পাতা:প্রবাসী (ত্রিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৬৭২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

৪র্থ সংখ্যা ] থাকে, এমন নয়। অনেকস্থলে রোজগার অনেকেই করে । তাহাদের মধ্যে সরকারী চাকর্যে থাকিতে পারে, স্বাধীন ব্যবসায়ীও থাকিতে পারে। এরূপ ক্ষেত্রে কেহ কাহারও উপর নির্ভর করে না, কেহ কাহারও গলগ্রহ নহে । সুতরাং একজন যদি সরকারী চাকর্যে হন, তাহা হইলে সরকার কি অন্তদের মত ও কাজের জন্য র্তাহাকে দায়ী করিবেন ? তাহ খুব অদ্ভূত বিচার হইলেও বিপন্ন গবন্মেন্টের পক্ষে অসম্ভব হইবে না। আর যদি কেহ কেহ বাস্তবিকই আরোজগারী হন, তাহা হইলেও কি গবন্মেণ্ট তাহদেরও স্বাধীনতা ক্রয় করিয়াছেন ? বেতন ত দেন একজনকে, অথচ স্বাধীনত কিনিতে চান অনেকের । এটা অত্যন্ত বেশী দরকষাকষি নয় কি ? অবশ্য এক্ষেত্রে ক্রেতাবিক্রেতার মধ্যে (স্বাধীনতা- ) ক্রেতা সরকার ক্ষমতাশালী প্রভু বটে ; কিন্তু ক্ষমতার সব রকম প্রয়োগ সফল হয় না । বুদ্ধ পিতামাতাকে পালন অনেক সরকারী চাকরোকে করিতে হয়। পুত্রেরা তাহদের প্রতি প্রভূত্ব বা অভিভাবকত্ব করিতে গেলে তাহ হিন্দু ভাব, প্রথা ও নীতির বিরুদ্ধ হইবে । পুত্র পিতামাতাকে পালন করিতে বাধ্য, আমরা হিন্দুরা ইহাই বিশ্বাস করি। এই পালনব্যয়ের বিনিময়ে তাহদের ব্যক্তিগত স্বাধীনতা কিনিয়া লইলাম, এরূপ যে মনে করে সে স্থপুত্র নয়, হিন্দুও নয়। ভাৰ্য্যাকে পালন করিতে পতি বাধ্য, কিন্তু পতি কেমন করিয়া পালন করিবেন তাহা তিনি ভাবিবেন, পত্নীর স্বাধীনতার মূল্য পালনব্যয়, ইহা স্থপতি মনে করিতে পারেন না ; পত্নীও মনে করিতে বাধ্য নহেন। যে রত্নাকর পরে মহর্ষি বাল্মীকি হইয়াছিলেন, র্তাহীকে তাহার পিতা মাত ও ভাৰ্য্যা যাহা বলিয়াছিলেন, কৃত্তিবাসী রামায়ণের গোড়ার কয়েকটা পৃষ্ঠায় তাহ পড়িলে এই বিষয়ে হিন্দুধারণা কি তাহা স্পষ্ট বুঝ যাইবে । অবশ্ব, সরকারী কৰ্ম্মচারীরা এক এক জন আস্ত রত্নাকর বা এক এক জন হবু বাল্মীকি, এরূপ কিছু বলিয়৷ বা ইঙ্গিত করিয়া আমরা তাহাদিগকে অপমানিত বা সম্মানিত করিতে চাই না । প্রাপ্তবয়স্ক স্বাধীনচেতা পুত্র পুত্রী, ভ্রাতু-পুত্র ভ্রাতুপুত্রী প্রভৃতির স্বনিপুণ ও সফলকাম কারাধ্যক্ষ হইতে সরকারী চাকর্যেরা সকল স্থলে পরিবেন কিনা, সন্দেহ । অনেক স্থলে অস্তবিদ্রোহ, গৃহবিচ্ছেদ ও গৃহত্যাগ ঘটিতে পারে। ভাৰ্য্য। যদি বিদ্রোহিনী হন, তাহা হইলে চাকর্যে মহাশয় কি করিবেন ? ব্রিটিশ আদালতে মানিত হিন্দু আইনে ডিভোস নাই । যদি সরকারী স্বামী ও ‘বেসরকারী স্ত্রীতে রাজনৈতিক মত ও আচরণে প্রভেদ ঘটে, তাহ হইলে ঐ স্বামী ঐ স্ত্রীকে খোংপোষ দিতে বাধ্য থাকিবেন বিবিধ প্রসঙ্গ—“চলন্তিকা” అ5) না, গবন্মেণ্ট এরূপ আইন করিবেন কি ? কিন্তু যদি . স্ত্রীও রোজগারী হন, তাহা হইলে তিনি কি ডিপেণ্ডেণ্ট বা ‘গলগ্রহ’ বিবেচিত হইবেন ? এবং তিনি পিকেটিং করিলে স্বামীর চাকরী যাইবে কি ? হপকিন্স সাহেব যেমন সাকুলার জারী করিয়াছেন, বঙ্গবিভাগের বিরুদ্ধে আন্দোলনের যুগেও সেইরূপ একটা আদেশ সরকারী কৰ্ম্মচারীরা পাইয়াছিলেন । তাহ উপলক্ষ্য করিয়া খ্ৰীযুক্ত প্রভাতকুমার মুখোপাধ্যায় তেইশ বৎসর পূর্বে ১৩১৪ সালের ভদ্রের প্রবাসীতে “খালাস” শীর্ষক একটি পরিহাসাত্মক গল্প লিখিয়াছিলেন । তাহা প্রবাসীর বর্তমান সংখ্যায় পুনমুদ্রিত হইল । ভারতবর্ষে নানা রকম শ্রেণীভেদ থাকায় স্বরাজ লাভের এবং অন্ত নানাদিকে উন্নতি করিবার বাধা হইয়াছে। এখন আর একটি বাধা স্বই হইতে চলিল । সরকারী লোক ও বেসরকারী লোক, এই পংক্তিভেদ আগে হইতেই আছে। এখন সরকারী চাকর্যেদের বাড়ীর ছেলেমেয়েদের এবং পুব্লাঙ্গনা ও বৃদ্ধদের বেসরকারী লোকদের বাড়ীর ঐক্কপ ব্যাক্তদের সঙ্গে সামাজিক মেলামেশা করিতে হইলেও পরস্পরের রাজনৈতিক মতামত ও চালচলন জানিয়| লওয়া নিরাপদ হইবে। কথিত আছে, ইংরেজরা জাতিভেদ মানে না ; কিন্তু যদি—অবখ আমাদেরই গ্রহবৈগুণ্যে-নূতন জাতিভেদের হষ্টি হয়, তাহা হইলে তাহাদের বেশী আপত্তি হইবে কি ? বৰ্ত্তমান ১৯৩০ সালে যে সাতটি অডিন্যান্স জারী হইয়াছে, তাহার একটিতে আছে, যে, কেহ কোন সরকারী কৰ্ম্মচারীকে চাকরী ছাড়িয়া দিবার জন্য অমুরোধ উপরোধ উত্ত্যক্ত আদি করিলে তাহার শাস্তি হইবে। আলোচ্য সাকুলারটি পড়িয়া একজন সরকারী চাকর্যেরও চিত্তবিক্ষোভ জন্মিবে না, বোধ হয় না। অতএব, আমাদের বিবেচনায়, সাকুলারটি আরও অধিক মুনশিয়ানার সহিত লিখিত হইলে ভাল হইত। একেবারে লিখিত ও মুদ্রিত না হইলে ত খুবই ভাল হইত। কিন্তু পূর্ণতার দিকে ক্রমশঃ অগ্রগামী এই জগতে পূরা ভাল ত কিছু পাওয়া যায় না—এমন কি ব্রিটিশ রাজত্বেও না । স্বতরাং হঠাৎ পূর্ণতার আকাক্ষ না-করা স্ববুদ্ধির পরিচায়ক “চলন্তিক 33 শ্ৰীযুক্ত রাজশেখর বস্ব মানবচরিত্রজ্ঞ ও স্বরসিক গল্পলেখক বলিয়া ছদ্মনামে পরিচিত। বেঙ্গল কেমিক্যালের তৈরি কতকগুলি জিনিষের নামকরণ তিনি -} :