পাতা:প্রবাসী (ত্রিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/১০৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

প্রবাসী—বৈশাখ, ১৩৩৭ ৩eশ ভাগ, ১ম খণ্ড ԵՋ আক ও শাক আলু কাটিয়া লইয়া আসিল । তাহার পর তাহাদের পদ্য-মেলানোর আর অস্ত নাই! নিৰ্ম্মলার পদটি মিলাইয়া দিয়াই অপু তাহাকে আর একটা পদ মিলাইতে বলে—নিৰ্ম্মলাও অল্প এক মিনিটে তাহার জবাব দিয়া অন্য একটা প্রশ্ন করে । -কেহ কাহাকেও ঠকাইতে পারে না। ডেপুটীবাবুর স্ত্রী একবার বাহিরের ঘরে আসিতে আসিতে শুনিয়া বলিলেন—বেশ হয়েচে, আর ভাবনা নেই—এখন তোমরা দু ভাইবোনে একটা কবির দল খুলে দেশে দেশে বেড়িয়ে বেড়াও গিয়ে— অপু লজ্জিত হইয়া চুপ করিয়া রহিল। ডেপুটীবাবুর স্ত্রীর বড় সাধ অপু তাহাকে মা বলিয়া ডাকে। সে যে আড়ালে তাহাকে মা বলে, তাহা তিনি জানেন—কিন্তু সাম্নাসামনি অপু কখনো তাহাকে মা বলিয়া ডাকে মাই, এজন্য ডেপুটীবাবুর স্ত্রী খুব দুঃখিত। অপু যে ইচ্ছা করিয়া করে না তাহা নহে। ডেপুটীবাবুর বাসায় থাকিবার কথা এবার সে বাড়ীতে গিয়৷ মায়ের কাছে গল্প করাতে সৰ্ব্বজয়া ভারী খুসি হইয়াছিল। ডেপুটীবাবুর বাড়ী ! কম কথা নয়!..সেখানে কি করিয়া থাকিতে হইবে, চলিতে হইবে সে বিষয়ে সে ছেলেকে নানা উপদেশ দিয়া অবশেষে বলিয়াছিল - ডেপুটীবাবুর বউকে মা বলে ডাক্বি --আর ডেপুটীবাবুকে বাবা বলে ডাক্বি – অপু লজ্জিত মুখে বলিয়াছিল—হ্যা, আমি ও সব পারবো না— সৰ্ব্বজয়া বলিয়াছিল—তাতে দোষ কি ?..বলিস, তারা খুসি হবেন—কম একটা বড় লোকের আশ্রয় তো নয়—তাহার কাছে সবাই বড়মানুষ।. অপু তখন মায়ের নিকট রাজী হইয়া আয়িলেও এখানে তাহা কাৰ্য্যে পরিণত করিতে পারে নাই। মুখে কেমন বাধে, লজ্জা করে। একদিন-অপু তখন একমাস হইল সারিয়া উঠিয়াছে— নিৰ্ম্মলা বাহিরের ঘরে চেয়ারে বসিয়া কি বই পড়িতেছিল, ঘোর বর্ষ। সারা দিনটা, বেলা বেশী নাই—বৃষ্টি একটু ক্ষমিয়াছে। অপু ৰিলা ছাতায় কোথা হইতে ভিজিতে ভিজিতে আসিয়া দৌড়িয়া ঘরে ঢুকিতেই নিৰ্ম্মলা বই মুড়িয়া বলিয়া উঠিল—এঃ, আপনি যে দাদা ভিজে একেবারে— অপুর মনে যে জন্যই হউক খুব স্মৃত্তি ছিল—তাহার দিকে চাহিয়া বলিল—চট্‌ ক’রে চা আর খাবার—তিন মিনিটে— নিৰ্ম্মলা বিস্মিত হইল, সঙ্গে সঙ্গে অত্যন্ত আনন্দিত হইল। এ রকম তো কখনো হুকুমের স্বরে অপূৰ্ব্বদা বলে না! সে হাসিমুখে টিপিয়া বলিল—পারবো না তিন মিনিটে—ঘোডায় জিন দিয়ে এলেন কিনা একেবারে ! অপু হাসিয়া বলিল—আর তো বেশীদিন না—আর তিনটি মাস তোমাদের জালাবো, তারপর চলে যাচ্চি— নিৰ্ম্মলার মুখ হইতে হাসি মিলাইয়া গেল। বিস্ময়ের স্বরে বলিল—কোথায় যাবেন! —তিন মাস পরেই এগ জামিন—দিয়েই চলে যাবে, কলকাতায় পড়বো পাশ হোলে— - নিৰ্ম্মলা এতদিন সম্ভবতঃ এটা ভাবিয়া দেখে নাই— বলিল—আর এখানে থাকবেন না ? অপু ঘাড় নাড়িল। খানিকট থামিয়া কৌতুকের স্বরে বলিল তুমি তো বঁাচে যে খাটুনি—তোমার তো ভাল—ওকি ? বারে—কি হোলো—শোন নিৰ্ম্মল!— হঠাৎ নিৰ্ম্মল উঠিয়া গেল কেন—চোখে কি কথায় তাহার এত জল আসিয়া পড়িল, বুঝিতে না পারিয়া সে মনে মনে অনুতপ্ত হইল। আপন মনে বলিল—আর ওকে ক্ষেপাবো ন—ভারী পাগল—আহা, ওকে সব সময় খোচা দিই—সোজ থেটেচে ও, যখন পা ভেঙে পড়ে ছিলাম পনেরে দিন ধ’রে জানতে দেয়নি যে, আমি নিজের বাড়ীতে নেই— ইহার মধ্যে আবার একদিন •ို আসিল। ডেপুটী বাবুর বাসাতে অপু উঠিয়া আসিবার পর সে কখনও আসে নাই। খানিকটা ইতস্তত: করিয়া বাসায় ঢুকিল। এক-প ধূলা, রুক্ষ চুল, হাতে পুটুলি । সে কোনো স্ববিধ খুজিতে আসে. নাই, এদিকে আসিলে অপুর সঙ্গে না দেখা করিয়া সে যাইতে পারে না। পটুর মুখে অনেক দিন পরে সে রাণুদির খবর পাইল। পাড়াগায়ের নিঃসহায়