পাতা:প্রবাসী (ত্রিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/৩৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

రిపి বাংলা ভাষার ঐক্য বাংলা ভাষা সম্বন্ধে একটু চিস্ত করিলেই এই সন্দেহটা মনে জাগে-বাংলা বলিয়া কি একটা কেন্দ্রীয়, একীভূত, স্বাভাবিক ভাষা আছে, না উহ। কেবলমাত্র চট্টগ্রামের উপভাষা, ঢাকার উপভাষা, বীরভূমের উপভাষা, দিনাজপুরের উপভাষা, নদীয়ার উপভাষা, এইরূপ অনেকগুলি উপভাষার সমঠা মাত্র ? সকল দিক হইতে দেখিলে একথাটা স্বীকার করিতেই হইবে যে, ইংরেজী যে-অর্থে এক ভাষা, ফরাসী যে-অর্থে এক ভাষা, জাৰ্ম্মাণ যে-অর্থে এক ভাষা, বাংল। সেই অর্থে এক ভাষা কোনদিনই ছিল না এবং আজ পর্য্যস্তও হইয়া উঠিয়াছে একথা বলা চলে না। ফরাসীভূমির মত, বা ইংলণ্ডের মত কোনও সৰ্ব্বনিয়ন্ত রাজশক্তি বাংলার অদৃষ্ট কোনও কালে নিয়ন্ত্রিত করে নাই । তাই, একচ্ছত্র শাসনের দৃষ্টান্তপ্রভাবে ফরাসীর মত বাংলাভাষী অঞ্চলবিশেষের ভাষার ছত্রতলে একাকার লাভ করিতে সক্ষম হয় নাই ; *ংরেজীভাষীর মত তত নিবিড় ঐক্যবোধও বাংল। ভাষাভাষী মাত্রই উপলব্ধি করিতে পারে নাই । আমাদের জীবন কোনদিনই কেন্দ্রান্তগত ছিল না, কেন্দ্রীয় ভাষাও তাই আমাদের মধ্যে থাকা স্বাভাবিক নয় । কথা বাংল। আজ পয্যন্তও সেজন্যই “ফেডারেল” শাসনতন্ত্রের মত “ফেডারেল’ ভাষা মাত্র । কিন্তু এই অনুমানে আংশিক সত্য যতটুকুই থাকুক, উহ। সৰ্ব্বাংশে সত্য নয়। বাংলা বলিয়। একটা কেন্দ্রীয় ভাষার অস্তিত্ব একেবারেই নাই, একথা নিঃসন্দেহে বলা চলে না । মধ্যযুগ হইতে বাংলাভাষার—অস্তত লিখিত বাংলা পদ্যের ভাষার—একটি সাধারণ রূপ প্রায় স্বস্থির হইয়া আসিতেছিল। ইহার বনিয়াদ পূৰ্ব্ব ও মধ্যরাঢ়ের কথিত ভাষা, কিন্তু সমগ্র ংলা দেশেই তাহা প্রচলিত। এই মূল প্যান-বেঙ্গলী ভিত্তির উপর লেখক বে-অঞ্চলের লোক সময় সময় সে-অঞ্চলের উপভাষার মালমশলা মিশানো চলিয়াছে। তাই, যে-সময় হইতে বাংলা সাহিত্যের নিদর্শন সহজপ্রাপ্য ও বহুল হইয়া উঠিল, সেই সময় সেকালের প্রবাসী—কাৰ্ত্তিক, ১৩৩৭ [ ৩০শ ভাগ, ২য় খণ্ড হইতেই দেখা যায়, মোটামুটি বাংলা ভাস্থার একটি রূপ প্রায় সকল বাঙালীই অন্ততঃ লিখিবার বেলায় মানিয়৷ লইয়াছে, কেহই উপভাষার উপর ভরসা রাখে নাই । দু-একটি দুষ্টাস্তের উল্লেখ করিলেই চলিবে,—পরাগলী মহাভারত ও ছুটিখানী অশ্বমেধপর্ব দুইই বাংলা দেশের পূৰ্ব্ব সীমান্তে রচিত, ভাষাও বেশ প্রাচীন, কিন্তু সেভাষায় স্থানীয় উপভাষার স্পর্শমাত্র নাই । হয়ত রচয়িত কবিদ্বয়ের মাতৃভূমি গৌড়াঞ্চল, র্তাহারা গৌড়ের রাজসভা হইতেই লস্করের সঙ্গে পূৰ্ব্বাঞ্চলে গিয়াছিলেন ও গৌড়রাজসভার সংস্কৃতিকেই সেখানেও প্রবন্তন করিতেছিলেন । তথাপি, পরাগলের বা ছুটিখানের সভায় সকলে এই ভাষাকেই ষ্ট্যাণ্ডার্ড বলিয়া গ্রহণ করিয়াছিলেন তাহাও নিঃসন্দেহ । সঞ্জয়ের দেশ, কাল, অস্তিত্ব, লইয়া গবেষণা চলিতেছে, কিন্তু তাহাতেও এই লিখিত পদ্যভাষার ব্যতিক্রম অতি সামান্ত; দু-একটি বিভক্তিব ছিটে-ফোটা মায় । নারায়ণদেবের মনসার গানে উপভাষার রং বেশী, কিন্তু কেন্দ্রীয় ভগ্নস সঙ্গে সঙ্গে চলিতেছে । বিজয়গুপের মনসামঙ্গলের ভাব ও মালাধর বসুর ভাগবতের ভাষায় প্রভেদ আছে কি ? হুসেন সাহের পূৰ্ব্ব হইতেই বাংলার এই পদ্যভাষা নিখিল বাংলার ভাষাগত মূলরপগুলিকে আশ্রয় করিয়া ফুটিয়া উঠিতেছিল, হুসেন সাহের পর তাহার ভিত্তি হহয়! আসিল । রোসাঙ্গের রাজসভায় কাজী লোর-চন্দ্রাণীর প্রণয়গাথা ‘গোহারি’ ভাষায় গাহিলে কেহ বুঝিতে পারে না, তাই আদেশ হইল-- “দেশী ভাযে কহ তাকে পাঞ্চালীর ছন্দ । সকলে শুনিআ যেন বুঝএ সানন্দ ॥” সেই ‘দেশী ভাব।’ থাটি গৌড় ভাষা, রোসাঙ্গের উপভাষ| লয় । বোঝা যায়, উনবিংশ শতাব্দীর পূৰ্ব্বেও লিখিত বাংলা ভাষার ঐক্যসাধনের পথে উপভাষা একটা গুরুতর প্রতিবন্ধক হইয়া দাড়ায় নাই । ইহার কারণ বোধ হয় এই যে, রাষ্ট্রশক্তি যদিও বাঙালীর জাতীয় জীবনের ঐক্য সাধন করিতে চেষ্টা করে নাই, তথাপি বিজেতা মুসলমানগণের মধ্যে গৌড়ের ভাষা বাংলার রাষ্ট্রকেন্দ্রের ভাষা পাক । দৌলত