১ম সংখ্য। ] সিন্ধুদেশে নূতন আবিষ্কার Y S > সিন্ধুদেশে নুতন আবিষ্কার । সিন্ধুনদীর গতি-অনুযায়ী সিন্ধুদেশ তিন ভাগে বিভক্ত। যথা—উত্তর সিন্ধুদেশ, মধ্য সিন্ধুদেশ ও দক্ষিণ সিন্ধুদেশ। দক্ষিণ সিন্ধুদেশ জামাদের বাংলা দেশের মত নদীমাতৃক দেশ, কাজেই তাহা আমাদের দেশের মতই জনবহুল, স্বজলা, স্বফল ও শস্যশু্যামলা । অতি প্রাচীনকালে এই দেশের তুর্থ অংশ সমুদ্রগর্তে নিমগ্ন ছিল । ক্রমে ক্রমে এই বিশাল নদীর পলি পড়িয়া এই দেশটির উদ্ভব হইয়াছে। সিন্ধুদেশের মধ্য অংশ দক্ষিণভাগের পূৰ্ব্বে পয়বস্তি হইয়াছিল, সেই কাৰণে এই দেশের মৃত্তিক শক্ত। উত্তর সিন্ধুদেশে নদীটি অত্যন্ত অপ্রশস্ত ও অন্য কোন পয়ঃপ্রণালী নাই। এইকারণে উত্তর সিন্ধুদেশ মরুভূমি-সদৃশ–চারিদিকে বালুকায়াশি ধু ধু করিতেছে, কেবল মাঝে মাঝে দুই-চারিটি বৃক্ষ দৃষ্ট হয়। কেবল নদীর উভয় পার্শ্বে ১৭১৫ মাইল পর্ষ্যস্ত একরূপ ফসল হয়। এই প্রাচীন প্রদেশটির অনেক স্থানে বৌদ্ধযুগের অনেক ঐতিহাসিক তথ্যের নিদর্শন পাওয়া যায়। পূৰ্ব্বে সিন্ধুদেশে প্রত্নতত্ব বিভাগের অনেক কৰ্ম্মচারী দক্ষিণভাগের অনেক প্রাচীন ধ্বংসাবশেষ খনন করিয়া প্রাচীন বৌদ্ধযুগের ঐতিহাসিক তথ্য অবগত হইবার প্রয়াস পাইয়াছেন। কিন্তু কেহই এই জনশূন্ত ও মরুভূমিসদৃশ উত্তর প্রদেশে খননকাৰ্য্যে হস্তক্ষেপ করেন নাই । গত বৎসর শীতকালে সরকারী প্রত্নতত্ত্ব-বিভাগের পশ্চিমপ্রাস্তের পরিদর্শক শ্ৰীযুক্ত রাখালদাস বন্দ্যোপাধ্যায় মহাশয় এই স্বকঠিন কাৰ্য্যে হস্তক্ষেপ করেন। র্তাহার এই প্রথম প্রচেষ্টা যথেষ্ট পরিমাণে সার্থক হইয়াছে। এই চিত্তাকর্ষক ঐতিহাসিক তথ্যসমূহের বিবরণ প্রদান করিবার পূৰ্ব্বে উত্তর সিন্ধুপ্রদেশের ভৌগোলিক ও ঐতিহাসিক বিবরণ প্রদান করা আবশুক । ‘রোহরী আলোর নগর উত্তর সিন্ধুদেশের মধ্যস্থলে অবস্থিত। এইস্থানে অনেকগুলি ছোট ছোট পৰ্ব্বতমালা আছে । এইস্থানে সিন্ধু নদী এই-সকল পৰ্ব্বতমালা ভেদ করিয়া প্রবাহিত হইয়াছে। বাংলা দেশের পদ্মা এবং মেঘনা নদীর ন্যায় সিন্ধু নদী গতিপরিবর্তন করিয়া থাকে। ঐতিহাসিকের নির্দেশ করিয়া থাকেন সিন্ধুনদী এপর্য্যস্ত অস্তত: ১৭ বার গতি পরিবর্তন করিয়াছে। এই গতি পরিবর্তনের নিদর্শন উত্তর ও মধ্য সিন্ধুপ্রদেশে এখনও দেখিতে পাওয়া যায় এবং পূৰ্ব্বে পূৰ্ব্বনারা এবং পশ্চিমে পশ্চিমনার নামী দুইটি ক্ষুদ্র মরা নদী এখনও এই প্রদেশে বর্তমান আছে । এই প্রদেশের অনেকগুলি ধ্বংসাবশেষ প্রদক্ষিণান্তে সৰ্ব্বোচ্চ ধ্বংসাবশেষটিই খনন করা স্থির হয় । ইহা মহেgদড়ো বা মহেঞ্জুমারী নামে পরিচিত। এই স্থানটি নর্থওয়েষ্টাৰ্ণ রেলপথের রুকু কোটরী শাখার দোকুরী ষ্টেশন হইতে ২০ মাইল দূরে অবস্থিত। এই ধ্বংসপ্রাপ্ত স্থানটির আয়তন প্রায় ৭৫০ বিঘা ৷ এই ধ্বংসাবশেষের মধ্যে সর্বোচ্চ একটি প্রাচীন বৌদ্ধ মন্দিরের ধ্বংসাবশেষ । নানপ্রকার চিহ্ন দ্বারা প্রমাণ হইয়াছে যে সিন্ধুনদী খৃষ্টীয় প্রথম অথবা দ্বিতীয় শতাব্দীতে এইস্থান দিয়া প্রবাহিত ছিল । এতদিন সকলেই শুনিয়া আসিতেছিল যে, পূৰ্ব্বনারাই সিন্ধুনদীর সর্বপ্রাচীন গর্ভ। এই ধ্বংসাবশেষ পুনরুদ্ধার করিয়া শ্ৰীযুক্ত বন্দ্যোপাধ্যায় মহাশয় প্রকৃষ্টরূপে প্রমাণ করিয়াছেন যে সে ধারণা ভ্ৰমাত্মক। এই ধ্বংসপ্রাপ্ত স্তুপটির সন্নিকটস্থ ঝাউবন দেখিয়া বোঝা যায় পূৰ্ব্বে এস্থান দিয়া সিন্ধুনদী প্রবাহিত ছিল । তখন এই অংশে নদীর মধ্যে দ্বীপের ন্যায় বড় বড় চড়া ছিল । এইপ্রকার দুইটি চড়ার উপর এই গৌরবমণ্ডিত নগরের • দুইটি প্রধান দেবমন্দির অবস্থিত ছিল । এই বিস্তীর্ণ সহরটির আয়তন ও ংসাবশেষ দেখিয়া বোধ হয় মহেঞ্জদড়ো প্রাচীন সিন্ধু দেশের রাজধানী ছিল। এই সহরটি নদীর পশ্চিমতীরে অবস্থিত ছিল । এখানে একটি স্ববৃহৎ ( প্রায় দেড় মাইল লম্ব ) রাজপথের ও নিদর্শন পাওয়া যায়। দ্বীপের চারিদিকে বাধা ঘাট ও সোপানের চিহ্ন অদ্যাপি বর্তমান । রাজপথের নিকটে যাইবার সোপানও ছিল বলিয়া
পাতা:প্রবাসী (ত্রয়োবিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/১২৪
অবয়ব