পাতা:প্রবাসী (ত্রয়োবিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/৪২৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

8〉b কাজ করেন, তদ্রুপ ব্যবস্থা না থাকিলে তাহ প্রবর্তিত করিবার চেষ্টা করা ও প্রতিনিধিদের কৰ্ত্তব্য । নির্বাচন ও গোবধ স্বরাজ্যদলের মধ্যে হিন্দু ও মুসলমান দুইই আছেন । গোড়া হিন্দুরা গোবধ চান না ; মুসলমানের গোবধে আপত্তি নাই—কাগরও কাহারও বরং জেদ আছে যে গোবধ করিতেই হইবে । এ অবস্থায় স্বরাজ্যদল, দল হিসাবে, গোবধ নিবারণ বা প্ৰবৰ্ত্তন কোন বিষয়েই কিছু বলিতে পারেন না—বিশেষতঃ যখন র্তাহারা ব্যবস্থাপক সভাগুলিকে ভাঙিতে বা অচল কবিতেই সভায় যাইতেছেন, অন্য কিছু কাজ করিতে বা অন্য কোন কাজে বাধা দিতে যাইতেছেন না । কলিকাতার বড়-বাজারের নির্বাচনে কিন্তু একজন পদপ্রার্থীকে গোভক্ষক ও অন্তকে গোরক্ষক বলিয়। প্রচার করিয়া স্বরাজ্য দল জিতিয়াছেন । অবশু জয়ের ইহাই সম্ভবতঃ একমাত্র কারণ নহে। যিনি পরাজিত হইয়াছেন, গবর্ণ মেণ্টের অবিচারিত সমর্থক ও একান্ত খয়েরথা বলিয়া তাহার অধ্যাতি থাকাতেও তিনি লোকের বিরাগভাজন ছিলেন । কিন্তু যে দলের প্রধান প্রধান কোন কোন লোকের সর্ববিধ "নিষিদ্ধ" মাংসভক্ষণ স্বপরিজ্ঞাত, সেই দলের পক্ষে, “গোজাতি বিপন্ন, দোহাই রক্ষা কর,” রব তোলা হাস্যকর । আমরা মৎস্যমাংসাহারী নহি, সুতরাং গোবধেও উৎসাহ নাই, ছাগাদি বধেও উৎসাহ নাই ; বরং গবাদি বধ হ্রাস হওয়াই প্রার্থনীয় মনে করি। কিন্তু গোজাতির এবং অন্ততঃ মানবজাতির শিশুদের কল্যাণের জন্যই ইহাও বলা দরকার মনে করি, যে, গোবক্ষক বলিয়া আত্মশ্লাঘা করিলেই কিম্বা গোরক্ষিণীসভার দলভূক্ত হইলেই গোরুর হিত হয় না। আমাদের এই বাংলাদেশে থাইতে না দেওয়া এবং অন্য নানা প্রকারে যত নিষ্ঠুরত গোরুর উপর করা হয়, সেই প্রকার নিষ্ঠুরতা গোভক্ষকদের দেশে হয় না। এই কারণে, বাংলাদেশে গোবংশের অবনতি হইতেছে, ভাল গোরু লোপ পাইতেছে। আমরা গোবধ করা মন্দ মনে করি। কিন্তু গোড়া প্রবাসী—পৌষ, ১৩৩• [ ২৩শ ভাগ, ২য় খণ্ড হিন্দুরা ভুলিয়া যান, যে, কেবল জবাই করিলেই গোবধ করা হয় না ; অযত্ব করিয়া, প্রহারাদি করিয়া থাইতে না দিয়া গোরুর আয়ু হ্রাস করিলেও গোবধ করা হয়। গোরক্ষা করিবার উৎসাহে দাঙ্গা করিয়া মনুষ্যবধ কেহ কেহ করে ; কিন্তু তাহার দ্বারাই প্রমাণ হয় না, যে, দাঙ্গাকারীরা গোরুর খুব যত্ব করেন এবং গোজাতির আয়ুবৃদ্ধি ও উন্নতি সাধন কবিয়া থাকেন। গোখাদকের দেশ স্বইটুজাল্যাণ্ড, হইতে টিনের কৌটায় ভরা ঘন দুধ আসে, আর হিন্দুবাঙালী-প্রধান সহর কলিকাতায় সাত আনায় এক সেরের কম দামে থাটি গেদুগ্ধ পাওয়া যায় না । শুনিয়াছি, গোখাদক লণ্ডন শহরে গোরক্ষক কলিকাতার বড়-বাজার অপেক্ষা সস্তায় খাটি দুধ পাওয়া যায় । যাহা হউক, স্ববাজ্যদল যখন নিজেকে গোরক্ষক বলিয়া ঘোষণা করিয়াছেন, তখন র্তfহাদের নিকটে এই দাবী কর; অন্যায় হইবে না, যে, তাহার গোবংশের উন্নতির জন্য সৰ্ব্ববিধ চেষ্টা করিবেন । জাতীয় উন্নতির উপকরণ বর্তমানকালে জাতীয় উন্নতির কথা সকলের মুখেই শুনা যাইতেছে এবং অনেকের মনেই এই বিষয়ে নান প্রকার ধারণ আছে । যে-সকল ব্যক্তি জাতীয় উন্নতির কথা লইয়া চিন্তা করেন, তাহাদিগকে মোটামুটি দুই ভাগে বিভক্ত করা যাইতে পারে । ১ । র্যাহারা ভাবেন যে জাতীয় উন্নতি একটি সাধারণ ও স্বাভাবিক অবস্থা এবং বাহিরের বিভ্র না থাকিলেই, স্বভাবের নিয়মের তাড়নায় জাতি উন্নতির পথে ক্রমশ: আগুয়ান হইবে । ২ । র্যাহারা ভাবেন, যে, জাতীয় উন্নতি জাতির কৰ্ম্মশক্তি ও চিন্তাশীলতার প্রকাশ মাত্র, অর্থাৎ শুধু বাহিরের অন্তরায় দূর হইলেই উন্নতি আপন হইতে আইসে না, উন্নতি গড়িয়া তুলিতে হয় । এই দুই শ্রেণীর লোক ব্যতীতও অনেকে আছেন যাহারা উভয় উপায়ই প্রয়োজনীয় মনে করেন ; অর্থাৎ ইহাদিগের মতে বাহিরের বিঘ্ন দূর হইলে তবেই জাতীয় কৰ্ম্মকুশলতা ও চিন্তাশীলতা সবাবঙ্গত হইতে ৭ পর্ণত।