পাতা:প্রবাসী (ত্রিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/৪৭১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

8Գ օ একাকিনী ছিলেন। অবনতমুখী সীতা পরীক্ষা দিতে সম্মত হলেন, প্রকাণ্ড অগ্নিকুণ্ডের মধ্যে সীতা প্রবেশ করলেন, তার স্বামী ও দেবর দেবতাদের সঙ্গে দাড়িয়ে রইলেন দর্শক হয়ে । সীতার চক্ষের জলে আগুন শাস্ত হয়ে গেল, অগ্নিকুণ্ড বারিকুণ্ডে পরিবর্তিত হ’ল, সীত৷ অদগ্ধ অবস্থায় বাহির হয়ে এলেন । সেই দিনের স্মৃতিকে পূজা করবার জন্ত আজও রামের জন্মদিনে বহু নরনারী কষ্টহারিণীর ঘাটে স্বান ক’রে এই সীতাকুণ্ডের জলস্পর্শে আপনাদের কৃতাৰ্থ জ্ঞান করে ।” আমি বললাম, “আপনার সীতা সেদিন ভারতরমণীর প্রতীক হয়েই অগ্নিকুণ্ডে প্রবেশ করেছিলেন । স্থষ্টির আদি যুগ থেকে রমণীর চরিত্রের এই অপমানের বিরুদ্ধে ভারতনারী-হৃদয়ের পুঞ্জীভূত অভিমান সেদিন সীতার চোখ দিয়ে বাহির হয়ে অগ্নিকে নিৰ্বাপিত করেছিল । আজও পরীক্ষার শেষ হয়নি, আজি ৪ পুরুষের মনে সেই সংশয় রয়েছে । সীতার পর কত সাধী নারা পৃথিবীর শৰ্মা৷ সীতাকুণ্ডের জলকে উষ্ণ ক’রে রেখেছে । গ্রহণ করেছেন । তাদের অভিমান-অশ আজও ভদ্রলোক বললেন, "বিজ্ঞান বলছে যে এখানে আগ্নেয়গিরি আছে । চান-পরিব্রাজক হিউয়েন সাঙ্গ এ অঞ্চলে এসে দেখেছিলেন যে, হিরণ্য পৰ্ব্বত থেকে ধূমরাশি উদগত হয়ে সব অন্ধকার ক’রে দিয়েছে । কিন্তু বিজ্ঞানের এ কথায় মন সায় দিতে চায় না, মন তৃপ্তি পায় সেই কুণ্ডের পাশ্বে দাড়িয়ে সীতার সমবেদনায় একবিন্দু তপ্ত অশ্রু সেই কুণ্ডের জলের সঙ্গে মেশাতে ।” প্রৌঢ় ভদ্রলোক যৌবনে কবিতা লিখেছেন কি না জানবার ইচ্ছা হয়েছিল, কিন্তু আরও গল্প শোনবার লোভে সে বিষয়ে আর প্রশ্ন করলাম না । ভদ্রলোক বললেন, “কেল্লার পশ্চিম সীমানার কিছু দূরে চণ্ডীস্থান ব’লে এক প্রাচীন দেবতার স্থান আছে। এ অঞ্চলের এক রাজ ছিলেন কর্ণ। তার দানের কথা সারা ভারতের লোকই জানত। উল্লেখিম:র রাজা বিক্ৰমাদিত্যের কৌতুহল হ’ল জানতে কোথা থেকে এত অর্থ পায় কর্ণ। তিনি ছদ্মবেশে এসে কর্ণের ভূত্যের কাজ গ্রহণ করলেন । কৰ্ণ প্রতিদিন রাত্রির দ্বিতীয় প্রবাসী—মাঘ, ১৩৩৭ [ ৩০শ ভাগ, ২য় খণ্ড প্রহরে চণ্ডীস্থানের দেবী চণ্ডীর পূজা ক’রে তাকে প্রসন্ন করবার জন্য এক জলন্ত তেলের কড়ায় কাপ দিতেন । চণ্ডীদেবীপ্রসন্ন হয়ে অমৃতকুণ্ডের বারি সিঞ্চন ক’রে তাকে সঞ্জীবিত করে তুলতেন এবং কড়ার তেল সোনার চাপে পরিবৰ্ত্তিত হয়ে যেত। সেই সোনা পরদিন কর্ণ গরিব দুঃখীদের বিতরণ করে দিতেন । কিছুদিনের মধ্যে বিক্রম রাজ। এই গুপ্তকথা জেনে ফেললেন । বিক্রম দেবীর পূজা আরম্ভ করলেন, নিজদেহের মাংস কেটে দেবীর পায়ে অৰ্ঘ্য দিলেন ; রক্তাক্ত দেহে মন মাথালেন। সর্বশেষে তেলের কড়ায় ঝাপিয়ে পড়লেন । দেবী বিশেষ প্রীত হয়ে বিক্রমকে বর দিতে চাইলেন । বললেন, “আমি চাহ ন স্বর্ণ, রত্ন । আমি চাই আপনাকে । আপনি আমার রাজ্যে চলুন ।” চণ্ডী সম্মতি জানালেন । বিএম কড় উণ্টে দিলেন এবং সেই উল্টান কড়া চণ্ডীর গুহের একদিন রাত্রে কর্ণের পূৰ্ব্বে এসে রাজা অব্য বঙ্কিত পুরেক্ট রাজা কৰ্ণ পৰ্ব পুষ্প নিয়ে প্রতিদিনেব মন্ত শুচি হয়ে দহে চাদের উপর রেপে বীর হয়ে এলেন । প্রবেশ করে দেখলেন যে, কড উদ্টান, তেল গড়চ্ছে, দেবী নিরদিষ্ট । চণ্ডীদেবী মাত্র তখন বিক্রমের রাজ্যে যাবার জন্য বার হচ্ছিলেন । কর্ণের আর্তনাদ শুনে থামৃলেন । কর্ণের অন্ত্রনয়-বিনয়, কাতরতা দেবীর হৃদয় বিচলিত করল । দেবী কর্ণের তৃপ্তির জন্য র্তার প্রসন্ন দৃষ্টি প্রাচীরগাত্রে রেখে বিক্রমের সঙ্গে চলে গেলেন । আজও মন্দিরের গাত্রে সেই দুটি চক্ষু তেমনি চেয়ে আছে, সেই লোহার কড়া মন্দিরের ছাদ হয়ে আছে । ইতিমধ্যে ট্রেন যে কখন মুঙ্গের ষ্টেশনে এসে পৌছেছে তা বুঝতে পারিনি, কুলির ও সাত্রীর চীংকারে চমক ভাঙল 彝 養 豪 অপরাহ্লে আমরা সীতাকুগু দেখবার জন্যে বাহির হলাম। মুঙ্গেরকে পশ্চিমে ফেলে আমাদের গাড়ী সোজ৷ এক রাস্ত দিয়ে পূৰ্ব্বমুখে চলতে লাগল। প্রথমেই পড়ল কয়েকটি বাগান ও বাগানবাড়ী। তার পরেই দুধারে ধুধু করছে মাঠ, দূরে খড়গ পাহাড় দাড়িয়ে রয়েছে। গাছের মধ্যে খেজুর ও তালগাছই চোখে পড়তে