পাতা:প্রবাসী (ত্রয়োবিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৩৭৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

৩য় সংখ্যা ] দিকে অনেকগুলি ঝরণা দেখিলাম। আমাদের পথপ্রদর্শক নানা যুক্তি-তর্কের দ্বারা প্রমাণ করিতে চাহিলেন যে উক্ত ঝরণাগুলি মানস-সরোবরের সহিত যুক্ত আছে। ইহা ঠিক ধারণা নয়। সতলজ-নদী এই-সকল ঝরণা হইতেই উৎপন্ন হইয়াছে বলিয়া বোধ হয়। কিন্তু যদি ইহা সত্য হয় যে এই-সকল ঝরণার সহিত রাক্ষসতালের যোগ আছে, এবং পুৰ্ব্বকথিত নালাটি ও মাটির নীচ দিয়া মানস-সরোবর ও রাক্ষস-ভালের সঙ্গিত যুক্ত ( শ্বেন হেডিনের মতাস্থায়ী), তাহ হইলে পূৰ্ব্ব-দক্ষিণ কোণ হইতে যে-সকল নদী প্রবাহিত হইয়া মানসসরোবরে পতিত হইয়াছে তাহদের মধ্যে কোন একটি হইতে সতলজ উৎপত্তি লাভ করিয়াছে। এই স্থানটির একটি তিব্বতী চিত্র আমি সংগ্ৰহ করিয়া আনিয়াছি। যদিও চিত্ৰখানি নিভুল নহে তবুও তাহাতে এই জলপূর্ণ নালাটি বেশ দেখা যায়। ২৮শে জুলাই আমরা বরখা-প্রান্তরে তাবু খাটাইলাম। এই প্রাস্তরে মাত্র দুই ঘর লোকের বাস আছে। এখানে একজন তিব্বতী রাজকৰ্ম্মচারী থাকেন। তিনি অনুপস্থিত ছিলেন, কিন্তু র্তাহার সহকারী আমাদের যথেষ্ট সমাদর করিলেন । বরপ-প্রান্তরে বহু চমরী বিচরণ করিতেছে দেখিলাম ; স্থানে স্থানে তিব্ব তীদের তাপ ও দৃষ্টিগোচব হইল । এখানে আমরা একজন বাঙ্গালী সাধুর সাক্ষাৎলাভ করিলাম। বরফের উপর দিয়া ক্রমাগত চলিয়া তাহার পায়ের কয়েকটি অঙ্গুলি বিনষ্ট হইয়াছে। তাহাকে নিতান্তই বিপন্ন অবস্থায় দেপিয়া আমরা যথাশক্তি সাহায্য করিলাম। পুনরায় থোলিঙ্গ মঠের নিকট এই সাধুটির সহিত দেখা হয়। তিনি একজন অসাধারণ ব্যক্তি । হিন্দী ও সংস্কৃত ভাষায় তাহার ব্যুৎপত্তিও কম নহে। ভারতবর্ষের সমস্ত প্রদেশেই তিনি ভ্রমণ করিয়াছেন— ব্ৰহ্মদেশ, লঙ্কাদ্বীপ ও নেপাল দেখিতেও বাকী রাখেন নাই । লাসাতে তিনি কিছুদিন বাস করিয়াছেন। তিনি পাচবার কৈলাস-পৰ্ব্বত দর্শন করিয়াছেন। র্তাহার ধৈর্য্য ও শক্তি অসীম ; ক্ষুধা, তৃষ্ণা বা শীত তাহাকে বিচলিত করিতে পারে না। এবৎসর তিনি খালি পায়ে তীর্থদর্শন পশ্চিম তিব্বতে ○Q> উঠান, জ্ঞানিমার একটি তিব্বতী বালিকা করিবেন বলিয়। পণ করিয়াছেন ও র্তাহার প্রতিজ্ঞ অতুযায়ী কায্য করিতে সক্ষম ও হইয়াছেন । এই শাস্ত সৌম্য ও স্বাধীন চেত। সন্ন্যাসীটিকে দেখিয়ু সত্য সত্যই ভক্তি কবিতে ইচ্ছ। ৎসু । পেলিঙ্গ হুইস্থে বদরীনাথ পৰ্য্যন্ত তিনি আমাদের সঙ্গে ভ্ৰমণ করিয়াছিলেন। র্তাহার সহিত ভ্রমণ করিয়া আমরা খুব আনন্দ পাইয়াছিলাম। বারগ হইতে তুষারকিরাটা কৈলাস-পৰ্ব্বত ভালরূপে দেখা গেল। এখান হইতে কৈলাসের ছবি না লইয়া অত্যন্ত ভুল করিয়াছিলাম। কারণ যতই পৰ্ব্বতটির নিকটে অগ্রসর হইতে লাগিলাম ততই ওরূপ মুন্দরভাবে আর দেখিবার সুযোগ পাইলাম না । বোধ হয় কৈলাসপতি আমাদের উপর ক্রুদ্ধ হইয়া আর ভালভাবে আমাদিগকে দর্শন দিলেন না । যে কয় দিন এখানে ছিলাম প্রত্যহই আকাশে মেঘ-সঞ্চার হওয়ায় আর ভাল ছবি লইতে পারি নাই । বারুখ হইতে মাত্ৰ পাচ মাইল পথ সে দিন যাইতে পারিলাম। পথে অবিশ্রান্ত বৃষ্টি হইতেছিল, বেশীদূর