পাতা:প্রবাসী (ত্রয়োবিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/৬২১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

৫ম সংখ্যা ) চীৎকার করিতে লাগিল । আমার গালের উপর তাহীর নিঃশ্বাস অনুভব করিতে লাগিলাম—সেই নিঃশ্বাস হইতে সৰ্পস্কলভ একপ্রকার মৃগনাভি-ধরণের গন্ধ বাহির হইতেছিল । গানের কোন কোন অংশ গান নহুে—দ্রুত বাকুনীর সহিত একপ্রকার ইক্-ডাক । এই সময়ে খুব তাড়াতাড়ি তাহীর দীতে র্দীতে ঠেকাঠেকি হইতে লাগিল—মনে হইল যেন লোকটী কঁাপিতেছে । এই সময়ে তাহার মুখের ভাবটা অতি ভীষণ হইয় উঠে। দেখিতে স্বত্র হইলেও, তখন তাহাকে একট, বড় বানর বলিয়া মনে হয়। আমার চির-অভ্যাস অনুসারে ছোট নদীতে প্রবেশ না করিয়া, —সাগর-বেলাভূমিতে, তরঙ্গভঙ্গের মধ্যে, ধীবরদিগের যে গ্রামটি অবস্থিত, সেই গ্রামের সম্মুখে গিয়া ধীবরদের সহিত দেখা করিব। কিন্তু না, আজ দেখা করা হইবে না—বোটিয়া-দাড়ের খুব সজোর আঘাতে আমরা বেশ দ্রুত চলিয়াছি- নীল তরঙ্গের উপর দুলিতে দুলিতে চলিয়াছি। আমাদের মাথার উপর স্বৰ্য্য জ্বলন্ত কিরণ বর্ষণ করিতেছে --- তরঙ্গভঙ্গ, বেলাভূমি! ভারতবাসীরা আবার খুব হাক ডাক দিয়া সকলেই জলের ভিতর নামিয়া পড়িল ; তাহীদের ডোঙ্গাটা ডাঙ্গার উপর আছড়াইয়া ফেলিল ; সিড়ির গরীদের মতো উহার বাহু বাড়াইয়া দিল, তরঙ্গফেনোচ্ছ,াসের মধ্যে আমি লাফাইরা পড়িলাম। সন্ধ্যা সাড়ে পাচটা —স্বৰ্য্য এরই মধ্যে সমুদ্রের উপর ঢলিয়। পড়িয়াছে—নীচু হইতে তালতকৃপুঞ্জদিগকে রশ্মিচ্ছটায় উদ্বভাসিত করিয়াছে। উহাদের দীর্ঘ ধূসর বুন্তগুলার উপর যেন জ্বলন্ত আগুনের প্রতিবিম্ব পড়িয়াছে । আলোকটা বরাবরই সোনালি রঙের হইয় থাকে, কিন্তু এই সময়ে উহার রং রক্ত-রঞ্জিত সোনালি হইয়াছে ; প্রভাতকালের ও দিনমানের সোনালি রং অপেক্ষ এবং আরও চমৎকার। আমাকে দেখিবার জন্ত বনভূমির নিম্নদেশ হইতে তিনজন লোক বাহির হইয়। আমার দিকে অগ্রসর হইল। শুভ্ৰশ্মশ্রীধারী দুইজৰ বৃদ্ধ, বেশ মহৎভাববিশিষ্ট মুখই, আমাদের চাচের সেন্ট দিগের মতো পরিচ্ছদ ; আর একটি তরুণী, আবক্ষ-কণ্ঠ অনাবৃত --অপুৰ্ব্ব স্বন্দরী-– মাথার উপর একটা ফলের টুক্‌রী আছে। এই চমৎকার নাট্যদৃষ্ঠের ভিতর হইতে, এই স্বর্গোজল কিরণচ্ছটার মধ্যে, যখন তাহাদিগকে আসিতে দেখিলাম, তখন খুব সুদুর প্রাগৈতিহাসিক অতীত কালের কোন পৃষ্ঠ দেখিতেছি বলিয়৷ মনে হইল। এইরূপেই পুৰ্ব্বকালে জগতের আদিমযুগের মুৰ্ত্তি আমার কল্পনার চক্ষে প্রতিভাত হইত ; উহ! কি স্বন্দর ও প্রশাস্ত – সেই সময়ে জীব ও পদার্থসমূহের একটা অপূৰ্ব্ব দীপ্তি প্রকাশ পাইত— যাহা এক্ষণে আর আমরা দেখিতে পাই না। গোধূলি সময়ে, ছায়াময় বীথি-পথে, বিনা-উদেখে ঘুরিয়া বেড়াইলাম। এইসব রাস্ত গবৰ্ণমেণ্ট-হাউস পৰ্য্যস্ত গিয়াছে। এই রবিবারের সায়াহে, এবং এই প্রায়-যুরোপীয় অঞ্চলে, রবিবারের পোষাক পরিয়া লোকের বেড়াইতেছে-হিন্দুদিগের ফরাসী পরিচ্ছদ, পুরুষেরা লম্বা-কোর্তা পরিয়াছে, রমণীরা পালক ও পুষ্পভূষিত টুপি পরিয়াছে। ইহা মনে করাইয়া দেয়-ফুন্সের সমস্ত ছোট-ছোট নগরে, সায়ংকালীন "ভেস্পার"-উপাসনার পর স্বেচ্ছা-ভ্রমণ । এভারি আশ্চৰ্য্য,—সময়-বিশেষে, সকল দেশের মধ্যেই একটা সাদৃষ্ঠ দেখা যায়। যেহেতু, সৰ্ব্বত্রই ব্যাপারগুলা একই-রকমের, যেহেতু, মানবজাতি এক, ও পৃথিবী ক্ষুদ্র । যাহারা আপন-জাপন কুটার হইতে বাহির হইয়া, মাছির মত আমার সঙ্গে লাগিয়া আছে সেইসব বালকদের মধ্য হইতে দুইজনকে বাছিয়া লইয়া, উহাদের সনিৰ্ব্বন্ধ প্রার্থন অনুসারে, অামার “মাছে”-নগর • GO වී .حییحی .Aحمیہ تبیی هستیم. حتیم. পথপ্রদর্শকরূপে উহাদিগকে আমার কাছে-কাছে রাখিতে স্বীকৃত হইলাম। উহার দুই ভাই-বয়স ১২ বৎসর ; উহারা ফরাসী ভাষায় বলিল 2—“দেখুন মহাশয়, আমরা অনাথ, অত্যস্ত গরীব ; আপনার যাহা ইচ্ছা আমাদের কিছু ভিক্ষা দিবেন, আমরা তাতেই সন্তুষ্ট হব।” ফরাসী বলে নিতান্ত মন্দ নয় ; তবে কিনা, একটা অদ্ভূতরকমের ঝোক দিয়া, টানিয়া-টনিয়া উচ্চারণ করে। উহার বেশ ভদ্র, এবং মনে হয়, বাস্তবিকই খুব দরিদ্র । পরিধানে শুধু ছোড়া কুটিকুটি থাটো ধুতি ।--এই স্থির হইল, উহারা আমার ভ্রমণ-পথে আমার সঙ্গে সঙ্গে চলিবে,—একজন আমার বাম পার্শ্বে, আর-একজন দক্ষিণ পার্শ্বে-আমার প্রস্থানকাল পর্য্যন্ত । এইসব বড় বড় ডাল গাছের তলায়, রাত্রি প্রায়ই দ্রুত আসিয়া পড়ে। এই একমাত্র রাস্তায়, এবং যে-সব পথ গবর্ণমেণ্ট হাউসের কাছাকাছি গিয়াছে--সেই রাস্তায়ও এইসব পথে, কাঠদও-প্রান্তে কতকগুলা পেটেtল-তৈলের লণ্ঠন জ্বালান হইল। ইহাতে করিয়া ক্ষুদ্র ফরাসী নগরের এই অলীক সাদৃষ্ঠটা মাহে-নগরে যেন একটা পূর্ণতা লাভ করিল--কেবল হরিৎস্যামল শোভাসম্পদটা বিদেশী রহিয়া গেল । একরকমের বীথি আছে—খুব বড় ; এখানে আলো জ্বালাম হয় না, এখনো দিনের অালো আছে-কেননা এই জায়গাটা অন্তত ১•• গজেরও বেশী চওড়া ; যেন তালীবনের মধ্যে, ঋজুতাৰে কাটির বাহির-করা একটা ফাক জমি। এই রাস্তাটা ইংরেজ-অধিকৃত জমি পৰ্য্যন্ত গিয়াছে। এই বৃহৎ রাস্তার ঠিক মাঝখানে, পথ চলতি লোৰদের জন্ত আলের মতো একটা খুব সরু পথ । ( দুই ধারের বাকি অংশে জলপূর্ণ প্লাবিত ধানের ক্ষেত। )—এবং আঙ্গ সায়াহে এইখানে এই অীলের পথে, মাহের লোকেরা খোলা-হাওয়ায় বেড়াইতেছে । ইহার তালীবনের নীচে অষ্টপ্রহর বাস করে ; এইখানেই আসিয়া নিশ্চয়ই একটু তাজ হইয়া উঠে। এই গোধূলি সময়ে, এইসব ধানের ক্ষেপ্ত ফসলের পুর্বে আমাদের ফ্রান্সের ক্ষেতগুলা যেরূপ দেখিতে হয় কতকটা সেইরূপ দেখিতে। এই পদচারীদিগের মধ্যে অনেকেরই যুরোপীয় পরিচ্ছদ ; তাই এইসমস্ত মিলিয়া পল্লীগ্রামের রবিবারের ভাবট মনে অtনিয়া দেয় । উৎপন্ন শস্তের মধ্যে আমাদের ফরাসী গ্রামসমূহে জুনমাসের সায়াহে যেরূপ লোকের অলসভাবে পদচারণ করে, সেইরূপ পদচারণের কথা স্মরণ করাইয়া দেয়। এই দেখ, স্কুলের “ভগিনী" নামধেয় “ননেরাও” চলিয়াছে—উহাদের পিছনে, ভারতীয় ছোট ছোট মেয়ে—দুইজন-দুইজন করিয়া সারি বাধিয়া কায়দাছুরস্তভাবে চলিয়াছে । আমি খুব কাছাকাছি উহাদের ভিতর দিয়া গেলাম-কেননা পাশে সরিষার পথ নাই। উহাদের ক্ষুত্র বক্ষদেশ ইহারই মধ্যে একটু গড়িয়া উঠিয়াছে ; ক্ষুদ্র শরীরের সমস্ত গঠনভঙ্গীও নিখুত সুন্দর। একে-একে সকলেই আমার দিকে চোখ তুলিয়া চাহিল –স্বন্দর চোখ কালো অতলম্পর্শের মতো স্বগতীয়। ঐ চোথ গুলি আমাকে যেন এই কথা বলিতে লাগিল : হাস্ব বলেই আমরা বিজ্ঞ হয়েছি, লিনেন কাপড়ের টুপি মাথায় পরেছি ; হাস্ব বলেই কেননা ও ত বেশীদিন টিকবে না ; আমাদের শরীরে নাচওয়ালী ও অপরার রক্ত চলছে ; অল্প সময়ের মধ্যেই একটু বড় হ'য়ে উঠলেই আমরা "উড়ন্ত” ভাব ধারণ করব। উহার বেশ স্বশৃঙ্খলভাবে নিঃশব্দে চলিয় গেল। দূর হইতে উহাদিগকেও অtধীর ননের মতে দেখতে হইল। এই বেচারী “ভগিনীরা” একটা ছোটখাটে। রকমের শোভা যাত্র করিয়া চলিয়াছে --দেখিতে ভারি মজার । কিন্তু কিছুকাল পরে এই মেয়েদের লইয়। উহাদিগকে একটু ভুগিতে হইবে। 够