পাতা:প্রবাসী (ত্রিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/৫৯৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

৫ম সংখ্যা ] রাশিয়া সম্বন্ধে রবীন্দ্রনাথের পত্রাবলী (సిని দেশেরই আধুনিক উপসর্গের মত অতি কুৎসিত অতি বৰ্ব্বর ভাবেই ঘটত—শিক্ষায় এবং শাসনে একেবারে তার মূল উৎপাটিত হয়েচে। কতবার আমি ভেবেছি আমাদের দেশে সাইমন কমিশন যাবার আগে একবার রাশিয়ায় তার ঘুরে যাওয়া উচিত ছিল । তোমার মত ভদ্রমহিলাকে সাধারণ ভদ্রগোছের চিঠি না লিখে এ-রকম চিঠি যে কেন লিখলুম তার কারণ চিন্তা করলেই বুঝতে পারবে দেশের দশা আমার মনের মধ্যে কি রকম তোলপাড় করচে, জালিয়ানওয়ালাবাগের উপদ্রবের পর একবার আমার মনে এই রকম অশাস্তি জেগেছিল। এবার ঢাকার উপদ্রবের পর আবার সেই রকম দুঃখ পাচ্চ। সে ঘটনার উপর সরকারী চূণকামের কাজ হয়েচে কিন্তু এরকম সরকারী চুণকামের যে কি মূল্য তা রাষ্ট্রনীতিবিৎ সবাই জানে। এই রকম ঘটনা যদি সোভিয়েট রাশিয়ায় ঘটত তাহলে কোনো চূণকামেই তার কলঙ্ক ঢাকা পড়ত না । স্বধীন্দ্র, আমাদের দেশের রাষ্ট্ৰীয় আন্দোলনে যরিসকোনো শ্রদ্ধা কোনো দিন ছিল না, সেও এবারে আমাকে এমন চিঠি লিখেছে যাতে বোঝা যাচ্চে সরকারী ধৰ্ম্মনীতির প্রতি ধিক্কার আজ আমাদের দেশে কতদূর পয্যন্ত পৌচেছে । যাহোক তোমার চিঠি অসমাপ্ত রইল-কাগজ এবং সময় ফুরিয়ে এসেচে, এবার প্রশাস্তর চিঠিতে এ চিঠির অসম্পূর্ণ অংশ সম্পূর্ণ করব। ইতি সেপ্টেম্বর ২৮, ১৯৩০ ৷ কল্যাণীয়েষ্ণু, স্বরেন, পিছিয়ে-পড়া জাতের শিক্ষার জন্তে সোভিয়েট রাশিয়ায় কি রকম উদ্যোগ চলচে সে কথা তোমাকে লিখেচি। আজ দুই একটা দৃষ্টান্ত দেওয়া যাক । উরাল পৰ্ব্বতের দক্ষিণে বাধ কিবৃদের বাস। জার-এর আমলে সেখানকার সাধারণ প্রজার অবস্থা আমাদের দেশের মতই ছিল । তারা চির উপবাসের ধার দিয়ে দিয়েই চলতো। বেতনের হার ছিল অতি সামান্ত, কোনো কারখানায় বড় রকমের কাজ করবার মত শিক্ষা ছিল না, অবস্থাগতিকে তাদের ছিল নিতান্তই মজুরের কাজ। বিপ্লবের পরে এই দেশের প্রজাদের স্বতন্ত্র শাসনের অধিকার দেবার চেষ্টা আরম্ভ হ’ল। প্রথমে যাদের উপর ভার পড়েছিল তারা ছিল আগেকার আমলের ধনী জোৎদার, ধৰ্ম্মযাজক এবং বর্তমানে আমাদের ভাষায় যাদের বলে থাকি শিক্ষিত। সাধারণের পক্ষে সেটাতে সুবিধা হ’ল না। আবার এই সময়ে উৎপাত আরম্ভ করলে কলচাকের সৈন্য । সে ছিল জার-আমলের পক্ষপাতী, তার পিছনে ছিল ক্ষমতাশালী বহিঃশত্রুদের উৎসাহ এবং আমুকুল্য। সোভিয়েটর। যদি-বা তাদের তাড়ালে, এল ভীষণ দুর্ভিক্ষ । দেশে চাষবাসের ব্যবস্থা ছারখার হয়ে গেল । ১৯২২ খৃষ্টাব্দ থেকে সোভিয়েট আমলের কাজ ঠিক মত স্বরু হতে পেরেছে । তখন থেকে দেশে শিক্ষাদান এবং অর্থোৎপত্তির ব্যবস্থা প্রবল বেগে গড়ে উঠতে লাগল। এর আগে ব্যকিরিয়াতে নিরক্ষরত ছিল প্রায় সৰ্ব্বব্যাপী । এই কয় বছরের মধ্যে এখানে আটটি নৰ্ম্মাল স্কুল, পাচটি কৃষিবিদ্যালয়, একটি ডাক্তারি শিক্ষালয়, অর্থকরী বিদ্যা শিখবার জন্যে ছুটি, কারখানার কাজে হাত পাকাবার জন্তে সতেরটি, প্রাথমিক শিক্ষার জন্যে ২৪৯৫টি এবং মধ্য-প্রাথমিকের জন্তে ৮৭টি স্কুল স্বরু হয়েচে । বৰ্ত্তমানে বাঘ কি রয়াতে দুটি আছে সরকারী থিয়েটার, দুটি মু'জিয়ম, চৌদ্দটি পৌরগ্রন্থাগার, ১১২টি গ্রামের পাঠগৃহ ( reading-room ), ত্রিশটি সিনেমা শহরে এবং ৪৬টি গ্রামে, চাষীরা কোনো উপলক্ষ্যে শহরে এলে তাদের জন্যে বহুতর বাস, ৮৯১টি Coláil 8 of to Sisoil (recreation corners), তাছাড়া হাজার হাজার কৰ্ম্মী ও চাষীদের ঘরে রেডিয়ে শ্রুতিযন্ত্র। বীরভূম জেলার লোক বাধ কিবৃদের চেয়ে নিঃসন্দেহ স্বভাবত উন্নততর শ্রেণীর জীব। বাষ কিরিয়ার সঙ্গে বীরভূমের শিক্ষা ও আরামের ব্যবস্থা মিলিয়ে দেখ । উভয় পক্ষের ডিফিকন্টিজেরও তুলনা করা কৰ্ত্তব্য হবে । সোভিয়েট রাষ্ট্রসজ্যের মধ্যে যতগুলি রিপাব্লিক হয়েচে তার মধ্যে তুর্কমেনিস্তান এবং উজবেকিস্তান সবচেয়ে অল্পদিনের। তাদের পত্তন হয়েচে ১৯২৪ খৃষ্টাব্দের অক্টোবরে, অর্থাৎ বছর ছয়েকের চেয়েও তাদের বয়স কম। তুর্কমেনিস্তানের জনসংখ্যা সবসুদ্ধ সাড়ে দশ লক্ষ ।