পাতা:প্রবাসী (ত্রিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৮৪৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

৬ষ্ঠ সংখ্যা ] স্থলে লেখকের নিজ অভিজ্ঞতা বা অনুসন্ধানের ফল, এবং প্ৰকৃত ইতিহাসের ভাষায় ও প্রণালীতে রচিত। অতীত যুগের ঘটনাপরম্পরা কাৰ্য্যকারণ-সম্বন্ধ ও দেশের দশ সত্যরূপে জানিবার পক্ষে এগুলি অমূল্য এবং একমাত্র বিশ্বাসযোগ্য উপকরণ। এই-সব মুসলমান রচিত গ্রন্থ হইতে আমরা সে সময়কার হিন্দুজাতির এবং পার্শ্ববর্তী হিন্দুরাজাদের পর্যাস্ত সত্য কাহিনী জানিতে পারি। ক্রমে এই দৃষ্টান্ত হিন্দু লেখকগণ অনুকরণ করিতে শিখিলেন, মুঘল যুগে অনেক হিন্দু ফারসী ভাষায় ইতিহাস, জীবনী, ঐতিহাসিক পত্রাবলী লেখেন । এবং হিন্দুরাজগণও মুঘল বাদশাহদের অনুকরণে নিজ কীৰ্ত্তিকলাপ এবং বংশচরিত রচনা করাইলেন । সপ্তদশ ও অষ্টাদশ শতাব্দীর ভারত এই কারণে আমাদের নিকট অতি বিশদভাবে পরিচিত হইয়া আছে,তাহাদের পূর্ববৰ্ত্তী কোন শতাব্দী ইহার সিকির সিকি পরিমাণ ঐতিহাসিক উপকরণও রাশিয়া যায় নাই । প্রত্যেক মুঘল বাদশাহ এবং তঁহাদের পূর্বের স্থলতানগণের মধ্যে অনেকেই নিজ নিজ রাজত্বের ঘটনা লিপিবদ্ধ করিবার জন্য বেতনভোগী লেখক রাখিতেন এবং তাহাদের সব সরকারী কাগজপত্র দেখাইয়া ঐ ইতিহাসগুলিকে বাস্তব ভিত্তি দান করিতেন । এই সাহিত্য এদিকে হিন্দুদের চোখ ফুটাইয়া দিল । সভ্যতার বৃদ্ধি ও প্রচার শত শত বৎসর মুসলমান রাজত্বের ফলে ভারতীয় সভ্যতা নানা দিকে বিস্তৃত ও পরিবদ্ধিত হইয়াছে। শিকার, বাজপক্ষী দিয়া অন্য পাখী মার, নানা প্রকার খেলা এখনও তাহাদের মুসলমানী শব্যাবলী ও প্রণালী রক্ষা করিয়া এই বাহ প্রভাবের সাক্ষ্য দিতেছে। ভারতে মুসলমান è Գե-Q: অসংখ্য ফারসী তুকী ও আরবী শব্দ চলিত হিন্দী, বাংলা ও মারাঠী ভাষায় ঢুকিয় তাহাদের স্থায়ী অংশ হইয়া রহিয়াছে। মুসলমান যুগে রণনীতি খুব বেশী উন্নতি লাভ করে, কারণ ভারতীয় মুসলমানগণ বাহিরের গতিশীল ইসলামীয় জগতের সঙ্গে সদা সংস্রব রাখিত এবং তথাকার জ্ঞানের উন্নতির ভাগ পাইত। শেষে, স্বাধীন হিন্দুরাজারা মুঘল যুদ্ধ-পদ্ধতি ও অস্ত্রসজ্জা অমুকরণ করিতে লাগিলেন, মুসলমান সেনানী ভাড়া করিতে লাগিলেন । এই যুগে বারুদ ও কামানের ব্যবহার প্রথম আসিল, এবং তাহার অনিবায্য ফলে দুর্গ-রচনার প্রণালী সম্পূর্ণ বদলাইতে হইল। প্রাচীন হিন্দুযুগে যুদ্ধে গজের স্থান ছিল শ্রেষ্ঠ, এখন অশ্বারোহী সৈন্য প্রধান হইয়৷ উঠিল, আর হাতী শুধু সৰ্ব্বোচ্চ নেতার চড়িবার এবং শিবিরের বোঝা বহিবার বাহনে পরিণত হইল। . শুধু যুদ্ধের সরঞ্জাম ও প্রণালীতে, শাসনবিধি ও কৰ্ম্মচারিবৃন্দের বিভাগ এবং নামকরণে, রাজসভার আদব-কায়দাতে নহে,—বিলাসিতায়, অট্টালিকা-নিৰ্ম্মাণে, উদ্যান-রচনায়, উচ্চ শ্রেণীর হিন্দুদের সর্ববিধ বাহ্য জীবনে মুসলমান প্রভাব বিজয়ী হইয়া, উনবিংশ শতাব্দীর শেষ পর্য্যন্ত চলিয়া আসিয়াছিল ; এই সেদিন মাত্র আমরা বৃটিশের অমুকরণ আরম্ভ করিয়াছি, আর মুঘল-প্রভাবের অৰ্দ্ধশশী অস্তমিত হইয়াছে। অনেক শিল্প, অনেক কলাবিদ্যা মুসলমান যুগের দান-স্বরূপ ভারতে স্থান পাইয়াছে ; তাহার মধ্যে কাগজ-নিৰ্ম্মাণ এবং কাগজের পুথির পাতায় ছবি অঁাকার প্রতি বিশেষ করিয়া পাঠকের দৃষ্টি আকর্ষণ করা আবশ্বক। আর-সব দৃষ্টাস্ত সকলের সহজেই স্মরণ হইবে, সেগুলি আজও নান দিকে আমাদের নিত্য ব্যবহারে আসিতেছে। ി ミ