পাতা:প্রবাসী (ত্রিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/২৫২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

২য় সংখ্যা ] তখনও পরিপূর্ণ। রমণীর জল না লইয়াই শোকাকুলচিত্তে গৃহে ফিরিয়া আসিল । টলিডোবাসিগণ ক্রোধে ক্ষিপ্তপ্রায় হইয়া উঠিল ; কারণ এই সেতুটিই সিগারেল প্রাস্তরে ধাইবার একমাত্র পথ ছিল। নিজেদের সকল বল একত্র করিয়া তাহার শত্রদলের উপর ঝাপাইয়া পড়িল এবং তাহাদিগকে ছিন্নভিন্ন করিয়া পলায়ন করিতে বাধ্য করিল। সান মার্টিনের সেতু ধ্বংস হইবার পর বহু বৎসর কাটিয়া গেল । রাজা ও প্রধান ধৰ্ম্মযাজক বহুবার অর একটি সেতু নিৰ্ম্মাণের চেষ্টা করিতে লাগিলেন, কিন্তু প্রধান প্রধান স্থপতিগণও র্তাহাদের ইচ্ছ। কার্য্যে পরিণত করিতে পারিল না। পূর্বের ন্যায় সুন্দর সেতু কিছুতেই নিৰ্ম্মিত হইল না। নদীর খরস্রোতে কাষ্ঠের ভারী কিছুতেই টিকিতে চায় না, খিলান নিৰ্ম্মাণ আরম্ভ হইবার পূৰ্ব্বেই জলস্রোত কাষ্ঠরাশিকে ভাসাইয়া লইয়া যায়। টলিডোর প্রধান ধৰ্ম্মযাজক দেশে দেশে দূত প্রেরণ করিলেন, যে-কোনো দেশীয়, যে-কোনো ধৰ্ম্মাবলম্বী স্থপতি আসিয়া সেতু নিৰ্ম্মাণকার্য্য গ্রহণ করিলে, তাহারা প্রভূত অর্থদান করিতে সম্মত আছেন । কিন্তু কোনো ফল হইল না। সেতু-নিৰ্ম্মাণের পথে বাধা—টেগসের তীব্র স্রোত, উহা অতিক্রম করা কাহারও সাধ্যায়ত্ত বলিয়া বোধ হইল না। অবশেষে একদিন একটি পুরুষ ও একটি রমণী কান্থন তোরণ দিয়া নগরের ভিতর প্রবেশ করিল। উহার সকলেরই অপরিচিত। তাহারা অনেকক্ষণ দাড়াইয়৷ সেতুর ধ্বংসাবশেষ দেখিল, পরে ছোট একখানি ঘর ভাড় করিয়া সেইখানেই ঘর-করণ পাতিয়া বসিল । ঘরখানি সেতুর নিকটেই । পরদিন লোকটি সোজা প্রধান ধৰ্ম্মযাজকের প্রাসাদে গিধা উপস্থিত হইল। সেদিন প্রাসাদে দরবার চলিতেছে। বিভিন্নদেশীয় পণ্ডিত, ধৰ্ম্মযাজক, যোদ্ধা প্রভৃতি উপস্থিত হইয়াছেন। বিদেশী একজন স্থপতি তাহার দর্শনপ্রার্থী হইয়া উপস্থিত হইয়াছে শুনিয় প্রধান ধৰ্ম্মযাজক অত্যন্ত আনন্দিত হইলেন । আগন্তুককে তৎক্ষণাৎ তাহার সমীপে লইয়া আসিতে আদেশ করিলেন এবং মানের দায় ૨(t S অভিবাদনাদি হইয়া যাইবামাত্র তিনি স্থপতিকে বসিতে অনুরোধ করিলেন । বিদেশী বলিলেন, “সদাশয় প্রভু, আমার নাম জুয়ান ডি আরেভালো। এই নাম আপনার অপরিচিত । আমি স্থপতি, এই কারণে আপনার নিকট উপস্থিত হইয়াছি।” ধৰ্ম্মযাজক জিজ্ঞাসা করিলেন, “আমি সেতু নিৰ্ম্মাণ করিবার জন্য নিমন্ত্রণ-প্রচার করিয়াছিলাম, আপনি কি তাহ। শুনিয়া এ স্থানে আসিয়াছেন ?” “হ্যা, এই আহবান শুনিয়াই আমি টলিডোতে আসিয়াছি।” ধৰ্ম্মযাজক জিজ্ঞাসা করিলেন, “সেতু-নিৰ্ম্মাণকাৰ্য্যে যে বাধা আছে, তাহা আপনি জানেন ?” স্থপতি বলিলেন, “আমি ঐ বাধার কথা শুনিয়াছি, কিন্তু উহা অতিক্রম করিতে পারিব।” ধৰ্ম্মযাজক জিজ্ঞাসা করিলেন, “ আপনি স্থপতিবিদ্য৷ শিক্ষা করিয়াছেন কোথায় ?” স্থপতি উত্তর করিলেন, “ সালামানকাতে।” ধৰ্ম্মযাজক জিজ্ঞাসা করিলেন, “আপনার নিৰ্ম্মিত কোনো প্রাসাদ আমাকে দেখাইতে পারেন ? আপনার নৈপুণ্য কিরূপ উহা হইতে আমি বুঝিতে পারিব।” স্থপতি বিষন্নভাবে বলিলেন, “প্রভু, সেরূপ কিছুই আমি দেখাইতে পারিব না।” ধৰ্ম্মযাজক অসহিষ্ণুভাবে হাত নাড়িলেন । র্তাহার মুখের ভাবও সন্দেহাকুল হইয়া উঠিল। তাহা দেখিয়া বিদেশী স্থপতি বলিলেন, “প্রভু, যৌবনে আমি যুদ্ধব্যবসায়ী ছিলাম। কিন্তু স্বাস্থ্য ভগ্ন হওয়ায় আমাকে উক্ত ব্যবদ ত্যাগ করিয়া জন্মভূমি ক্যাষ্টাইলে ফিরিয়া আসিতে হয় । সেখানে আমি স্থপতিবিদ শিক্ষ ও স্থপতির কার্য্য করিতে আরম্ভ করি।” ধৰ্ম্মযাজক বলিলেন, “আপনি ষে নিজের নিৰ্ম্মিত কোনো বিখ্যাত প্রাসাদের নাম করিতে পারিলেন না, ইহাতে আমি বিশেষ দুঃখিত হইলাম।” স্থপতি বলিলেন, "টর্শ্বেস্ এবং ডুয়ারোতে অনেকগুলি প্রাসাদ আছে,যেগুলি অন্য স্থপতির কীৰ্ত্তি বলিয়া বিখ্যাত, কিন্তু সেগুলির যশ এই হতভাগ্যেরই প্রাপ্য ।”