পাতা:প্রবাসী (ত্রিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৩৬৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

৩য় সংখ্যা ] নাই, কাৰ্য্যে বিশৃঙ্খলারও অভিযোগ নাই। জিনিষ আসিতেছে প্রচুর—খরচ হইতেছে অজস্র এবং অপচয় হইতেছে তাহার চতুগুণ। বৃহৎ বটবৃক্ষের অসংখ্য শাখায় শুধু রাত্রিযাপনের মানসে নানা দিগদেশ হইতে দলে দলে পক্ষী আসিয়া আশ্রয় লইয়াছে ; কলরব উঠিয়াছে বিচিত্র। ইহাকে আনন্দ বলিতে চাও-বল, জীবনের সাধ-আকাঙ্ক্ষার পরিতৃপ্তি বলিতে চাও— আপত্তি নাই, কিন্তু দোহাই—কামনার শ্রেষ্ঠত্ব যেন আরোপ করিয়া বসিও না। আত্মীয়তার দোহাই দিয়া এত বড় আত্ম-প্রতারণা জগতে আর আছে কি ন৷ সন্দেহ ! বরণের সময় কুল, ডাল, শ্ৰী কিছুই মিলিল না। বেলার মা অসহায়ুনেত্রে সমাগত জনমণ্ডলীর পানে চাহিলেন । - মেজদিদি বলিলেন,—আ! আমার কপাল ! বড়দি যে জোগাড় করেছিলেন সব । এসে দেখি । বহুকষ্টে বড়দিদির সন্ধান মিলিল ৷ বাটীর প্রাস্ত সীমায় তিনি এক বৃহৎ হলে কুড়ি-পচিশটি কুটুম্বিনীর মধ্যস্থলে বসিয়া চোখমুখ ঘুরাইয়া কি বলিতেছিলেন, আর সমাগত মহিলারা উচ্ছসিত হাসির বেগে পরস্পরের স্বন্ধে ঢলিয়া পড়িয়া কক্ষ বিদীর্ণ করিয়া সেই রস উপভোগ করিতেছিলেন। মেজভাইয়ের স্ত্রী রেণুকার কৌতুহলটাই কিছু বেশী। সে হাসিতে হাসিতে বলিল,—তারপর বড়দি, কচুরি খেয়ে চাষা কি বল্লে ? - বড়দি গম্ভীর হইয়া কহিলেন,—চাষা অনেকক্ষণ ভেবেচিন্তে চাষানীর কাছে এসে বল্লে, হা দ্যাথ, নেপলার মা, বামুনবাড়ী যা খেয়ে এলাম তার তুলনা নেই। কি ক’রে এমন ধারা করে লো বল দিকি ? চাষানী অনেক ভেবেচিন্তে বল্লে, বোধ হয় কলুই আর গম একসাথে বুনেছেল! সকলে খিলখিল করিয়া হাসিয়া উঠিল। মেজদিদির আর কুলাডালার কথা জিজ্ঞাসা করা হইল না। হাসিতে হাসিতে বড়দিদির কাছে বসিয়া পড়িয়া বলিলেন,-সেই থাকমণির মোহনভোগের গল্পটা বড়দি । কুঞ্জটিকা ও কিরণ 09) বড়দিদি তৃপ্তির হাসি হাসিয়া বলিগেন,-আর পারি না বাপু ! এইমাত্তর সে গল্প হ’য়ে গেল । মেজদিদি অনুনয় করিলেন,—তা হোক আর একবার। দোহাই তোমার লক্ষ্মীটি । বড়দিদি বলিলেন,—গলা যে শুকিয়ে কাঠ হ’য়ে গেল । ওলে ছাড় এখন। বর এসেছে—একবার দেখিগে— মেজদিদি বলিলেন, যে ভিড় সেখানে,—কোথায় যাবে ? তার চেয়ে গল্প বল, শুনি । । বড়দিদি আরম্ভ করিলেন,— কৈবত্তদের মেয়ে থাকমণি অল্প বয়সে বিধবা হয় । সংসারে তার বুড়ে মা ছাড়া আর কেউ ছিল না। হাতে কিছু নগদ টাকা ছিল, আর দুঃখ-ধান্ধ করে দিন চালাতো। একদিন একাদশীতে আমার কাছে এসে বল্লে, আর শুনেছ দিদি ঠাকুরুণ, কাল দণ্ডমীতে কি অমত্তই খেলাম—আহা! যেন স্বগগের স্বধী ! জিজ্ঞাসা করলুম, কি’লা, কি খেয়েছিলি ? থাকোর চোখ দুটো চক্ চকু করে উঠলো, জিভট। অল্প একটু বেরিয়ে এলে,—মুখে একটা শব্দ ক’রে বল্লে, অমত্ত গে৷ দিদিঠাকুরুণ অমত্ত। তোমাদের বুড়ে গিরি বলেছেলে—আসছে দণ্ডমীতে ক’রে খাস থাকে৷ ! আহ!— কি খেলাম—কি খেলাম ! —যতই জিজ্ঞাসা করি, কি ? থাকো ততই গুণ-বর্ণনায় পঞ্চমুখ ; নামটি আর কিছুতেই মুখে আনে না। শেষে রাগ ক’রে বল্লুম, এক ঘণ্টা ধ’রে তো কেবল কি খেলুম— কি খেলুমই কচ্ছিস ; যদি নামটা বলতিস তে আমরাও না হয় একটু পরখ ক’রে দেখতুম! যাই বলা—অমূনি থাক তাড়াতাড়ি বল্লে, মোহনভোগ গে দিদিঠাকুরুণ— মোহনভোগ। খেতে রাজভোগ, অল্প পয়সায় বড়মাতুষী খোরাক। মাথা খাও,—আর-দশুমীতে ক’রে থেও। অবাক হ’য়ে বল্লুম, মোহনভোগ কি লা থাকি ? সে আবার কেমন ক’রে করতে হয় ? থাক জে কে বসে বল্পে,—তবে শোন দিদি ঠাকরুণ। এক পয়সার স্বজি, এক পয়সার ঘি আর আধ পয়সার চিনি বাজার থেকে কিনে নিয়ে এসে মাকে বল্লাম, উচুন জাল। দাউ দাউ ক’রে উকুন জলে উঠলো। বল্লাম, চাপা