পাতা:প্রবাসী (দশম ভাগ, প্রথম খণ্ড).pdf/৬৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

>&o সৌর জগতের ইতিবৃত্ত সম্বন্ধে দুই একটী কথা । বাল্যকালে শ্রদ্ধেয় অক্ষয়কুমার দত্ত মহাশয়ের ‘কীটামু ও ‘ব্রহ্মাও কি প্রকাও" নামক প্রবন্ধদ্বয় পাঠ করিয়া স্মৃষ্টির বিশালত্ব ও অনস্তত্ব হৃদয়ঙ্গম হওয়ায় যে অনিৰ্ব্বচনীয় আনন্দলাভ করিয়াছিলাম আজিও তাহ মানসপটে স্বম্পষ্ট অঙ্কিত রহিয়াছে। সেই সময় হতেই এই অপরিমেয় ব্ৰহ্মাণ্ডের স্মৃষ্টি স্থিতি লয় সম্বন্ধে জানিবার ইচ্ছা বলবতী হয় কিন্তু, হায়, বয়সের পরিণতির সঙ্গে সঙ্গে দেখিতে পাইলাম, মানুষের জ্ঞান এখনও অতি অসম্পূর্ণ এ সকল বিষয়ের মিমাংসা করিতে তাহার এখন অনেককাল লাগিবে ; আর, কোনও কালে মীমাংসা করিতে পারিবে কিনা সে বিষয়েও ঘোৰ সন্দেহ। যাহা হউক, বিংশ শতাব্দীর জ্ঞানরশ্মির সাহায্যে এ প্রশ্নের কতটুকু উত্তর পাওয়া যায় তাহ অনুধাবন করিতে নিতান্ত মন্দ লাগিবে না। বহুকাল গত হইল,—খৃষ্টিয় বিংশ শতাব্দীর কত সহস্ৰ অৰ্ব্বদ বা পরাদ্ধ বৎসর পূৰ্ব্বে তাহার সংখ্যা হয় না— আকাশে কতকগুলি বাষ্পপুঞ্জ বিচরণ করিতেছিল। এই বাষ্পপুঞ্জগুলি কালক্রমে পরস্পর নিকটবৰ্ত্তী হইয়া কিছু ঘন হইতে লাগিল-ক্রমে একটা প্রকাগু অগ্নিপিণ্ডের দ্যায় হইল—এইরূপে আমরা যাহাকে নক্ষত্র বলি সেইরূপ একটা দ্রব্যের সৃষ্টি হইল। এই তরল আগ্নেয় পিগুটী লাটিমের স্থায় অবিরাম ঘুরিতে থাকিল-ঘুর্ণনের বেগে মধ্যে মধ্যে তাহা হইতে কিয়দংশ ছিটকাইয়া বাহিরে আসিয়া পড়িতে লাগিল, কিন্তু এক আশ্চৰ্য্য আকর্ষণের বলে ( আমরা তাহার মাধ্যাকর্ষণ নাম রাখিয়াছি—কিন্তু এই আকর্ষণটার স্বরূপ কি সে সম্বন্ধে কেহই কিছু জানেন না ) সেই ছিন্ন অংশ একদিকে আকাশে চলিয়া গেল না, সেই আদি পিওটীর চতুর্দিকে বৃত্তাকারে ঘুরিতে থাকিল। এইরূপে একটা গ্রহের জন্ম হইল। আবার জলন্ত ও ঘূর্ণনশীল গ্রহ হইতে কিয়দংশ ছিটকাইয়া, গ্রহের চারিপাশ্বে বৃত্তাকারে ঘূরিতে লাগিল-ইহাই হইল একটা উপগ্রহ। একই প্রকারে কতকগুলি গ্রহ ও উপগ্রহের স্বষ্টি হইল। গ্ৰহ প্রবাসী—জ্যৈষ্ঠ, ১৩১৭ উপগ্রহ গুলির পক্ষে সেই নক্ষত্ৰটী হইল একটা স্বৰ্য্য—এবং সূর্যাসমন্বিত এই গ্রহ সমষ্টি, যাহার নাম দেওয়া হইয়াছে একটা সৌর জগৎ, আকাশে বিচরণ করিতে থাকিল। এইরূপে বিভিন্ন সময়ে অনেক সৌর জগতের স্বষ্টি হইয়াছে। আমরা তাহার মধ্যে একটা সৌর জগতের ইতিহাস মাত্র আলোচনা করিব। এই সৌর জগতে ৮টা প্রধান গ্রহ আছে, তাহার মধ্যে একটা গ্রহের নাম পৃথিবী ও তৎসংলগ্ন উপগ্রহটর নাম চন্দ্র। এই সৌর জগতের মধ্যে দেখা যাইতেছে, স্বৰ্য্যই আদি, গ্রহগুলি তাহার সস্তান স্থানীয় এবং চন্দ্রাদি উপগ্রহগুলি পৌত্র স্থানীয় । সুর্য্যকে এক অর্থে জগৎ প্রসবিতা বলা যাইতে পারে। স্বৰ্য্য অনবরত তাপ বিকীর্ণ করিতে থাকিলেন এবং গ্রহগুলিও তাপ বিকীর্ণ করিতে থাকিল। কিন্তু হুর্যের তুলনায় গ্রহগুলি অতি ক্ষুদ্র এবং তাছাদের তাপের ভাণ্ডারও সামান্ত কাজেই কিছুকালের মধ্যে গ্রহগুলি অনেকটা শীতল হইয়া পড়িল--সূৰ্য্য কিন্তু তখনও অতি বেগে তাপ বিকীর্ণ করিতে রহিল । অন্যান্ত গ্রহের কথা ছাড়িয়া দিয়া, পৃথিবী গ্রহের কথাটা একটু সবিস্তারে আলোচনা করা যাউক । অনেকটা তাপবিকারণের পর, পৃথিবী নামক তরল অগ্নি পিওট যখন কতকটা শীতল হইল তখন তাহার উপরিভাগে একটী পাতল কঠিন আবরণ পড়িল, যেমন ছন্ধের উপর সর পড়ে থানিকটা সেইরূপ। সঙ্গে সঙ্গে যে জল বাষ্পাকারে পিওটাকে আচ্ছাদন করিয়াছিল, তাহ এক্ষণে তাপ হ্রাস নিবন্ধন তরল জল আকারে কঠিন পৃথিবী পৃষ্ঠে জমিতে লাগিল। কাজেই এ সময়কার পৃথিবীর আকার হইল, একটা তরল অগ্নিময় পিও, তাহার উপরিভাগে পাতল কঠিন আবরণ এবং তাহার উপর তরল জল । তাপ হাসের সঙ্গে সঙ্গে নানারূপ রাসায়নিক প্রক্রিয়াও চলিতে থাকিল। ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র পরমাণুগুলির সমবায়ে বৃহত্তর পরমাণুপুঞ্জ বা অণুর উৎপত্তি হইতে লাগিল, এইরূপে নানা ধাতব পদার্থের স্বষ্টি হইল। ক্রমে পরমাণুপুঞ্জ আরও বৃহত্তর হইল এবং অণুর মধ্যে পরমাণুগুলির বিন্যাস নানা বিভিন্ন প্যাটাৰ্ণে হইতে থাকিল-শেষ একটা অদ্ভূত গঠনের ) ২যু সংখ্যা । ... د ه لا ]


পরমাণুপুঞ্জ নিৰ্ম্মিত হইল, তাহার নাম দেওয়া হইয়াছে জীবাণু। এই জীবাণুর একটা স্বধৰ্ম্ম দেখা গেল নানা বিপত্তির মধ্য দিয়া নানা উপায়ে আপনাকে রক্ষা করা ও বৰ্দ্ধন করা। জন্ম হইতেই ইহা চতুঃপাশ্ববৰ্ত্তী পদার্থের সহিত সংগ্রাম করিতে রহিল এবং যখন কিছুকাল পরে প্রান্ত হইয়া পড়িল, তখন নিজের দেহের একাংশ বিচ্ছিন্ন করিয়া তাহাকে এই সংগ্রামের নুতন যোদ্ধা নিযুক্ত করিয়া দিল ; আপনার দেহস্থ পরমাণু বিদ্যাস চতুঃপাশ্ববর্তী পদার্থের দৌরাত্ম্যে কালক্রমে বিপৰ্য্যস্ত হইয়া গেল।--চলিত ভাষায় বলিতে গেলে জীবাণুটা সন্তান রাখিয়া মরিয়া গেল । এখন, কি করিয়া যে পরমাণুগুলি পুঞ্জীকৃত ও বিন্যস্ত হইয়া একটা জীবাণুর স্বষ্টি করিল তাহা কিছুই বুঝিতে পাৱা যায় না। খৃষ্টীয় উনবিংশ শতাব্দীতে অনেক পরীক্ষা করিয়া দেখা গিয়াছে যে নিৰ্জ্জীব পরমাণুপুঞ্জ হইতে কিছুতেই সজীব জীবাণুর স্বষ্টি হয় না—এ পর্য্যন্ত যত জীবাণুর উৎপত্তি পর্য্যবেক্ষণ করা হইয়াছে সকলগুলিই একটা ইতিহাসে এমন এক কাল ছিল, যখন নিজীব পদার্থ হইতে প্রথম সজীব পদার্থের উৎপত্তি হইয়াছিল। যাহা হউক, পৃথিবী-পৃষ্ঠাবরণকারী জলে কোনরূপেও কতকগুলি জীবাণুর স্বষ্টি হইল। জীবাণুটীর মূৰ্ত্তি প্রথমতঃ কতকটা সাদাসিধা ছিল একটা আণুবীক্ষণীক ক্ষুদ্র পিণ্ড কোনও প্রকারে আত্মরক্ষার্থ সংগ্রাম করিতেছিল। কিন্তু, কালক্রমে, এই সংগ্রামের ফল স্বরূপ তাহার চেহারা বদলাইতে লাগিল। এবং একটা জীবাণু একক না থাকিয় বহু সংখ্যক জীবাণু পরস্পর সাহায্যকারীভাবে একত্র বাস করিতে থাকিল। এই জীবাণু উপনিবেশ পরম্পর এতই ঘনিষ্টভাবে রহিল যে উপনিবেশটী একটা মাত্র জীবের দ্যায় বোধ হইতে লাগিল। সাধারণ ভাষায় যাহাকে একটা জীব বা প্রাণী বলিতে হয়, তাহ বাস্তবিক একটা জীবাণু-সমষ্টি মাত্র। তবে এই জীবাণু সমষ্টিট একটা মাত্র জীবাণুর বংশ ; সেই জীবাণুটা নিজের সংগ্রাম শক্তি বৃদ্ধির জন্য আপনার অঙ্গকে খণ্ড খণ্ড করিয়া বহুসংখ্যক বিভিন্নমূৰ্ত্তি জীবাণুর স্বষ্টি করিয়া তাহাদিগকে এক বৃহত্তর অবয়বের অংশ স্বরূপ একত্র রাখিয়া দিয়াছে। সৌর জগতের ইতিবৃত্ত সম্বন্ধে দুই একটি কথা । পূৰ্ব্ববৰ্ত্তী জীবাণু হইতে উৎপন্ন হইয়াছে। অথচ পৃথিবীর । >ネ> এদিকে পৃথিবীর আভ্যন্তরিক তাপের বলে তাহার মূৰ্ত্তি ক্রমেই বদলাইতে লাগিল। ভিতরকার এই তাপের শক্তিতে ধরাপৃষ্ঠের কোনও কোনও অংশ, ফাপিয়া ফুলিয়া উঠিল এবং কাজেই জল সেখান হইতে গড়াইয়া আসিয়া নিম্নতর অংশে সঞ্চিত হইল—এইরূপে কতকগুলি উচ্চ অংশ (সাধারণ ভাষায় পৰ্ব্বত ) জলময় নিম্নতর অংশের মধ্যে ( সাধারণ ভাষায় সাগর ) মাথা তুলিয়া রহিল কিন্তু যতই মাথা উচু করুন না পৰ্ব্বতবর যে একসময়ে জলে আচ্ছাদিত ছিলেন, তাহার প্রমাণ তাহার শরীরেই রহিয়া গেল-কতকগুলি জলজ জীবের অস্থিপঞ্জর সমেতই তিনি উত্থিত হইয়াছিলেন। খৃষ্টীয় উনবিংশ শতাব্দীতে হিমালয় নামক সৰ্ব্বোচ্চ পৰ্ব্বতের উপরও অতি পুরাকালের জলজ জীবের প্রস্তরভাবাপন্ন কঙ্কাল (fossilised skeletons) দেখিতে পাওয়া গিয়াছিল। স্বৰ্য্য কেবলমাত্র পৃথিবীর জন্ম দিয়াই নিশ্চিন্ত রছিলেন না, তাহার অবয়ব নিৰ্ম্মাণেও বিশেষ সাহায্য করিতে থাকিলেন। তিনি তাপবলে সাগরের জলকে বাপাকারে আকাশে তুলিয়া মেঘের স্বষ্টি করিলেন—সেই মেঘ আবার বৃষ্টি ও বরফ আকারে পর্বত ও সাগরের উপর পড়িতে লাগিল। এমন পৰ্ব্বতটা প্রথমতঃ একটা বৈচিত্র শূন্ত ঢিবির ন্তায় ছিল, এই বৃষ্টি ও বরফ তাহার কোনও কোনও অংশ খনন করিতে লাগিল, কোনও অংশ ভাঙ্গিয়া ফেলিল, কোথাও গভীর খাদ করিয়া ফেলিল—এইরূপে পৰ্ব্বতের নানাস্থানে নানা আকার হইয়া পড়িল। ঠিক যেন স্বৰ্য্যরূপ স্থপতি বৃষ্টি ও বরফরূপ বাটালির সাহায্যে পৰ্ব্বতরূপ প্রস্তরখণ্ড চাচিয়া ছুলিয়া অতি রমণীয় মূৰ্ত্তি পরম্পরা বাহির করিল। সাগরের জল হইতে মেঘ, মেঘ হইতে বৃষ্টি তাহা হইতে সাগরের জল পুষ্টি আবার তাহা হইতে মেঘ প্রভৃতি-পৃথিবী পৃষ্ঠে অনবরত এইরূপ জলের সঞ্চালন চলিতে থাকিল । যখন একজন মূৰ্ত্তি নিৰ্ম্মাতা প্রস্তরখও কাটিতে থাকেন, তখন প্রস্তরের টুকরাগুলি জঞ্জালের ন্যায় ফেলিয়া দেন, কিন্তু স্বৰ্য্য বড় পাকা কারিগর। পৰ্ব্বত কাটিয়া যে সমস্ত পাথরের টুকরা পড়িল সেগুলি পৰ্ব্বত তলদেশে সঞ্চিত হইয়া আরও খানিকটা স্থলের স্বষ্টি করিল। আবার বৃষ্টি