বিষয়বস্তুতে চলুন

পাতা:প্রবাসী (ত্রিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/৬৬৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

৬৬২ মিত্র ভাবে আলাউদ্দীনকে সম্বৰ্দ্ধনা করিয়া রাজপ্রাসাদে অতিথিরূপে গ্রহণ করিলেন। চতুর্দিকে সরোবর-বেষ্টিত আকাশম্পর্শ স্বরম পদ্মিনী মহলের প্রতি স্বলতানের সতৃষ্ণদৃষ্টি নিবদ্ধ হইল । অঙ্গরাতুল্য ষোড়শ সহস্ৰ দাসীকে দেখিয়া আলাউদ্দীন জ্ঞানহারা হইলেন। রাঘবচেতনকে জিজ্ঞাসা করিলেন ইহাদের মধ্যে পদ্মিনী কে ? ভোজের পর রাজা ও স্বলতান শতরঞ্চ খেলায় বসিলেন । রাঘবের নির্দেশমত স্বলতান গৃহস্থিত স্থত্বহং দর্পণের দিকে মুখ করিয়া বসিলেন । রাজা খেলার নেশায় নিবিষ্ট মনে বাজিমাং করিবার চেষ্টায় ছিলেন । কিন্তু সুলতান শুধু খেলার ভাণ করিয়া বসিয়া রছিলেন, তাহার ধ্যান ও চঞ্চল দৃষ্টি ছিল দর্পণের দিকে । আলাউদ্দীনের দুতী অন্তপুর-স্থিত পদ্মাবতীকে কোনো রকমে ভুলাইয়। মহলের জানালার কাছে আনিবার জন্য বলিল,— বাদশাহ দিল্লী কর কিন্ত চিতটর মই আৰ । দেখি লেন্থ, পদমাবতি | জেহি ন রহৈ পচ্ছিতাব । অর্থাৎ—দিল্লীশ্বর পুনৰ্ব্বার চিতোরে আসিবেন পদ্মাবতি । তাহাকে একবার দেখিয়া লও, যেন আপশোষ না করিতে হয়। অপরিচিত ব্যক্তিকে দর্শনের স্ত্রীসুলভ ঔংস্থক্যপ্রণোদিত হইয়া পদ্মাবতী বিশ্র রূচিত্তে ঝরোকার কাছে আসিয়া দাড়াইলেন । উহার বিপরীতদিকস্ত দর্পণে প্রতিবিম্ব দেখিয়া আলাউদ্দীন গালিচার উপর ঢলিয়। পড়িলেন । রাজা এ ব্যাপার কিছুই বুঝিতে ন৷ পারিয়া অতিথির জন্য ব্যস্ত হইয় পড়িলেন । ধূৰ্ত্ত রাঘব রাজাকে বুঝাইয়া দিল, “স্বলতানের স্বপারীর নেশা লাগিয়াছে।”* সকলে ধরাধরি করিয়া আলাউদ্দীনকে বিছানায় শোয়াইয় রাখিল । পরদিন সকাল বল, বিদায়ਵਿਸ਼ সুলতান কথা বলিতে বলিতে রাজাকে চিভোরের সাত দরজার বাহিরে লইয়া আসিলেন । আলাউদ্দীন প্রথম দরজায় খেলাং একশত তুকী ঘোড়া তেইশটি হাতী ও দরবারী পোষাক, দ্বিতীয় দরজায় বাদশাহের খাস সওয়ারী R || পরে

  • “রাঘব কহা কি লাগি সোপায়ী ।

লেই পেীড়াবহি সেঞ্জ সবারী ॥” পদ্মাবত, না প্র, পৃ. ২৮s ) প্রবাসী— ফাল্গুন, ১৩৩৭ [ ৩০শ ভাগ, ২য় খণ্ড ঘোড়া, তৃতীয় দরজায় বহুমূলা রতু, চতুর্থ দরজায় কোটি মুদ্রার সামগ্রী, পঞ্চম দরজায় হীরার জোড়ি (কুগুল ?), ষষ্ঠ দরজায় মাও-রাজ্য, সপ্তম দরজায় চদেরী-রাজ্য দিলেন। দুর্গের পাদদেশে অবতরণ করিয়া শাৰ্দ্দল নিজমুৰ্ত্তি ধারণ করিল। রাজা রতন সেন শৃঙ্খলিত হইয়। দিল্লীতে আনীত হইলেন ; চিতোরে হাহাকার পড়য়া গেল । অবসর বুঝিয় রাজা রতন সেনের শত্ৰু কুম্ভলমীর অধিপতি রাও দেবপাল পদ্মাবতীকে বিপথগামিনী করিবার উদ্দেশ্বে দূতী পাঠাইল । নিরুপায় রাণী গোর ও বাদলের কাছে গেলেন । বীরদ্বয় রাজাকে উদ্ধার করিবার জন্য প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হইল । [ গোরা বাদল কে ছিলেন তাহ পদ্মাবতে নাই । তাহারা যে পদ্মিনীর পিতৃকুলের লোক, সে-কথা টডই বলিয়াছেন । পদ্মাবত কাব্যপাঠে অনুমান হয়, তাহার চিতোরের সামন্ত ছিলেন }। গোর-বাদলের নেতৃত্বে রক্ষীবেষ্টিত ষোলশত পালকী চিতোর-দুর্গ অতিক্রম করিয়া দিল্লী অভিমুখে চলিল । পদ্মিনীকে অঙ্কগত বিষেচনা করিয়া আলাউদ্দীন তখন সুখস্বপ্নে বিভোর। রাণীর চতুদোল হইতে এক কৰ্ম্মকার বাহির হইয় দিল্লী-কারাগারে বন্দী রতন সেনের হাতপায়ের বেড়ী কাটিয়া দিল ! গোরা বাদল প্রাণ দিয়৷ রাজাকে উদ্ধার করিলেন। চিতোরে পৌছিয়া রতন সেন পত্নীর অপমানের প্রতিশোধ লইবার জন্য দেবপালকে আক্রমণ করিলেন । দ্বন্দ্বযুদ্ধে রতন সেন আহত হইয় প্রাণত্যাগ করিলেন—নাগমতী ও পদ্মাবতী স্বামীর মৃতদেহ আলিঙ্গন করিয়৷ জলস্ত চিতায় আহুতি দিলেন। এদিকে আলাউদ্দীনও সসৈন্য দুর্গের বাহিরে হান দিলেন। ঙ্গৌহর ভয়ি সব ইস্তিরী, পুরুষ ভয়ে সংগ্রাম। বাদশাহ গঢ় চুড়। চিতোর ভাইসলাম। অর্থাৎ স্ত্রীরা জোঁহর প্রবেশ করিল ও পুরুষের রণশয্যায় শায়িত হইল। বাদশাহ দুর্গশৃঙ্গে পদার্পণ করিলেন। চিতোর দীর-উল-ইসলামে পরিণত হইল । পদ্মাবত কাব্য পড়িয়া স্পষ্টই বুঝা যায় যে, ইহা “রাচরিতে"র স্তায় ঐতিহাসিক কাব্য নহে ; মুদ্রারাক্ষসের মত দশ আনি ছয় আনি ঐতিহাসিক নাটকও নহে । আশ্চর্ঘ্যের বিষ, জ্যায়ী আলাউদ্দীনের রাজাকালে