতক্ষণে ভিড় কাটিয় যাইবে কম্পিতবক্ষে - তাহারই প্রতীক্ষা করিতেছে এমন সময় কানাই বলিয়া উঠিলেন, “আপনার বইটা পড়লাম, খুব ভালো হয়েছে। ষ্টেজের সঙ্গে সাক্ষাং সম্বন্ধে পরিচয় নেই এমন মানুষের পক্ষে যে-ধরণের সব ভুল করা স্বাভাবিক, আপনি তাও কোথাও করেননি দেখছি। খুবই আশ্চৰ্য্য বলতে হবে ।” কোনও কিছু লইয়া আশ্চৰ্য্য হওয়া অজয়ের স্বভাব নহে । আশাতীতের সঙ্গে, অভাবিতের সঙ্গে পরিচয় জীবনে আরও বহুবার তাহার হইয়াছে। কানাই বলিলেন, “কিন্তু একটা কথা আপনি ভাবেননি । বইটা মুসলমান-ইতিহাস নিয়ে লেখা। বাংলা দেশে ত এর অভিনয় চলবে না ।” অজয় কিছুক্ষণ স্তব্ধ হইয়া রহিল, কথাটা ধারণা করিতে সময় লাগিতেছে, অবশেষে আমৃত আমৃত করিয়া বলিল, “সে কি, কেন ?” কানাই বলিলেন, “মুসলমানরা চটবে। শেষকালে কি আবার একটা riot বাধাবেন ? আপনি জানেন না দেখছি, কিন্তু গত আঠারো বৎসর বাংলা দেশে মুসলমান-ইতিহাস নিয়ে লেখা কোনো নাটকের অভিনয় হয়নি।...দরকারই বা কি ? হিন্দু ইতিহাস, বৌদ্ধ ইতিহাসে নাটকের প্লটের কি কিছু অভাব আছে ? যত খুসি লিখুন না।” ভাল করিয়া প্রতিবাদ করিতে পারে অজয়ের শরীর-মনে এতটা জোর আর অবশিষ্ট নাই। কহিল, “মুসলমানদের খুলি হওয়ার কথাই ত বইটার সবটাতে।” কানাই কহিলেন, “ত কি জানি মশায় । নামগুলো বদলে বৌদ্ধ করে দিন, আপদের শাস্তি হয়ে যাকৃ। শাহজাহানকে করুন বিম্বিসার, আউরংজীবকে অজাতশত্রু, দেখুন কালকেই রিহাসর্পল ধরিয়ে দিচ্ছি।” অজয় কহিল, “নাম বদলে দেব কি মশায় ? তা কখনো হয় ?...চরিত্রগুলোর চাইতেও মুসলমান-ইতিহাসের ব্যাকগ্রাউওটাই ষে আসলে ঢের বড় জিনিষ বইটাতে।” কানাই কহিল, “তা ত জানি, কিন্তু কি করতে পারি বলুন ?” অজয় কহিল, “আপনি বইটা ভালো করে আর একবার পড়ে দেখুন, আলমগীর চরিত্র আমি যে-রকম করে গড়েছি তাতে মুসলমানদের সত্যিই খুব খুসি হবার কথা। র্তার স্বভাবে এমন কিছু রাখিনি যা সত্যি সত্যি দোষের--” কানাইলাল একটু হাসিয়া কহিলেন, “আপনি তাই ভাবছেন, কিন্তু ভারতে মুসলমান-ধৰ্ম্মের বিস্তৃতির চেষ্টার আসল উদেশ্বট তার ছিল রাজনৈতিক, একথা শুনলে কোনো ধৰ্ম্মপ্রাণ মুসলমান আপনাকে ক্ষমা করবে না।” একটি স্বত্র চেহারার যুবক আয়নার সম্মুখে দাড়াইয়া তোমালে এবং নারিকেল তৈল সহযোগে মুখ হইতে গ্রীজ পেন্টের অবশেষ ঘসিয়া তুলিতেছিল, কহিল, "আলমৃগীরের কথা না-হয় ছেড়েই দাও না কানাই, কিন্তু ঐ যে শাহজাহান, তাকে অজয়বাবু করেছেন পাগলাটে, বুড়ে, ইডিয়ট-সে ব্যক্তিও যে মুসলমান সেটা কেন ভাবছ না ?” একটি স্থূলদেহ ভদ্রলোক, সম্ভবতঃ অজয়েরই মত অভাগত, হাসিয়া কহিলেন, ‘সত্যিই ওদের কথা কিছু বলা যায় না মশায়। কিসে যে চটবে, কিলে চটবে না, নিজেরাও তা জানে কি ন সন্দেহ । সাধ্যমত ওদের না ঘটানোই ভালো ।” পাণ্ডুলিপির খাতা-কয়টি একটা খবরের কাগজে মুড়িয়া লইয়। অজয় উঠিম| পড়িল । কানাইলাল দরজা পৰ্য্যস্ত তাছাকে আগাষ্টয়া দিলেন, কহিলেন, ‘ আশা করি আপনি আমাকে ভুল বুঝবেন না! নিতান্ত নিরুপায় হয়েই বইটা ফেরাতে হ’ল । এমন একখান বই অনেক তপস্ত করেও পাওয়া যায় না, কিন্তু যা লক্ষ্মীছাড়া দেশ ! যদি বৌদ্ধ-ইতিহাস নিয়ে কিছু লেখেন, সকলের আগে তার ওপর আমার झांदेौ द्रशेल ” পথে বাহির হইয়া অজয়ের মনে হইল, বইটা যে ফিরিয়া পাইয়াছে তাহা তত বড় দুর্ঘটনা নহে, কিন্তু আসিবার মুখে কালকের সেই থোড় চাকরট আজও যে সম্মুখের টেবিলে তাহার জন্ত এক পেম্বালা চা আর থাবার রাখিয়া যায় নাই সেই দুঃখ কিছুতে সে ভুলিতে পারিতেছে না। ভাবিল, আজ কানাইয়ের ঘরে বহুজনসমাগম --গে একলা থাকিলে চা আর থাবার আজও হয়ত তাহার জুটিয়াই ঘাইত। এখন আর ফিরিয়া যাওয়া যায় না, বইটা ফিরিয়া পাইবার পর আর বসিয়া থাকাও চলিত না।...বইটা পড়িয়া শেষ