পাতা:প্রবাসী (ত্রয়োবিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৮৩০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

৬ষ্ঠ সংখ্যা ] বেনো-জল Գե-Փ বেনো-জল ww. 纖 সমূদ্র ! সমুদ্রের সঙ্গে প্রথম পরিচয়, সে কি বিচিত্ৰ ! স্বমিত্রার মনে হোলো, এ যেন এক বিরাট বিস্ময় তার চোখের সামনে মূৰ্ত্তিমান হয়ে বিশ্ব জুড়ে থৈ থৈ কুবুছে! সে যেন হষ্টিকে গ্রাস করতে চায়, পৃথিবীকে ডুবিয়ে দিতে চায়! তার এ মূৰ্ত্তিও যেমন কল্পনাতীত, তার এ ধ্বনিও তেমনি ধারণাতীত,—সব দিক্ দিয়েই সে অপূৰ্ব্ব, তুলনারহিত ! সুমিত্ৰাও আজ সমুদ্রকে দেখে খানিকক্ষণের জন্যে তার বাচালত ভুলে গেল। •অবাক আর তন্ময় হয়ে নিম্পলক নেত্রে সেই সীমাহীন কৃষ্ণাভ-নীল জলরাশির দিকে তাকিয়ে দাড়িয়ে রইল। এ যেন একটা নূতন জল-জগৎ,—স্থষ্টির প্রথম দিনের কথা মনে করিয়ে দেবার জন্তে, স্বপ্নের মত আচম্বিতে জেগে উঠল ! r রতন স্থধোলে, “সমূদ্রকে কেমন লাগচে, সুমিত্র দেবী ? বিহ্বল স্বরে স্বমিত্র বললে, “জামি না! আমার মনে আনন্দ হচ্চে আবার ভয়ও হচ্চে !” সন্ধ্যার আকাশ যতক্ষণ - ন তিমিরের প্রলেপে চারিদিক ঢেকে দিলে, সুমিত্রা সে-দিন অভিভূতের মত ততক্ষণ সেখানে বসে রইল। বাড়ীতে ফিরে এসেও অনেক রাত পৰ্য্যন্ত তার কানের কাছে একটা অশ্রাস্ত, অপূৰ্ব্ব-গম্ভীর ধ্বনি বাজ তে লাগ ল—যেন জলধির বিপুল আলিঙ্গনে আবদ্ধ পৃথিবীর অব্যক্ত আৰ্ত্ত ভাষা ! - সকালে বিনয়-বাৰু বাড়ীর সকলকে নিয়ে সমুদ্রের তীরে বেড়াতে বেরুলেন। বিনয়-বাবু ও সেন-গিল্পী আগে আগে, তারপরে সন্তোষ, কুমার-বাহাদুর ও স্থনীতি এবং সর্বশেষে রতন ও স্থমিত্র। খানিক পরেই আনন্দবাবু ও পূর্ণিমার সঙ্গে দেখা,— তারাও বেড়াতে বেরিয়েছিলেন। আনন্দবাবু, বিনয় • রতন বললে, "চলুন।” বাবুর দিকে এগিয়ে গিয়ে হাসতে হাসতে বললেন, “ওহে, আজ সকালে রোগীও নেই দক্ষিণাও নেই!” বিনয়-বাবু বললেন, “কিন্তু সমুজের সাদর সম্ভাষণ আছে !” পূর্ণিমা এসে প্রথমে স্থনীতি তারপর স্থমিত্রার সঙ্গে কথা কইলে । সুনীতি তার সঙ্গে কুমার-বাহাদুরের পরিচয় করিয়ে দিলে। তারপর রতনের কাছে গিয়ে অমুযোগের স্বরে পূর্ণিমা বললে, “আজ সকালে আমাদের ওখানে যাবেন ব’লেও গেলেন না যে ?” রতন বললে, “সকাল তো এখনো উত্তীর্ণ হয়ে যায়-নি, পূর্ণিমা দেবী ! বেড়িয়ে ফিরে যেভুম।” কুমার-বাহাদুর চুপিচুপি সন্তোষের কানে কানে বললেন, “মিঃ ঘোষের মেয়ে যে এত সুন্দরী, তা জানতুম না !’ o সন্তোষ বললে, “খালি স্বন্দরী নয়, মিঃ ঘোষের সমস্ত টাকা ঐ পূর্ণিমাই পাবে ।” প্রলুব্ধ দৃষ্টিতে পূর্ণিমার দিকে আর-একবার চেয়ে দেখে কুমার-বাহাদুর বললেন, “পূর্ণিমার সঙ্গে তোমাদের রভনের খুব ঘনিষ্ঠত আছে দেখচি। ও-লোকুটাকে তোমার বাবা কেন যে আমাদের সঙ্গে টেনে আনেন, তা জানি না! ও কি আমাদের সঙ্গে মিশবার উপযুক্ত?” সন্তোষ বললে, “ঐ তো বাবার দুৰ্ব্বলতা ! যাকে পছন্দ হবে, তাকে একেবারে মাথায় তুলবেন!” সকলে ক্রমে স্বৰ্গদ্বারের কাছে এসে পড়লেন। । সেখানে খুব জনতা । তীর্থযাত্রীরা দলে দলে সমুল্লুের ' জলে গিয়ে নামূছে এবং প্রবল তরঙ্গের ধাক্কায় বার বার ওলট-পালট খেয়ে পড়ছে। পূর্ণিমা বললে, “রতনবাবু, এখানে ভারি ভিড় ! কলকাতা থেকে এসে এখনি আবার জনতার ভিতরে গিয়ে পড়তে ভালো লাগচে না—চলুন, ষে-দিকে লোক জন নেই সেইদিকে বেড়িয়ে আসি !” >