পাতা:প্রবাসী (ত্রিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/২৯০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

কষ্টিপাথর - বাংলা গদ্যসাহিত্য ২৫৭ ২য় সংখ্যা ] আমলের গদ্যলেখকদের ভাষার মত কিন্তত কিমাকার নয়। জাতিমাত্রেরই মনের একটা বিশেষ গড়ন আছে, সুপের ভাষাও স্বভাবতঃ সেই ছাচেই ঢালাই হয় । অপর কোন ভাষার ছাচে কষ্টেস্বষ্টে ভাষাকে গড়তে গেলে, লিখিত ভাষার আকৃতি মনের প্রকৃতি থেকে সম্পূর্ণ আলগা হয়ে পড়ে।. সে বাই হোক, বিদ্যাসাগর এই ভাষাকে যতদূর সম্ভব সমন্বিত ও শ্রুতিমধুর করে তুলেছিলেন। এই পণ্ডিত বাঙল আদিতে যে কতদূর শ্ৰুতিকটু ছিল, নিম্নোক্ত উদাহরণ থেকেই আপনার নিজের কান দিয়ে ত। যাচাই করে নিতে পারবেন। মানে না বোঝা বাকু, কানে শুনতে মিষ্টি লাগলেই অনেক জিনিষ আমাদের কাছে গ্রাহ হয়, যেমন হিন্দি গান। একে দুৰ্ব্বোধ, তার উপর তালার কানের মাথা পায়, এহেন ওস্তাদী বাঙালীর কাছে অসঙ্গ-সঙ্গীতেও, সাহিত্যেও । পুরুষ পরীক্ষা" হতে ক’টি ছত্র নিয়ে উদ্ধত করে দিচ্ছি, তার থেকে সকলেই দেখতে পাবেন যে, পণ্ডিত মহাশয়দের হাতে পড়ে বাঙলা ভাষা কি অপরূপ মূৰ্ত্তি ধারণ করেছিল । "রাজা বড়াহ নদীতীরে নৰ্ত্তক বেতালের পাদক্ষিণলনযুক্ত এবং ভয়ঙ্কর ডাকিনীর ডমরুধানিসহিত ও সহস্র শিবার ঘোর রবিসংযুক্ত এবং রাক্ষসীর ক্রীড়াযুক্ত আর মৃকপালসহিত এয: চিতাঙ্গ রেকরণক বিচিত্রিত মহাভয়ানক শ্মশানস্থান প্রাপ্ত হইলেন।” অবস্থা এ বর্ণনার উদ্বেষ্ঠ পাঠকের মন ভয়ানক রসে অভিভূত করা, কিন্তু দুঃপের বিষয় এ বর্ণনা পড়ে আমাদের মন শুধু হাস্তরসে আপ্ল ত হয়। সে যাই হোক, বিদ্যালঙ্কার মহাশরের উক্ত রচনা যেমন কর্কশ, তেমনি ভাল-মান-লয়ে পঞ্চিত। এ গদ্য পাঠ করে কান ও মন দুই পীড়িত হয়, কারণ এতে ধ্বনির সঙ্গে ধ্বনি সংযুক্ত নয়, এবং শব্দের সহিত শব্দ অম্বিত নয় -এ হচ্ছে এক কথায় গণ্ডগোলের ভাষা, ডাকিনীর ডমরধ্বনি। এই বেয়াড়া ভাব। ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের হাতে পড়ে অনেকটা সায়েন্ত হয় । প্রথমতঃ তিনি সংস্কৃত শব্দ বে-পরোয় ভাবে বাঙালীর কানে ছুড়ে মারেন নি। শেয়াল অবঙ্গ বিদ্যালঙ্কার মহাশয়ের শ্মশানেও নেই, বিদ্যাসাগর মহাশয়ের দ্রাহ্মণবনেও নেই। তবে শিব তার হাতে পড়ে শৃগাল হয়ে উঠেছে, আর সে শুগাল দণ্ডায়মান থাকে দ্রাহ্মণবৃক্ষের নিম্নে, বাঙ্গলার শিশুদের এই শিক্ষাদান করবার গুপ্ত, যে ভ্রাক্ষণফলের নাগাল পাওয়া যায় না--"সে আঞ্চর থাট্ট হ্যায়।” ফলে বিদ্যাসাগর মহাশয়ের গদ্যের ধ্বনি উৎকটও नभ्रे, শ্ৰুতিকটুও নয়। বিদ্যালঙ্কার মহাশয়ের ভাষার তুলনায় বিদ্যাসাগরের ভাবাকে স্বললিত বলা যেতে পারে। এবং তার গদ্যের অন্বয় উচ্ছ স্থলও নয়, বিশৃঙ্খলও নয়। নীতার বনবাসের প্রথম ছত্রটির প্রতি দৃষ্টিপাত করুন । “রঘুকুলধুরন্ধর রাম রাজপদে প্রতিষ্ঠিত হুইয়৷ অপত্যনিৰ্ব্বিশেষে প্রজাপালন করিতে লাগিলেন।” এ বাক্যটির অন্বয় সহজ, অর্থ সরল, গতি সচ্ছন্দ। উপরন্তু এ গদ্যের অন্তরে ছন্দ আছে। গদ্যেরও ছন্দ আছে, কিন্তু সে ছন্দ ব্যক্ত নয়-- প্রচ্ছন্ন ; সে ছলোয় হিসেব লেখকও জানেন না, জানে শুধু তার কান। বিদ্যাসাগর মহাশয়ের গষ্ঠ স্বগঠিত, এবং স্থানে স্থানে শ্রুতিমধুর হলেও যে কায়েমি হয়নি, তার কারণ এ ভাষা কৃত্রিম, এ ভাষায় বাঙালী তার মনের কথা খুলে বলম্বে রে না। এ গদ্য যে বাঙালীর মনঃপুত হয়নি, তার প্রমাণ পরস্বত্তী লেখকের বাঙলা গদ্যের রূপান্তর ঘটালেন । বঙ্কিমচন্দ্রেয় ভাষাবিদ্যাসাগরী ভাষার সম্পূর্ণ উচ্ছেদ সাধন করলে। বালটা যে কি হ’ল, সংক্ষেপে তার পরিচয় দিতে চেষ্টা করব। কোম্পানী আমলের বাঙলা গদ্য সেকালের ব্রাহ্মণপণ্ডিতদের রচিত ーにー〉》 ভাষা। সিপাহী-বিদ্রোহের অবসানের সঙ্গে সঙ্গেই কোম্পানীর প্রভুত্বের অবসান, এবং সেই সঙ্গে বাঙলা ভাষার উপর ব্রাহ্মণ-পণ্ডিতদের প্রভুজেরও অবসান হল । আমাদের ভাষার উপর টোলের প্রভাব নষ্ট হল, এবং তার পরিবর্ভে নবপ্রতিষ্ঠিত কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রভীৰ স্বপ্রতিষ্ঠিত হ’ল। আমরা আজকাল যাকে সাধুভাষ বলি, সে ভাষার হষ্টি করেছেন ইংরাজীশিক্ষিত বঙ্গসাহিত্যিকেরা । এস্থলে বলা আবখ্যক যে, এই টুলো বাঙলার বিরুদ্ধে বঙ্গসাহিত্যে যে ইতিমধ্যে কোনও বিদ্রোহ হয়নি, তা নয়। টেকচাদ বাহাদুরের SSBBBB BB BBBS BBSBBB BBB BBS BB BBBDD নিদর্শন । হতোমের নক্স যে কম্মিস্কালেও সমাজে আদৃত হয়নি, তার কারণ ততোমের ভাষা নয়,-- তার নক্সার রূপ। উক্ত পুস্তকের দ্বিতীয় সংস্করণের গৌরচল্লিকায় লেখক বলেছেন যে, " কতকগুলি আনাড়িতে ব্লটান হতোমের নক্সা অতি কদৰ্য্য বই, কেবল পরনিন্দ। পরচর্চা, খেউড় ও পচালে ভর।” এ অপবাদ যে ষোল আন মিথ্যে, তা নয়। কিন্তু ভাষার দিক থেকে বিচার করতে হলে, স্থতোমের ভাষা যে জীবস্ত—শুধু জীবস্ত নয়, ধড়ফড়ে বাঙল,- সে কথা আমরা সকলেই স্বীকার করতে লtধ্য। তার ভাষা যে সেকালে প্রচলিত গদ্যের প্রতিবাদ, সে কথা তিনি নিজমুখেই বলেছেন। তিনি এই বলে তার গ্রন্থ আরম্ভ করেছেন যে, “বেওয়ারিস লুচির ময়দা বা তৈরী কাদা পেলে যেমন নিষ্কৰ্ম্ম৷ ছেলেমাত্রেই একটা না একটা পুতুল তৈরী করে পেল করে, তেমনি বেওয়ারিস বাঙালী ভাষাতে, অনেকে যা মনে যায় কচ্ছেন।” এ ভাষা পণ্ডিতী ভাষার উণ্টো ভাষা, একেবারে সংস্কৃতছুট ; সুতরাং বাঙলা গদ্য ঐ বামমার্গে অগ্রসর হল না । সংস্কৃত ভাষাকে বয়কট করে বাঙলায় গদ্য-সাহিত্য রচনা করা অসম্ভব।”...ইয়ারকি করতে হলেই কলকাতার dialect-য়ে লিখতে হবে, আর নীতিধৰ্ম্ম প্রভৃতির বিচার করতে হলে পণ্ডিতী ভাষায় লিখতে হবে,—সম্ভবতঃ এই ছিল তার ধারণা। এ দুয়ের মাঝামাঝি যে কোন ভাষা হতে পারে, যার প্রসাদে হাস্তরস, শাস্তরস, প্রভৃতি সব সমান প্রকাশ করা যেতে পারে, এ কথা বোধ হয় তিনি বিশ্বাস করতেন না। কালীপ্রসন্ন সিংহ ছিলেন প্রতিভাসম্পন্ন ‘আলালের ঘরের দুলাল । হতরাং কি জীবনে, কি সাহিত্যে, কোনও মধ্যপথ অবলম্বন করা তার ধাতে ছিল না । টেকচাদ আমার বিশ্বাস এই মধ্যপথের প্রথম প্রদর্শক। তথাকথিত আলালী ভাষার, সাহিত্যে সুনাম নেই, তার কারণ ‘ক্সালালের ঘরের দুলালে’র সঙ্গে অধিকাংশ পাঠকের পরিচয় নেই ; যদি থাকৃত ত তারা দেখতে পেতেন যে, আজকালকার সাধুভাষীর সঙ্গে অালালী ভাষার বিশেষ কোনও প্রভেদ নেই। ‘অtলালের ঘরের দুলাল’ নভেল হিসাবে প্রথম শ্রেণীর গ্রন্থ নয়। প্যারীচাঁদ মিত্রের বিদ্যা ছিল, বুদ্ধি ছিল, নীতিজ্ঞান ছিল, রচিজ্ঞান ছিল—ছিল না তার শুধু প্রতিভা। তাই ভার গদ্য পর যুগের আদর্শ গষ্ঠ হয়ে ওঠেনি। বঙ্কিমচন্দ্রের প্রতিভার আলোক টেকচাদের রচনাকে একেবারে স্নান করে দিলে । “আলালের ঘরের দুলাল” যখন প্রথম প্রকাশিত হয়, তখন বন্থ পাঠক মুক্তকণ্ঠে বইখানির অতি প্রশংসা করেন । এই অমুকুল সমালোচকদের মধ্যে স্বয়ং বঙ্কিমচন্দ্র ছিলেন অস্ততম । এরা সকলেই ইংরাজী-শিক্ষিত, তার প্রমাণ অনেকেই ইংরাজী ভাবায় গদ্যের একটা হগঠিত ও সহজ স্বন্দর রূপ আছে যার অনুকরণে যাঙলা গদ্য লেথা যায়—অপরপক্ষে সংস্কৃত গদ্যের অনুসরণ করা বাঙলা গদ্যের পক্ষে অসম্ভব ।