পাতা:প্রবাসী (ত্রিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/২৩৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

২য় সংখ্যা ] বিদেশী গবেষক হইতেন, তাহ হইলেও বোধ হয় উtহার নিৰ্ম্মম যুক্তিমত্ত। এতদূর অগ্রসর হইত না । লেখক কলিকাতার মত শহরে কুলি ও দোকানদারদের সংস্পর্শে যে ধরণের যে হিন্দী বুলির আক্রমণ আশঙ্কা করিয়াছেন, মাত্রাঙ্গ অঞ্চলে সে ধরণের ইংরেজী বুলির প্রচলন বোধ হয় আরও বেশি ; কিন্তু সেজন্য তামিল বা তেলেগুর জাতি যাইবার আশঙ্কা হইয়াছে কি ? জানি না, যদি হইয় থাকে তবে সে ভাষার জন্য দুঃখ হয় বটে কিন্তু পরিতাপের কারণ নাই । হিন্দী ও বাংলা এবং ইংরেজী ও তামিলের সম্বন্ধ একরূপ নয় জানি, কিন্তু প্রভাবের ধরণ উভয়ত্র একই—এইজন্য এ দৃষ্টান্ত দিলাম। আমার মনে হয়, পূর্ববঙ্গের কোনও কোনও প্রাদেশিক ভাষায় গ্রাম্য হিনীর যে উৎকট প্রভাব দেথা যায়, লেখক তাহাই স্মরণ করিয়াছেন। কিন্তু তাহাতে বাংলা ভাষার জাতিচু্যতি ঘটে নাই এবং ঘটবেও না ; তাহাতে কেবল ইহাই প্রমাণ হয় যে, ঐ সকল অঞ্চলের বাঙ্গালীর মূল বাঙ্গালী সভ্যতা বা কালচার হইতে ভ্ৰষ্ট হইয়া আছেন, তাহারই কলে ভাষার এই মলিনতা ঘটিয়াছে। কুন্ত", ‘বঙ্কুরী-এমন কি ‘বিজয়াদশমী’র পরিবর্তে দশের প্রভৃতি যে অগণ্য অ-বাঙ্গালী বুলির প্রচলন সেখানে দেখা যায়, তাহাতে কেবল ইহাই মনে হয় যে, এ সকল অঞ্চলে শুদ্ধি"র প্রয়োজন আছে । কিন্তু ভারতীয় রাষ্ট্রভাষার প্রভাবে যে কোনও প্রাদেশিক ভাষীর পূর্ণ প্রধারে বাধা ঘটবার যে সম্ভাবনা আছে তাহ আমারও মনে হয় ; এবং ইহাও মনে হয়, যদি সেইরূপ কোনও একটা রাষ্ট্রভাষার সত্যই উদ্ভব হয় তবে বাংলা সে স্থান অধিকার করিবে না। কিন্তু এ বিষয়েও যথেষ্ট সন্দেহ আছে--ভারতের ভাগ্যবিধান্ত রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থার যে কি বিধান করিবেন সে সম্বন্ধে কল্পনাকে ধান্ত করিয়! তুলিয়। লাভ কি ? র্যাহারা ধীর চিন্তাশীল ব্যক্তি র্তাহীদের মধ্যেও অনেকে যত্নমান আন্দোলনের বাহা আকারের অন্তরালে সারা ভারতের একাত্ম-সাধন অপেক্ষ একটা উগ্র প্রাদেশিক স্বাতন্ত্র্যলাভের চেষ্টা লক্ষ্য করিতেছেন : পরিণামে কি ঘটবে, ভারতীয় রাষ্ট্র ব্যবস্থায় জাতীয়তার কোন মূৰ্ত্তি দেখা দিবে সে সম্বন্ধে এখন নিশ্চিত কিছু বলা যায় না। পূৰ্ব্বকালে রাষ্ট্রীয় ঐক্যবোধের অভাবে, হিন্দু সংস্কৃতিমূলক যে বন্ধনপুত্রে একটা মহাভারতের প্রতিষ্ঠা হইয়াছিল, আজিকার এই রাষ্ট্রীয় স্বাধিকার আকাঙ্ক্ষার ফলে সেই আত্মীয়তা কি ভাবে কতটুকু বজায় থাকিবে, সে বিষয়ে ভাবনার কারণ আছে। অতএব এখনই রাষ্ট্রভাষার জন্য চিস্তিত হইবার প্রয়োজন নাই। তথাপি যদি সেরূপ কোনও রাষ্ট্র-ভাষার প্রাধান্ত ভবিয়াতে স্বীকার করিতে হয়, তাহা হইলেও কতক পরিমাণ আত্মসঙ্কোচের ফলে যাংল ভাষা যে পতিত হইয়। থাকিবে, বাঙ্গালীর প্রাণের ভাষারূপে তাহার সাহিত্যিক সমৃদ্ধি অথবা ঘরোয় প্রয়োজনের পক্ষে তাহার উপযোগিতা হ্রাস হইবে, এমন আশঙ্কার কারণ দেখি না । জগতের অপর কোনও বৃহত্তর পরবী ভাষার পাশে আসন ন পাইলেও একটা জাতিবিশেষের ভবিক্ষিপে তাহার মূল্য নির্ভর করিবে এই জাতির নিজস্ব প্রতিভা ও প্ৰাণ-মনের উৎকর্ষের উপর। বাঙ্গালী সেই নিজস্ব প্রতিভার পরিচয় ইতিপূর্বে নানাক্ষেত্রে দিয়াছে-একটা জাতিগত বৈশিষ্টের সম্যক ৎিকাশ বাঙ্গালীকে ভারতীয় অপর সকল জাতি হইতে স্বাতন্ত্রা দান করিয়াছে। এ সম্বন্ধে ঐতিহাসিক প্রমাণও যথেষ্ট আছে ; বাঙ্গালী আত্মবিস্মৃত জাতি, তথাপি আজিকার দিনে তাহার বংশ ও কীৰ্ত্তি পরিচয় নিতান্ত দুল্লভ নয়। বাঙ্গালী জাতির ইতিহাস এখনও থিত হয় নাই, কিন্তু যে পরিমাণ নালনল ইতিমধ্যে সংগৃহীত হইয়াছে, তাহ হইতে অস্তুতঃ বাঙ্গালী জাতির বৈশিষ্ট সম্বন্ধে নিঃসন্দেহ হওয়া যায়। কয়েক বৎসর পূৰ্ব্বে বঙ্গবাণী পত্রিকায় আলোচনা—‘বাংলা ভাষার ভবিষ্যৎ AiAAA AAAA AAAAMMAeeMMM MAA AMAMAMMMeAAA SAAAAAS AAAAAS ૨8૭) vপাচকড়ি বন্দ্যোপাধ্যায়ের যে প্রবন্ধগুলি প্রকাশিত হইয়াচিল— অন্ততঃ সেইগুলিই আমি সকল বাঙ্গালীকে পড়িয়া দেখিয়ে বলি । লেখক-মহাশয় উত্তর-ভারতের যে কালচার ও হিন্দী ভাষার প্রভাবকে বাঙ্গালীর জন্মগভ সংস্কার বলিয়াছেন, বাঙ্গালী যে তাছার ণিক;ঃ মাথা মুড়াইয়। এ যাবৎ প্রতিষ্ঠালাভ করিয়াছে, তাহা সম্পূর্ণ সত্য মহে । বাংলার আর্য-সংস্কৃতিও বিশেষভাবে বাঙ্গালিয়ানায় রঞ্জিx. হাজার বৎসর যরিয়া বাঙ্গালী এই সংস্কৃতিকে আপনার মত করিয়া আত্মসাৎ করিয়াছে। বাঙ্গালীর ধৰ্ম্ম-সাধন, পূজা-পাৰ্ব্বণ, স্মৃতিসংহিতা, আহার-বিহার, আচার-ব্যবহার, বেশ-ভূষা---পৰ্ব্বত্র যে স্বাস্থ্য ফুটিয় উঠিয়াছে, ততথানি স্বাতন্ত্রা আর কুত্রাপি দেখা যায় না। ইহার মূলে কতটা বেদবিরোধী বৌদ্ধ-তাত্মিক মনোস্তাব শেষ পর্যন্ত জয়ী হুইয়াছে, সে সম্বন্ধে পণ্ডিতগণ সাক্ষ্য দিবেন। এ কথা ছাড়িয়। দিলেও, আর একটা কথা কি কেহ অস্বীকার করেন ?--কেবল ধৰ্ম্ম ও আধ্যাত্মিকতার শাসনে এককালে কতকটা উপকার হইলেও সেই শাসনে কোনও জাতির বৈশিষ্ট কখনও লোপ পায় ? যুরোপে Holy Roman Empire fr fs fritts ? ana col HistAfriধ্বংসকারী ইসলাম—এই ইস্লামও কি মিসরে, পারস্তে, ভারতে ও চীনে সকল বৈশিষ্ট্যের একাকার সাধন করিতে সত্যই সক্ষম হইয়াছে ? বাঙ্গালী যে উত্তরাপথের শাসন সম্পূর্ণ মানিয়া লয় নাই, তাছার আর এক প্রমাণ—বাংলার বাহিরে কোথাও বাঙ্গালী ব্রাহ্মণ আৰ্য্যত্বের সন্মান লাভ করে নাই ; বাঙ্গালী হিন্দুয়ানীর প্রতি পশ্চিমাঞ্চলের যোগী সন্ন্যাসীদেরও সঘুণ কটাক্ষ সকলেরই সুবিদিত। আমরা উত্তর-ভারতের সংস্কৃতি বা হিন্দী ভাষার সঙ্গে বাঙ্গালীর ভাষা বা কালচারের দাসত্ব সম্বন্ধ স্বীকার করিবার কোনও কারণ দেখি না। লেখক-মহাশয়ের আশঙ্কার প্রধান দিকটার আলোচনা করিলাম। তিনি যে অপরদিক, অর্থাৎ বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের মজ্জাগত দৈন্তের উল্লেখ করিয়াছেন, সে সম্বন্ধে সংক্ষেপে কিছু বলিব । যিনি কোনও ভাষা বা সাহিত্যের কোষ্ঠীবিচারে প্রবৃত্ত হইয়াছেন, তিনি যদি সেই ভাষার অতীতের সহিত তুলনায় বৰ্ত্তমানের ঐ-সম্পদ দৃষ্ট তাহার গতিপরিণতির ধাপ্পা লক্ষ্য না করেন, কেবলমাত্র কোনও সৌভাগ্য ও সমৃদ্ধিশালী পরভাষায় দিকে চাহিয়া নিজ ভাষা সম্বন্ধে অশ্রদ্ধা ও হতাশা পোষণ করেন, তবে দীন-হীন আমরা সে অপবাদ নীরবে সঙ্গা করিব,--না করিয়া উপায় নাই ; কিন্তু তাই বলিয়া এ ভাষা ও সাহিত্যের সম্বন্ধে তাহার ভবিষ্যৎ-বাণী গ্রাহ্য করিব না । কারণ, বাংলা ভাষার দৈন্য তাছার মজ্জাগত নয় ; এবং বাংলা সাহিতোর যে বিশীর্গত এখনও ঘুচে নাই তপস্থার কারণও কোনও ংশানুক্রমিক ব্যাধি নয়। ভাষা ও সাহিত্য অস্তোন্তসাপেক্ষ হইলেও এ দুইএর শক্তি-মূল স্বতন্ত্র । কোনও ভাষা অতি সমৃদ্ধ হইলেও ( যেমন সংস্কৃত ভাষা ) তাহাতে যেমন অন্য কারণে সাহিত্য-স্বষ্টি বাধা পাইতে পারে, তেমনি ভাষা এককালে অপরিপুষ্ট থাকিলেও জাতির জীবনোল্লাসের ফলে সেই ভাষাতেই সাহিত্যের বান ডাকিয় থাকে। বাংলা ভাষা গত শতাব্দী হইতে যে শক্তির পরিচয় দিয়াছে তাহাতেই তাহার potential সামর্থ্য সম্বন্ধে সন্দেহ করিষার কোনও কারণ আর নাই। যদি প্রতিকুল অবস্থার বশে জাতির প্রাণ-মনের শক্তি কোনও কালে ক্ষীণ হইয় পড়ে, এবং তজ্জন্ত সাহিত্য-সৃষ্টিল ধারা বাধাগ্রস্ত হয়, বা নানা কারণে ভাষাকে জীবনের সকল ক্ষেত্রে প্রসারিত করিবার সুযোগ না ঘটে, তবে সেটা ভাষায় অপরাধ নয় । বাহ! এখনও সম্ভব হয় নাই তাহ যে কখনো সম্ভব হইবে না, এব. তাহার প্রধান কারণ যে ভাষারই মঞ্জীগত অশক্তি---বাংলা ভাষা সম্বন্ধে সে অভিযোগ করিবার সময় এখনও আসে নাই। বর" এই