পাতা:প্রবাসী (ত্রিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৬৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

১ম সংখ্যা ] আধুনিক মনােবিজ্ঞান 8ፃ কিংবা সেই সেই সমীক্ষিত বা পরীক্ষিত তথ্য হইতে মৌলিক স্বত্র ও পরিকল্পনা (concept) উপপত্তি করিবার সময়,--নিরপেক্ষতা ও নিরাসক্তি রক্ষার জন্য অতিশয় সাবধান হইতে হয়। আধুনিক বিজ্ঞানে এই নিরপেক্ষ ভাব কিরূপে রক্ষিত হয়, তাহার বিষয়ে দু-একটি কথা বলা দরকার। ১ । কোন বিদ্যার বা অলোচনার আরম্ভে সংজ্ঞানিরূপণ আবশ্যক। এই সংজ্ঞ প্রকৃতপক্ষে কোন বিষয়ে পূৰ্ব্ব হইতে স্থিরীকৃত পরিকল্পনা ভিন্ন আর কিছুই নয়। এই সংজ্ঞ নিরূপণের সময়ে বিশেষ সতর্ক হওয়া দরকার, কারণ তাহার দ্বারা যদি আমরা আলোচ্য বিষয়ের মূল স্বরূপ সম্বন্ধে এরূপ পরিকল্পনা করিয়া বসি, যাহাতে যথাযথ বৈজ্ঞানিক অমুসন্ধানের ও বিচারের বিঘ্ন হয় কিংব। যাহাতে অহসন্ধেয় তথ্য পূৰ্ব্ব হইতে পরোক্ষভাবে স্বীকার করিয়া লওয়া হয়, তাহ হইলে বিজ্ঞানের বিশেষত্ব নষ্ট হয় এবং সেই সংজ্ঞার রূ অনুসন্ধান ভ্ৰমাত্মক ও নিরর্থক হইয়া পড়ে । দার্শনিক মনোবিদের মনের সংজ্ঞ ইহার একটি উদাহরণ । মন অধ্যাত্ম সত্ত্বা—সংবিতেই (consciousness) তাহার প্রকৃত প্রকাশ। সমীক্ষার বিযয়ীভূত যে মন তাহা তাহার প্রকাশিত বৃত্তি। এই সংজ্ঞার বিরুদ্ধে মনোবৈজ্ঞানিকের আপত্তি আছে। সংজ্ঞার মধ্যে পরিকল্পনা আছে বলিয়া আপত্তি নয়—পরিকল্পনাটি দুষ্ট বলিয়াই আপত্তি। ইহা বৈজ্ঞানিক প্রণালী ও উদ্বেপ্তের পরিপন্থী । প্রথমতঃ, এই সংজ্ঞার ফলে মনোবিজ্ঞানের কেন্দ্র সঙ্কীর্ণ হইয় পড়ে। সাধারণ জ্ঞানে ও স্পষ্টতই যে সমস্ত বিষয় মনোবিদ্যার অন্তর্গত হওয়া উচিত তাহা বাদ পড়ে। যিনি মনের বিভিন্নমুখী কাৰ্য্য লক্ষ্য করিয়াছেন তিনি জানেন যে, সব সময় মনের ক্রিয়া চেতনায় সীমাবদ্ধ নয়—সংবেশন-বিদ্যা (Hypnotism), উমাদাদি (Hysteria) মনোগত বিকার ও চিরাভ্যস্ত ক্রিয় প্রভূতি হইতে নিজ্ঞর্ণন মনের (unconscious) ক্রিয়া সহজেই প্রতীয়মান হয়। আধুনিক মনোবিদ্যার মনের সংজ্ঞা খুব ব্যাপক। সংজ্ঞান ও নিজ্ঞান মনের ক্রিয়া এই সংজ্ঞায় স্থান পাইয়াছে। দ্বিতীয়ত, মনের অধ্যাত্ম সংজ্ঞা বিজ্ঞানের মূল স্বতঃসিদ্ধের বিরুদ্ধে—সেই স্বতঃসিদ্ধটি মানিয়া না লইলে বিজ্ঞানের যাহা প্রধান উদেগু, কাৰ্য্য-কারণ সম্বন্ধ নির্ণয়, তাহা সম্ভব হয় না, এমন কি নির্ণয়ের প্রেরণা আসে না। বিজ্ঞানের গোড়ায়ই এই কাৰ্য্যবাদ (determinism) । বিজ্ঞানে অলৌকিকতার স্থান নাই । মনকে কাৰ্য্যকারণের অতীত একটি চরম সত্বা বলিয়া মানিয়া লইলে বিজ্ঞানের কার্য্যবাদরূপ মূল স্বতঃসিদ্ধটি অস্বীকৃত হয়। বিচাৰ্য্য মানসিক অবস্থা ও ক্রিয় স্বেচ্ছাচারী আত্মার বৃত্তি বা লীলা হইয় পড়ে। আধুনিক মনোবিজ্ঞান এই কাৰ্য্যবাদ গোড়াতেই স্বীকার করিয়া তাহার অনুসন্ধান আরম্ভ করে। তাই তাহার বুকে আজ এত সাহস ও উদ্যম । কোন মানসিক ক্রিয়ার কারণভেদ না করিতে পারিলেও সে নিশ্চেষ্ট নয় । সে জানে তাহার কারণ আছেই। তাই সে অভিনব পরীক্ষাপ্রণালীর অনুসন্ধানে ধাবিত হয় । - আধুনিক মনোবিজ্ঞানে মনের সংজ্ঞা সমীক্ষিত ও পরীক্ষিত বিষয়ের স্বরূপের উপর প্রতিষ্ঠিত। তাহাতে এমন কোন পরিকল্পনা করা হয় না যাহাতে পরীক্ষণ ও কাৰ্য্যকারণ সম্বন্ধ নির্ণয়ের অন্তরায় ঘটে । মনকে আমরা আজকাল সত্ত্ব বলিয়া কল্পনা করি না । সমীক্ষিত মানসিক অবস্থা ও ক্রিয়ার অবশ্যকল্প আশ্রয় মাত্র বলিয়া ভাবিয়া থাকি ; মন যেন বিশেষণ—বিশেষ্য নয় । (২) বিজ্ঞান-স্বত্রগুলি সমীক্ষা ও পরীক্ষালব্ধ ঘটনা ব। বস্তমূলক বিশেষ সত্যের ( Phenomena ) উপর প্রতিষ্ঠিত। এই সত্যনিৰ্দ্ধারণে ভুল হইলে সুত্রের ভুল অবগুম্ভাবী। ইহা বিজ্ঞান-সৌধের-ভিত্তি স্বরূপ। ন্যায়শাস্ত্র এই সত্যের লক্ষণ নিদ্দেশ করিয়াছে । কিন্তু তাহ। সত্ত্বেও সমীক্ষার সময়ে ভুলের সম্ভাবনা স্বাভাবিক । সেই জন্য বৈজ্ঞানিক প্রণালীর নির্দেশ মত একই ঘটনা পুনঃ পুনঃ দেখিতে হয়, একই অবস্থা ও বস্তু পুনঃ পুনঃ বিশ্লেষণ করিতে হয়, স্থবিধা হইলে অবস্থা-নিচয়ের নিয়মমত পরিবর্তন করিয়া দেখিতে হয় । একজনে দেখিলে একদেশদর্শিতা কিংবা ইন্দ্রিয়বিকৃতির ফলে ভুল হইতে পারে, সেইজন্য বহু লোকে পৃথক পৃথক দেখিতে হয় ।