পাতা:প্রবাসী (ত্রিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৯২৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

অভিধান মহামহোপাধ্যায় শ্রীহরপ্রসাদ শাস্ত্রী, এম-এ, সি-আই-ই অভিধান বলিতে গেলে সংস্কৃতে তিনটি জিনিষ বুঝায়,— (১) পৰ্য্যায়, (২) নানার্থ, (৩) লিঙ্গ । একটি জিনিষের যতগুলি নাম থাকে সেগুলি একত্র করিলে পর্য্যায় হয় । একশব্দের নানারূপ অর্থ থাকিলে তাহার নাম নানার্থ হয় । সংস্কৃত সকল শব্দেরই একটা লিঙ্গ আছে, সেগুলি নির্ণয় কর বড় কঠিন । অভিধানের যে ভাগে শব্দের লিঙ্গ নির্ণয় করা থাকে তাহার নাম লিঙ্গ । (১) পৰ্য্যায়ের সকলের চেয়ে পুরাণ পুথির নাম নিঘণ্ট । ইহা বেদের অঙ্গ, মুখস্থ করিয়া রাখিতে হয় বলিয়৷ ইহারও নাম অণমায় বা সমামায় । বেদের পর ব্যাড়ির ‘সংগ্রহে? বোধ হয় অনেক পৰ্য্যায়ের কথা ছিল । (২) নানার্থের অনেক প্রাচীন পুথি আছে, তাহার মধ্যে ‘নানার্থ-শব্দরত্ব’ নামে কালিদাসের এক পুথি আছে। (৩) লিঙ্গের পুথির আদি আচাৰ্য্য বররুচি, কারণ এ-সম্বন্ধে সকল লোকই ববরুচির দোহাই দেয় এবং তাহার নামেও পুথি চলে । সংস্কৃত অভিধানের মধ্যে অমরকোষের খুব খাতির, কারণ উহাতে তিনই আছে। অল্পেই মুখস্থ করা চলে, আর মুখস্থ করিলে শব্দশাস্ত্রে পণ্ডিত হওয়া যায়। অনেক জায়গায় ব্রাহ্মণের ছেলেরা এখন ও সাত আট বৎসর বয়সেই অমরকোষ মুখস্থ করিয়া ফেলে। অমরকোষ মুখস্থ না থাকিলে পণ্ডিতের ভিতর গণ্যই হয় না। সংস্কৃতে আরও অনেক অভিধান আছে । সংস্কৃত সব অভিধান একত্র করিলে ঘর ভরিয়! যায়। কিন্তু আমরকোষের আদর সকলের চেয়ে বেশী, উহার চল্লিশখানির অধিক টীকা অাছে ও পরিশিষ্ট আছে। বাঙ্গালায় উহার দুইখানি টকা খুব ভাল—একখানি সৰ্ব্বানন্দ বাড়ুৰ্যোর, লেখা ১১৫৯ খৃষ্টাব্দে, উহার নাম "টীকাসৰ্ব্বস্ব' । দশখানি টীকা দেখিয়৷ এই নূতন টকাখানি লেখা। এই টীকায় প্রায় ১ ০০ শত সংস্কৃত শব্দের বাঙ্গাল প্রতিবাক্য দেওয়া আছে । আর একখানি টীকার নাম ‘পদচন্দ্রিকা’ । টীকাকারের নাম বৃহস্পতি মাহিন্ত বা মতিলাল। ইনি গৌড়ের হিন্দু স্থলতানের নিকট ‘রায়মুকুট’ উপাধি পান। টীকাখানি ১৪৩১ খৃষ্টাব্দে লেখা হয় । অমরকোষের একখানি পরিশিষ্ট আছে, উহার নাম "ত্রিকাগুশেষ’ । অমরকোযে পর্য্যায়, নানার্থ ও লিঙ্গ নামে তিনটি কাণ্ড আছে, সেজন্য উহার আর এক নাম “ত্রিকাগু’ । সুতরাং অমরকোষের পরিশিষ্টের নাম “ত্রিকাগুশেষ’ হইয়াছে। পরিশিষ্টকার একজন বৌদ্ধ পণ্ডিত – তিনি কত পুরাণ বল যায় না, তবে সৰ্ব্বানন্দ ১১৫৯ সালে তাহার বই হইতে অনেক জিনিষ লইয়াছেন, সুতরাং তিনি সৰ্ব্বানন্দের ও আগেকার লোক, তাহার নাম পুরুষোত্তম দেব। অমরকোষ যেখানে এক পয্যায়ে সতেরটি শব্দ লিখিয়াছেন ইনি সেখানে সাইত্রিশটিও করিয়াছেন, সুতরাং তিনি অমরকোষের অনেক পরের লোক এবং অমরকোষের পর যত শব্দ চলিত হইয়াছিল তাহাদের একটা “চলস্তিকা" লিথিয়াছেন। ইনি একজন বড় শাব্দিক পণ্ডিত ছিলেন। ইনি পাণিনির বৈদিকসূত্র ছাড়িয়া দিয়া ভাষাসূত্রগুলির বৌদ্ধমতে এক বৃত্তি লিথিয়া গিয়াছেন, তাহার নাম"ভাষাবৃত্তি’। সম্প্রতি নেপাল হইতে পুথি আসিয়াছে। তিনি অনেকগুলি প্রাকৃতভাষার একখানি ব্যাকরণ লিখিয়া গিয়াছেন। ইনি আর ও একখানি ছোট অভিধান লিখিয়া গিয়াছেন, সেথানির নাম ‘হারবিলি” । এই ছোট অভিধান লিখিবার ও ন্য তিনি ১২ বৎসর খাটিয়াছেন। অনেক বড় বড় পণ্ডিতের বাড়ী তিনি এইজন্য পড়িয়া থাকিতেন। বইখানি খুব সুন্দর হইয়াছে। যে-সকল শব্দ চলতি ছিল, অথচ উঠিয়া যাইতেছে তাহারই অর্থ করা এই অভিধানের উদ্দেশু, সুতরাং এখানিকে আমরা ‘অচলন্তিকা’ বলিতে পারি। কিন্তু পুরুষোত্তম আর একটি কাজ করিয়া গিয়াছেন, ভিন্ন ভিন্ন দেশে পড়িয়া সংস্কৃত শব্দের উচ্চারণ ভেদ হইয়া গিয়াছিল—অনেকে উচ্চারণ ধরিয়া বানান করিত, আবার অনেকে পুরাণ ংস্কৃতের বানান ধরিয়া বানান করিত—অনেক গোলমাল হইত। সংস্কৃত শব্দ সংবৎ-ভারতবর্ষের পূর্বাঞ্চলে কিন্তু সম্বং বলিত, আবার অক্ষরভেদেও অনেক গোলমাল হইত—সেকালে বাঙ্গলায় খ, ক্ষ, ও ষ একই রকমে লেখা হইত—কোথাও ষ-কে খ লিখিত, কোথাও য-কে ক্ষ লিখিত, আবার থ-কে ষ লিখিত ব ক্ষ লিখিত, সুতরাং গোলযোগ বাড়িয়া যাইত। এই সকল গোলযোগের জন্য তিনি “বর্ণযেfজনা” বলিয়৷ একথানি বানানের বই লেখেন। উহারই অংশ হয় ব-কারভেদ, য-কারভেদ, স-কারভেদ ও ন-কারভেদ । তিনি যে-শব্দে যে ব-কার, যে য-কার যে স-কার ও যে ন-কার লিখিতে হইবে তাহার একটা ব্যবস্থা করিয়া দিয়া যান—পণ্ডিতেরা