পাতা:প্রবাসী (ত্রিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৭৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

কৃষিশিক্ষার প্রয়োজন ও আয়োজন শ্ৰীনগেন্দ্রনাথ গঙ্গোপাধ্যায় আজও বাংলা দেশের শিক্ষিত সম্প্রদায়ের বৈঠকে ক্লষিশিক্ষার প্রয়োজন আছে, অথচ আয়োজন নাই, এই সম্বন্ধে আলোচনা উত্থাপন করিতে লজ্জা বোধ করিতেছি। কিন্তু দিনের পর দিন বাংলা দেশের কৃষিকৰ্ম্মের ও কৃষিজীবীর অবস্থা এইরূপ হইয়া উঠিতেছে যে, কৃষিশিক্ষার কথা না তুলিলে আর গতি নাই। এমন একদিন ছিল যখন যেমন-তেমন করিয়া কুমি কৰ্ম্ম নির্বাহ করিলেও ক্ষতি ছিল না। কোন উপায়ে অত্যন্ত সাধারণ যন্ত্রপাতি ব্যবহার করিয়া যে পরিমাণ ফসল পাওয়া যাইত, তাহাতে অন্নবস্ত্রের অভাব ঘটিত না । আজ, একদিকে যেমন আমাদের প্রয়োজনের মাত্রা বৃদ্ধি পাইতেছে, অপর দিকে সমস্ত পৃথিবীজোড় বিপুল বাণিজ্যের হাটে আমাদের ডাক পডিয়াছে । কোন বিশেষ ফসলকে কোন নির্দিষ্ট ভৌগোলিক সীমানার মধ্যে আর ধরিয়া রাগ যাইতেছে না। রাখিবার চেষ্ট৷ করাও বৃথা, কেন না আজ পৃথিবীর হাটে কেনা-বেচ না করিলে আমাদের ব্যাবহারিক জীবনের ( economic life ) পুষ্টিসাধন সম্ভবপর হইবে না। এই হাটে আমাদের আবশ্যকীয় ও অনাবশ্যকীয় বহু পণ্যদ্রব্য কিনিতে হয় ; আর, ইহার অধিকাংশ মূল্য দিতে হয় কৃষিজাত ফসল বেচিয়া। ১৯২৫-২৬ সালে ৩১৩ কোটি টাকার রপ্তানি মালের শতকরা প্রায় ৯০ ভাগ ছিল কাচা মাল ও আংশিক ভাবে প্রস্তুত করা দ্রব্য । বাংলা দেশের পাটের খরিদদার বিদেশীরা, পৃথিবীর হাটে ইহার চাহিদা বাড়িয়াই চলিয়াছে। ভারতবর্ষের তুলা, গম, চাল, তৈলশস্য প্রভৃতি বিরাট আন্তর্জাতিক বাণিজ্য-যজ্ঞের একান্ত আবশ্যকীয় উপাদান-ইহা আমাদের যজ্ঞের সহিত অভিমান করিয়া অসহযোগিতা করিলে আমরা যে কেবল ক্ষতিগ্রস্ত হইব তাহা নহে, পৃথিবীর কাছে হাস্যাম্পদ হইব । যোগাইতেই হইবে। এই . তারপর আধুনিক যুগেব শাসনতন্ত্র ও যন্ত্র এই দুই-ই ব্যয়সাপেক্ষ। একমূখে আমরা বলিতেছি চাই গণতন্ত্র অর্থাৎ ডিমক্রেসি,—তারপর তন্ত্রটি কার্য্যে পরিণত করিতে গিয়া দেখি কতকগুলি সভা আর অনেকগুলি সভ্য ন হইলে চলিবে না ; কিন্তু ইহার ব্যয়-সঙ্কলান করিতে আমাদের আয়ের তহবিলে টান পড়ে। যেমন, ১৯২৬-২৭ সালে বঙ্গীয় গভর্ণমেণ্টের আয় দশ কোটি পঞ্চাশ লক্ষ, কিন্তু ঐ বৎসর খরচ করিতে হইল দশ কোটি একাত্তর লক্ষ । শাসন-যন্ত্রট চালাইবার ব্যয়ভার আমাদের বহন করিতেই হইবে— ইহার সহিত রাগ করিয়া অসহযোগিতা করিলে যন্ত্র পরিচালনার ব্যয় বাড়িবে বই কমিবে না । আসল কথ। এই, আধুনিক যুগের দাবী আমাদের মিটাইতে হইবে । * আমরা যতই ইহা শ্রেয় বলিয়া তর্ক করি না কেন, ভারতবর্ষকে আচলায়তনের গণ্ডীর মধ্যে ফিরাইয়া লইবার চেষ্টা বুথা—ইহ নিষ্ফল হইবেই। বাহিরের সহিত যোগ রক্ষা করিবার শক্তি অর্জন করা ভিন্ন আমাদের আর কোন গতি নাই। এই শক্তিঅর্জনের সাধনায় জাপান মনোনিবেশ করিয়াছিল, আজ চীন করিতেছে, বলিয়াই ইহার ব্যাবহারিক জীবনে, সামাজিক জীবনে ও রাষ্ট্রীয়ক্ষেত্রে সার্থকতা লাভ করিয়াছে ও করিতেছে। জাপান জানিত বৰ্ত্তমান যুগের যজ্ঞানুষ্ঠানে আসন গ্রহণ করিতে হইলে জাপানকে যুগধৰ্ম্মে দীক্ষিত হইতে হইবে ; এবং এই দীক্ষা গ্রহণ করিয়াছিল বলিয়৷ জাপানের ক্ষেতে প্রচুর শস্য ফলে, জাপানের শিল্প পৃথিবীর হাটে আদৃত হয়, জাপানের শিক্ষাকেন্দ্র হইতে ‘মানুষ’ জন্মে। • কেবল জাপান কেন, সকল সভ্য দেশেই দেখিতে পাই জনসংখ্যা বৃদ্ধির ও সভ্যতা বিস্তারের সঙ্গে সঙ্গে বৈজ্ঞানিক প্রণালী অনুসরণ করিয়া কৃষি উন্নতির চেষ্ট