বিষয়বস্তুতে চলুন

পাতা:প্রবাসী (ত্রিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/৪০৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

৪৯২ ছিল না। তাহদের সহিত কি প্রকার খিটিমিটি হইত, তাহার কেবল একটি দৃষ্টান্ত দিতেছি। কোন এক বৎসর ইংলণ্ডেশ্বরের জন্মদিন উপলক্ষ্যে যখন রেজিমেন্টের ইংরেজ-সেনানায়কের রাজার স্বাস্থ্যের উদ্দেশ্বে মদ্যপান করিতেছিলেন, তখন বস্থ মহাশয়কেও তাহারা মদ্য পান করিতে বলেন । তিনি বিলাতে বা অন্য কোথাও জীবনে কখনও মদ্য পান করেন নাই। স্বতরাং তিনি এই উপলক্ষ্যেও সুরা পান করিতে অস্বীকার করিলেন। তাহাতে ইংরেজ অফিসাররা তাহাকে এই বলিয়া খোটা দেন, যে, তিনি ইংলণ্ডেশ্বরের নিমক খান অথচ তাহার স্বাস্থ্যের উদ্দেশে পান করিবেন না— অর্থাৎ তাহাকে অকৃতজ্ঞ ও অরাজভক্ত বলা হয়। তিনি উত্তর দেন, “আমি নিজের দেশের নূন খাই”—অর্থাৎ র্তাহার বেতন ভারতবর্ষের রাজস্ব হইতে আসে । অন্য প্রকার অপ্রীতিকর ঘটনা ও কথাও তাহার গোচর হইত। তিনি চাকরি উপলক্ষ্যে স্বদেশে ও বিদেশে নানা স্থানে গিয়াছিলেন । অনেক ঘটনা তিনি প্রত্যক্ষ করিয়াছিলেন । অনেক বিখ্যাত ও অন}বিধ লোকের সহিত র্তাহার আলাপ পরিচয় হইয়াছিল । এই সমুদয় সম্বন্ধে তাহার যাহা মনে ছিল, তিনি তাহা ইংরেজীতে "F# (fT” (Reminiscences ) AIN f(l f(f2# রাখিয়া গিয়াছিলেন । দুঃখের বিষয়, তাহার শেয কঠিন পীড়ার সময় ইহার অধিকাংশ হারাইয়া গিয়াছে। যদি এই হারান খাতাগুলি খুজিয়া পাওয়া না যায়, তাহ হুইৱে তাহার জীবনের অনেক প্রয়োজনীয় কথা অজ্ঞাত থাকিয়া যাইবে । ১৮৮৯ খৃষ্টাব্দের জুলাই মাসে বস্ব মহাশয়ের একমাত্র সস্তান ও পুত্র ললিতমোহনের জন্ম হয় । তাহার জন্মের অনতিবিলম্বে জননী সুকুমারী দেবী পীড়িত হন। তাহী ক্রমে ক্ষয়ুরোগে পরিণত হয়, এবং তিনি ১৯০২ সালে কালগ্রাসে পতিত হন । শিশুটিকে তাহার ছোট পিসী শ্ৰীমতী জগৎমোহিনী দাস মানুষ করেন। ৩৫ বৎসর বয়সে বিপত্নীক হইবার পর মেজর রসু আর বিবাহ করেন নাই । তিনি এই ঘটনার পূৰ্ব্বে আমিষ ভক্ষণ করিতেন, যদিও বেশী নয়। বিপত্নীক প্রবাসী—পৌষ, ১৩৩৭ [ ৩eশ ভাগ, ২য় খণ্ড হইবার পর নিরামিষভোজী হন । পূৰ্ব্বেই বলা হইয়াছে, যে, তিনি কখনও মদ্য পান করেন নাই। চা-পানও করিতেন না। ধূমপান ইংলণ্ডে একবারমাত্র করিয়াছিলেন। তাহাতে মাথা ঘুরিয়া পড়িয়া যাওয়ায় আর কখনও ধূমপান করেন নাই। মেজর বহু পেন্সান লইবার পূৰ্ব্বেই তাহার দাদা ও তিনি সপরিবারে এলাহাবাদের বাসিন্দী হন । র্তাহারা তথায় যে বাট নিৰ্ম্মাণ করেন, তাহদের মাতৃদেবীর নামে তাহার নাম ভুবনেশ্বরী আশ্রম রাখা হয় । তিনি পেন্স্যন লইয়া এলাহাবাদে আসিবার পর তৎকালে সেখানকার কয়েকজন লব্ধপ্রতিষ্ঠ চিকিৎসক তাহাকে চিকিৎসা ব্যবসায় না করিতে অনুরোধ করেন ; কারণ তাহাতে র্তাহাদের ক্ষতি হইবে! বামনদাস অর্থগৃঃ, ছিলেন না, তাহার পেন্স্যন তাহার ও র্তাহার শিশুপুত্রের সামান্য ব্যয়ের পক্ষে যথেষ্ট ছিল, এবং তঁাহার মনও স্বভাবতঃ অর্থোপার্জন অপেক্ষ লেখা ও পড়ার দিকেই ধাবিত হইত। এই সব কারণে তিনি এলাহাবাদে চিকিৎসা ব্যবসায় না করাই স্থির করেন । বিন। পারিশ্রমিকে কচিং কখনও কেবল বন্ধুবান্ধবের বাড়ীতে রোগী তিনি দেখিতেন। তাহাতে বুঝিতে পার। যাইত, তিনি কিরূপ সুচিকিৎসক ছিলেন। পেন্সন লইবার পর তাহার নিজের ব্যয় সামান্ত হইবার কারণ, তিনি সাতিশয় অবিলাসী ছিলেন । র্তাহার চালচলন অত্যন্ত সাদাসিধা ছিল । সৰ্ব্বদা এক খান মোট। ধুতি ও একটা পঞ্জাবী বা কামিজ পরিয়া থাকিতেন । বাহিরে যাইবার সময় একট। চাদর ঠাইতেন । শীতের সময় একটা কোট পরিতেন । তিনি যথাসম্ভব দেশী জিনিষ ব্যবহার করিতেন। কচিৎ কথন সরকারী বা অন্য উচ্চপদস্থ লোকদের সহিত দেখা করিতে হইলে আগে আগে পোষাক পরিতেন, শেষাশেষি অনেক বৎসর কোথাও যাইতেন না। দিন রাত খোলা জায়গায় থাকিতেন। গ্রীষ্মের প্রখর রৌদ্রের সময় এবং বর্ষার বৃষ্টির সময় একটা ঘরে কিম্বা দুতলার একটা টিনের চালার নীচে আশ্রয় লইতেন। বৃষ্টির সময় ভিন্ন সকল ঋতুতে রাত্রে খোলা ছাতে শুইয়া থাকিতেন । তিনি অল্পাহারী