পাতা:প্রবাসী (ত্রিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/২৯১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

sのb" আমার মতে বাণভট্টের কাদম্বীর সংস্কৃত গষ্ঠকাব্যের মধ্যে সৰ্ব্বশ্রেষ্ঠ গ্ৰন্থ, কিন্তু তাই বলে কোন বাঙালী লেখক একাত্ত মতিচ্ছন্ন না হলে বাঙলা ভাষায় কাদম্বরী রচনা করতে বসে যাবেন না । ও কাব্য বড়-জোর অনুবাদ করা যায়, এবং তা করাও হয়েছে। তারাশঙ্করের কাদম্বরী সংস্কৃতজ্ঞ বাঙালীর নিকট অতি স্বপাঠ্য গ্রন্থ । কিন্তু তার ভাব। বাঙলা নয়—বিভক্তি-মুক্ত সংস্কৃত । এ অনুবাদে সংস্কৃত ভাষার বিশেষ্য বিশেষণ সব স্বরূপে বিরাজ করেছে—যা কিছু বদল হয়েছে, সে সৰ্ব্বনামে ও অব্যয়ে । কাদম্বীতে ক্রিয়ার বড়-একটা বালাই নেই ; কুতরাং ক্রিয়ার বিভক্তির বাঙলা রূপ পাঠকের বড় একটা চোখে পড়ে না। তারাশঙ্করের কাদম্বীই বোধ হয় পণ্ডিত বাঙলার চরম কীৰ্ত্তি । ইংরাজী-শিখিত সম্প্রদায় যে এ ভাষার কবল থেকে বাঙলাকে মুক্ত করবার জন্ত ব্যাকুল হয়ে উঠেছিল, সে কথা বলাই বাহুল্য। তারাশঙ্করের কাদম্বরীর পর "আলালের ঘরের দুলালের” সাক্ষাৎ পেয়ে সকলে হাক ছেড়ে বাঁচল। সাহিত্য যে ধর্মের শুপমাত্র নয় –কিন্তু প্রাণের কথা, আর সে কথা যে বিশেষ করে জীবন্ত ভাষাতেই বলা যায়, এর পরিচয় পেয়ে বাঙালী পাঠক মুক্তির জানন্দ অনুভব করেছিলেন। কিন্তু এ সম্প্রদায়ের মধ্যে বঙ্কিমচন্দ্র ছিলেন শুধু পাঠক নয়—লেখক, উপরন্তু ইংরাজী নয়, বাঙলা লেখক । সুতরাং এক্ষেত্রে বঙ্কিমচত্রের মতের একটু বিশিষ্টতা আছে। বাঙলা গদ্যকে কোন পথে অগ্রসর করতে হবে, সে বিষয়ে ঠাকে মনস্থির করতে হয়েছিল । তিনি সংস্কৃত ও বাঙলার ভিতর মধ্যপথষ্ট কুপথ বলে প্রচার করলেন, এবং নিজেও সেই পথ অবলম্বন করেন । অামি পূৰ্ব্বে বলেছি যে, টেকটাই হতোমী ভাষা ও পণ্ডিত ভাষার মধ্যপথ প্রথমে আবিষ্কার করেন । বঙ্কিমচন্দ্রের মধ্যপথ কিন্তু সে পথ নয় । তিনি ষে পথ দেখিয়েছেন, সে পথ হচ্ছে ভারাশঙ্করের কাদম্বর ও টেকটাদের মালালের ভিতর মধ্যপথ । কারণ তিনি চেয়েছিলেন, বাঙলা গদ্যকে একাধারে সহজ ও স্বন্দর করতে। ধ্বনির গৌরবে ও শব্দের ঐশ্বর্ঘ্যে সংস্কৃত ভাষা অতুলনীয়, সুতরাং বাঙলা ভাষাকে সৌন্দর্য্যমণ্ডিত করতে হলে, সে সৌন্দৰ্য্য যে সংস্কৃতের কাছে ধার করতে হবে, এই ছিল উীর ধারণা। পণ্ডিত মহাশয়ের সংস্কৃতকে বাঙলা করতে চেয়েছিলেন, অপরপক্ষে বঙ্কিমচন্দ্র বাঙলাকে সংস্কৃত করতে চেয়েছিলেন । ফলে তার প্রথম বয়সের লেখা অনাবশ্যক সংস্কৃতবছল। দুর্গেশনন্দিনীর গায়ে আলো কখনও পড়ে না, দীপরশ্মি প্রপতিত হয়। অপরপক্ষে দেবী চৌধুরাণীর মুখে আলো পড়ে, দীপরশ্মি প্রপতিত হয় না। অর্থাৎ ভাষাকে স্বাক্ষর করতে হলে যে তাকে কৃত্রিম করতে হবে, আর সহজ ভাষা যে সুন্দর হয় না, এ ভুল ধারণ হতে তিনি নিজেই মুক্তিলাভ করেছিলেন। দেবী চৌধুরাণীর ভাষা দুর্গেশনন্দিনীর তুলনায় ঢের বেশী *्मनः । - উনবিংশ শতাব্দীর বঙ্গ-সাহিত্যের সঙ্গে আমার যে স্বল্প পরিচয় আছে, তার থেকে আমার মনে এ ধারণ জন্মেছে যে, বাঙলা গদ্যের স্বাক্টকৰ্ত্তার, অর্থাৎ পণ্ডিত মহাশয়ের, সংস্কৃত ভাষাকে বাঙলা করতে চেয়েছিলেন—উক্ত ভাষাকে সংস্কৃত ব্যাকরণের বন্ধন থেকে মুক্ত করে। ফলে তাদের হাতে পড়ে সংস্কৃত ভাষা শুধু এলো হয়ে পড়েছিল, योंgव्णी श्ध्ननि । - তার পরে টোলের নয়, বিশ্ব-বিদ্যালয়ের B, A., M, A-র বাঙলাকে সংস্কৃত করতে চেষ্টা করেছিলেম-বাঙলার অন্তরে সংস্কৃত অভিধামের খাদ মিশিয়ে। ফলে এ ভাব হয়ে উঠেছে, শুদ্ধ ভাষা নয়, সাধুভাষ। এর বাঙলার গৌরব বৃদ্ধি করতে গিয়ে, করেছেন শুধু তাকে গুরুভার। SAASAASAASAASAASAASAASAASAASAASAAAS প্রবাসী—জ্যৈষ্ঠ, ృ999 [ ৩০শ ভাগ, ১ম খণ্ড - --محمیہ مے-ایس۔ আমাদের ভাষা এইরূপে গুরুভারাক্রান্ত হয়ে তার সহজ ও সচ্ছনা গতি হারিয়ে বসেছিল। বঙ্কিমচন্দ্র বোধ হয় কোন নদীর বর্ণনা করতে বলেছেন যে, তার জল—“হাসিতেছিল, চলিতেছিল, চলিতে চলিতে হাসিতেছিল, হাসিতে হাদিতে চলিতেছিল।” কিন্তু সাধুভাষার স্রোত নেই, সে ভাষা হাসিতে হাদিতে চলেও না, চলিতে চলিতে হাসেও না। আমি এ প্রবন্ধে রামমোহন রায়ের গদ্যের কোন নমুনা দিইনি। এর কারণ, তিনি "অভিনব প্রজ্ঞাবিশিষ্ট" বালকদের শিক্ষা দান করবার জন্তও লেখনী ধারণ করেননি, “কামকলাকৌতুকাবিষ্ট” পুরীগণকে আনন্দ দান করবার জন্তও কাব্য রচনা করেননি । তিনি করেছিলেন সামাজিক লোকের সঙ্গে শাস্ত্রবিচার। ফলে তিনি সংস্কৃতকেও বাঙলা করতে চাননি, বাঙলাকেও সংস্কৃত করতে চাননি। তার ভাল। দর্শনের ভাষা । সে ভাষা যে আমাদের কানে একটু কটমট ঠেকে, সে অনেকটা র্তার ব্যবহৃত দার্শনিক পারিভাষিক শব্দের দরুণ । প্রকরণভঙ্গ, অনবস্থাদোষ, বিনিগমনারহিত প্রভৃতি শব্দের সঙ্গে আমাদের পরিচর নেই। কিন্তু বাঙালী জাতি ঘথম রীতিমত দর্শনের চর্চা কুরু করবে, তখন হয়ত তারা আবিষ্কার করবে বে, উক্ত পারিভাষিক শব্দসকল বাদ দিয়ে দর্শন চর্চা করা যায় না । বিদ্যাসাগর যখন বিধবা-বিবাহের আলোচনা করেন, তখন তিনি এই ভাবামার্গই অবলম্বন করেন। আর একটি কথা বলেই এ প্রবন্ধের উপসংহার করব । বাঙলা সাহিত্যের পুর্ণ অভিব্যক্তির পথে বাধা পণ্ডিত ভাষাও নয়, সাধু ভাষাও নয়, তথাকথিত বীরবল ভাষাও নয়। পণ্ডিত ভাষা যেমন কালক্রমে সাধুভাষায় পরিণত হয়েছে, সাধুভাষাও যে কালক্রমে তেমনি বাঙলা ভাষায় পরিণত হবে, এতে আর আশ্চৰ্য্য কি ? মাতৃভাষার দিকে আমরা আরও একটু এগিয়ে এসেছি—এই ত ব্যাপার। Evolutionএর ফলে ভাষা যখন নুতন রূপ ধারণ করে, পুৰ্ব্ব সাহিত্যিক ভাষার নানা গুণ অঙ্গীকার করেই তা নব কলেবর ধারণ করে । হাৰ্বাট স্পেন্সর বলেছেন যে, জগতের অভিব্যক্তির ক্রম হচ্ছে from the simple to the complex ; fez atstāj (R-TE "TË CI, NÎR REJSŤg 3FR, SEFF ("Kā from the COmplox to thC simple স্বতরাং আধুনিক গদ্যের simplicity যে তার অবনতির লক্ষণ, এ কথা কিছুতেই বলা যায় না। বীরবলী ভাষার উপর যে আক্রমণ হয়েছে, সে সম্বন্ধে এই মাত্র বলতে চাই যে, সে আক্রমণ সম্পূর্ণ লক্ষ্যভ্রষ্ট। কারণ বীরবলী ভাষা বলে কোনও বিশেষ ভাষা নেই, যা আছে, সে হচ্ছে কথা কইবার একটা বিশেষ ভঙ্গী। এ ভঙ্গীর মুলে আছে বীরবলের মন, মুখ নয়। বঙ্গসাহিত্যের উন্নতির প্রধান অস্তরায় হচ্ছে, ইংরেজী বলবার ও লেপবার নেশা। সরকারী ও দরবারা ভাষায় অনর্গল কপচানোর লোভ যে কি পৰ্য্যন্ত দুৰ্দ্ধমনীয়, তা আমি সম্পূর্ণ জানি। যে-কেউ যেনতেনপ্রকারেণ ইংরাজী মুখস্থ বুলি আউড়ে গেলেই তিনি দেশে বক্তা হিসাবে, চিন্তাশীল হিসাবে, দেশভক্ত হিসাবে গণ্য ও মাস্ত হন ; অপর পক্ষে, নিজের মধের কথা নিজের মুখের ভাষায় যিনি ব্যক্ত করেন, শিক্ষিত সমাজ তাকে উপেক্ষা করেন । মনোজগতে এই দাস-মনোভাৰ আমাদেব মন হতে যতদিন না দূর হচ্ছে, ততদিন দেশবাসীর অবজ্ঞা শিরোধাৰ্য্য করেই আমাদের বাঙলা সাহিত্য রচনা করতে হবে । কারণ বঙ্গ সাহিত্যের চর্চা করেই বাঙালী তার মনের স্বরাজ্য লাভ করবে । * o মাধবী, ফান্ধন, ১৩৩৬ ঐপ্রমথ চৌধুরী