পাতা:প্রবাসী (ত্রিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৫৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ভাইফোট । ঐসীতা দেবী কলিকাতার গলির ভিতর ছোট একটি বাড়ী। একতলায় এক ঘর ভাড়াটে, দোতালায় আর এক ঘর। দোতলাবাসীর নীচের মানুষ কয়টিকে অবজ্ঞার চোখে দেখে, অনুগ্রহ করিয়া মাঝে মাঝে কথা বলে, বেশীর ভাগ সময়ই দেখিতে ন পাইবার ভাণ করিয়া পাশ কাটাইয়া চলিয়া যায়। একতলায় দুইখান ছোট ছোট থাকিবার ঘর, একটা তাহার চেয়েও ছোট রান্নাঘর। রান্নাঘরে বসিয়া একটি তরুণী বালি জাল দিতেছে, তাহার পাশে একটা বাসিতে বেগুন, মূল, ডাটা কোটা রহিয়াছে, অল্প দূরে কুলায় চাল ঝাড়া রহিয়াছে। শুইবার ঘর হইতে কাতরকণ্ঠে ডাক আসিল, “ম, তোমার আর কত দেরি? আমার বড় গিদে পেয়েছে ?” - ۴ ، ۶ ۶؟“icتخني. তরুণী সাস্তুনার সুরে বলিল, “এই যে বাবা হয়ে গিয়েছে, আর দুমিনিটের মধ্যে পাবে।” তাহার পর অক্ষুটম্বরে বলিল, “রোগ ছেলেটাকে এক ঝিল্পক দুধ দেবার ক্ষমতা নেই, এই জল খেয়ে মাচুষে বঁাচে ? কি যে কপাল করে এসেছিল ।” এমন সময় বছর দশ এগারোর একটি মেয়ে ঘরে ঢুকিয়া বলিল, “ম, কুট ভয়ানক চেঁচাচ্ছে, শীগগির তার বালি দাও । আমারও বড় খিদে পেয়েছে,কিছু কি আছে ?” মা বলিল, “দেখ মুড়ির টিনটা খুলে, যদি একমুঠো থাকে। এইক'টা আট ছিল, দুখানা রুটি গড়ে রেখেছি, তোর বাবার জন্যে, নইলে এসে আমার মাথা খেয়ে ফেলবে। মুটুর বালি হয়ে গেছে, আমি নিয়ে যাচ্ছি।” মেয়ে একটা বিস্কুটের টিন খুলিয়া দেখিল, তলায় মুঠাখানিক পড়িয়া আছে, সেইটাই সে এনামেলের একটা বাটিতে ঝাড়িয়া বাহির করিয়া লইল। মাকে জজ্ঞাসা করিল, “গুড় আছে নাকি মা ?” মা বলিল, “আছে অল্প একটুখানি। সে তুই নিনে, তোর বাবার জন্যে রাখ। এই কাচা লঙ্কাট নে, ওখানে বাটিতে তেল আছে, তাই মেখে থা।” মা, ছেলে, মেয়ে, সকলেই জানে বাপের থাইবার দাবী সর্বাগ্রে, কারণ তিনি রোজগার করিয়া আনেন। এ লইয় তাহারা কোনো গোলমাল করে না। অদৃষ্টে যাহা জোটে তাহাই খায়, একেবারেই কিছু না পাইলে মৃঢ় কাদে, তাহার দিদি কুন্তী মায়ের দুঃখ একটু বেশী বোঝে, সে স্নানমুখে চুপ করিয়া থাকে। মা শশিমুখী, সমস্তদিন খাটে, রুগ্ন ছেলের সেবা করে, খিটখিটে মেজাজের স্বামীর বকুনি খায়, মাঝে মাঝে দুচার কথা শুনাইয়াও দেয়, বেশীর ভাগ সময় পারিবারিক শান্তিরক্ষার খাতিরে চুপ কুরিয়া থাকে। বালি নামাইয়া একটা কাসার বাটিতে ঢালিতে টালিতে শশিমুখী বলিল, “ওরে চিনির টিনট একটু এদিকে দে ত। আর তরকারীর ঝুড়িতে দেখ ত লেবু একটুও আছে নাকি ?” মেয়ে বলিল, “কোথায় আবার লেবু ? সকালেই ত নিঙড়ে দিলে যেটুকু ছিল।” বালিতে চিনি মিশাইয়৷ ম| উঠিয়া দাড়াইল । নিজের অজ্ঞাতেই যেন তাহার একটা দীর্ঘনিঃশ্বাস বাহির হইয়া পড়িল । বালির বাটি লইয়া সে শুইবার ঘরের দিকে চলিল। যাইবার সময় মেয়েকে বলিয়া গেল, “দেখ তোর খাওয়া হয়ে গেলে, চাল কটা ধুয়ে ভাতটা চড়িয়ে দিস্ত। আমি কুটুকে খাইয়ে, ঘরবাট দিয়ে একেবারে আসব। ওঁর ত আসবার সময় হয়ে এল, বেলা পড়ে এসেছে ” কুন্তী মুড়ি থাইতে খাইতে সম্মতিসূচক ঘাড় নাড়িল, এই বয়সেই সে ছোট-বড় নানা কাজে মাকে সাহায্য করে, নইলে মা একলা হাতে এত কাজ পারিয়া উঠে না । মুটুর অসুখ