পাতা:প্রবাসী (দশম ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/১৪৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

939 পর্য্যায় অনুসারে স্বক্ষ হইতে স্থলে প্রকৃতির সৃষ্টিকাৰ্য্য সম্পন্ন হয় এবং তাঙ্গরষ্ট বিপরীত পৰ্য্যায়ে অর্থাৎ স্থল হইতে স্থক্ষে প্রলয় ঘটে। জৈনেরা কিন্তু পুগেলের অভিব্যক্তি সম্বন্ধে এরূপ কোন নির্দিষ্ট শুঙ্খলা স্বীকার করেন নী । জৈনমতে পাপপুণ্য অনুসারে কৰ্ম্ম নামক একরূপ স্বক্ষ আণবিক বস্তু জীবকে আচ্ছন্ন করে, বিকৃত করে এবং তাহার অন্তর্নিহিত গুণকে বাধা দেয় । জৈনের স্পষ্টই বলেন যে কৰ্ম্ম একরূপ বস্তু (পৌগোলিকম কৰ্ম্ম ), ইহা রূপক নহে, এক প্রকার বাস্তব পদার্থ। নিম্নলিখিত দৃষ্টান্তগুলিতেই তাহা স্পষ্ট বোঝা যাইবে । জৈনেরা বলেন জীব অত্যন্ত লঘু এবং উৰ্দ্ধগামী (উৰ্দ্ধ গৌরব ) কেবল কৰ্ম্মের দ্বারা ভারাক্রান্ত হইয়া তাঙ্গ নিম্নে আকৃষ্ট হয় । কিন্তু নিৰ্ব্বাণের অবস্থায় যখন জীব এই কৰ্ম্মবন্ধ হইতে মুক্ত হইয়া যায় তখন একেবারে ঋজুরেখায় বিশ্বজগতের সৰ্ব্বোচ্চ শিখরে মুক্ত পুরুষদের আবাসস্থলে অধিরোহণ করে। আর একটি দৃষ্টান্ত — কৰ্ম্মবন্তু জীবের মধ্যে নানা অবস্থা প্রাপ্ত হয় । ঘোলাঞ্জলে পঙ্ক যেমন জলের সহিত মিশ্রিত হইয়া চঞ্চল হইয়া থাকে, জীবের মধ্যে কৰ্ম্মের সেই এক অবস্থা । আবার তাহা যখন জলের নীচে থিতাইয়া স্থির হইয়া থাকে সেই এক অবস্থা । আবার পঙ্ক থিতাইয়া গেলে স্বচ্ছ জলকে যখন ঢালিয়া স্বতন্ত্র করা হয় সেই এক অবস্থা । তৃতীয় দৃষ্টান্ত — জৈনমতে নিবিড়তম কৃষ্ণ হইতে উজ্জ্বলতম শুভ্ৰ পৰ্য্যন্ত জীলের ছয় প্রকার বর্ণ অাছে। এই বর্ণগুলিকে বলে লেখা । ইহা সাধারণ মর্ত্যচক্ষুর গোচর নহে। কৰ্ম্মবস্তুই জীবকে এইরূপ বিবিধ বর্ণেরঞ্জিত করে । অতএব জৈনমতে কৰ্ম্ম যে এক প্রকার স্বগ্ন বস্তু তাহাতে সন্দেহ নাই । এই কৰ্ম্মবন্তু জীবের মধ্যে প্রবেশ করিয়া আট প্রকার বিচিত্র আকারে পরিণত হয় । একই থান্ত যেমন শরীরের মধ্যে নানারস উৎপাদন করে তেমনি একই কৰ্ম্মবন্তু হইতে বিচিত্র কৰ্ম্মরূপের উৎপত্তি হয়। এই আট প্রকার কৰ্ম্ম আত্মাকে আচ্ছন্ন করিয়া একটি স্বল্পশরীর রচনা করে । আত্মা যতদিন না নিৰ্ব্বাণ প্রাপ্ত হইয়া বিশ্বব্রহ্মাণ্ডের শিখরদেশে প্রস্থান করে ততদিন পর্য্যন্ত এই কুৰ্ম্মশরীর জন্ম প্রবাসী—অগ্ৰছায়ণ, ১৩১৭ ১০ম ভাগ, ২য় খণ্ড জন্মান্তরে জীবের অনুসরণ করে। জৈনদের এই “কাশ্মণ শরীর” সাংখ্যদের সুক্ষ্মশরীর বা লিঙ্গশরীরের প্রতিশব্দ । এই সূক্ষ্মশরীৰে কৰ্ম্ম যে আটটি রূপ ধারণ করে নিম্নে তাহাদের নাম দেওয়া গেল। (১) জ্ঞানাবরণীয়। (২) দর্শনাবরণীয়—ষ্টহারা জ্ঞান ও বিশ্বাসকে বাধা দেয় । (৩) মোহনীয়—ইহার মোহের সঞ্চার করে, বিশেষত রাগদ্বেষ ও রিপুদের ইঙ্গষ্ট কারণ । (৪) বেদনীয়-সুখ দুঃখ ইহার পরিণাম। (৫) আয়ুষ্ক-ইহা বর্তমান জন্মে জীবনের আয়ুকাল পরিমিত করিয়া দেয়। (৬) নাম—-যাহ কিছুর দ্বারা ব্যক্তির ব্যক্তিত্ব রচিত হয় এই নামই তাহা জোগাইয়া থাকে । (৭) গোত্র-ইকাতে মামুষের শ্রেণী বা জাতি নির্দেশ করিয়া দেয় । (৮) অন্তরায়— ইহা মানুষের শক্তি ও গুণের বিকাশে বাধা দিয়া থাকে । এই কৰ্ম্মগুলি কেবল একটি নির্দিষ্ট কাল পর্যাস্ত টিকিতে পারে, সেই সময় ব্যাপিয়াই জীবের উপর ইহাদের ফল ফলিয়া থাকে । তাহার পর ইহার জীবকে ত্যাগ করিয়া যায়, সেই ত্যাগ প্রক্রিয়ার নাম নিজরা । যদ্বার। কৰ্ম্ম আত্মার মধ্যে প্রবেশ করে সেই বিপরীত প্রক্রিয়ার নাম আম্রব । মন যখন দেহের সহিত যুক্ত হয় সেই উপলক্ষে আস্রবের সঞ্চার হইয়। থাকে, তখনই কৰ্ম্মবস্তু জীবের মধ্যে প্রবেশের সুযোগ প্রাপ্ত হয় । যে ব্যক্তি পুণ্যশীল নহে অর্থাৎ সত্যধৰ্ম্মে যাহার বিশ্বাস নাই, ব্ৰতপালন যে না করে, ও আচারে যে শিথিল, যে রিপুদমনে অক্ষম, তাঙ্গর আত্মা কৰ্ম্মবস্তকে ধরিয়া রাখে—ইহাকে বলে বন্ধ । কিন্তু এই আস্রব অর্থাৎ কৰ্ম্মবস্তুর প্রবেশের প্রতিরোধ করা যাইতে পারে । সেই প্রতিরোধকে বলে সম্বর । বিশেষ কতকগুলি আচার পালনের দ্বার, কায়মন ও বাক্যকে সংযত করার দ্বার, শাল রক্ষা, ধৰ্ম্ম চিন্তা ও প্রিয় অপ্রিয়ে রাগ বিরাগ বিসর্জন দ্বারা এই সম্বর সাধিত হয় । এই সম্বরের পক্ষে তপই সৰ্ব্বাপেক্ষ উৎকৃষ্ট উপায় । তপ যে কেবল কৰ্ম্মকে বাধা দেয় তাহ নয়, তাহা সঞ্চিতকৰ্ম্ম ক্ষয় করে । তপ জীবকে প্রথমে নিজরার অবস্থায় লইয়া যায়, তাছার পরে নির্বাণে উপনীত করে । জৈনশাস্ত্রে দুই প্রকারের তপ আছে—বাহ তপ এবং আভ্যন্তর তপ । উপবাস, স্বল্পাহার; স্বাদবিহীন খাদ্য ভোজন, আরাম