পাতা:প্রবাসী (দ্বাত্রিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/২৪৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

অৰ্জ্জুন গাছগুলায় হনুমানের লাফালাফি করে, দক্ষিণ দিকে কদবেল-গাছটার ওদিকেই খুব বড় পদ্মপুকুর— জল দেখা যায় না, শুধু সবুজ বৃত্তাকার বড় বড় পাতাগুলাকে পাশ কাটাইয়া হাজার হাজার লাল পদ্ম আকাশের দিকে আপনাকে মেলিয়া ধরিয়াছে। ভাল লাগিলেও সে সেখানে বেশী দিন থাকিতে পারে না। তাহার কেবলই মনে হয়, যদি তাহার বাবা ইতিমধ্যে দেশে আসিয়া ফিরিয়া যান ! তাহার বাবার পত্রও সে বেশ চিনিতে পারে। খামের উপর ইংরেজীতে ঠিকানা লেখা, তাহারও আগে পরিষ্কার বাংলা অক্ষর—‘পরম পূজনীয় মাতাঠাকুরাণী, শ্ৰীচরণকমলেষু—পড়িলেই বুক টিপ, টিপ করিয়া ওঠে, বাবা তাহার পত্র দিয়াছেন । কিন্তু কখনও-সখনও । দিতে তিনি পারেন চিঠি রোজই ; রোজ না হউক চার-পাচ দিন পরে পরেও,— তা তিনি দেন না। লেখেন—কাজের চাপ, সময় অল্প, চিঠি লিখিতে আলস্য ধরে । আর চিঠি দেন ও-বাড়ির দাদামশায়কে, জমিজমার সম্বন্ধে। দাদামশায় অর্থাৎ সইয়ের বাবা, দূর স্ববাদে দাদামশায় ; ভারী ভাল লাগে তাকে । কিন্তু তাহাকে ত আর জিজ্ঞাসা করিবার উপায় নাই,–ন জিজ্ঞাস। করিয়াই রক্ষা নাই বলে ! অমনি তিনি যখন-তখন তাহাকে ডাকিয়া বলেন—‘ও শ’, তোমার বাবা যে ভাই আমায় চিঠি দিয়েছেন আজ ।” নাম তাহার শৈলবালা । তাহার নামের আদ্যক্ষর ধরিয়াই দাদামশায় তাহাকে ডাকিয়া থাকেন। প্রথমটা সরল বিশ্বাসে সে হয়ত জিজ্ঞাসা করিয়া ফেলে—“কি লিখেছেন বলুন না ভাই ! পরক্ষণে দাদামশায়ের কৌতুকোজ্জল মুখের উপর দৃষ্টি পড়িতেই শশব্যস্তে—'না, দরকার নেই, আমি শুনতে-চাইনে— বলিতে বলিতে কখনও-বা হাত দিয়া তাহার মুখ চাপিয়া ধরিতে যায়, আর কখনওবা নিজের কানে আঙুল । টিপিয়া ধরে ! কিন্তু তা করিলে কি হয়, দাঙ্গামশায় ততক্ষণে প্রবল হাসিতে ঘর ফাটাইবার উপক্রম করিয়া পাড়াস্কন্ধ শেষের খেয়া २२* লোককে শুনাইয়া বলিতে আরম্ভ করিয়া দেন,—“খবর যে দিয়েচেন ভাই, সে এক চমৎকার!..একটি চুষিকাটি, একটি লাল টুকটুকে বর.' —অসভ্য ! সে ছুটিয়া বাড়ি পলাইয়া যায়। কালীচরণ বাহিরে আসিয়াছে । চকিতে মেয়েটি একটু অগ্রসর হইয়া আসে– “চরণ-কা', আছে ?" একটি মধুর ভঙ্গীতে ঘাড় হেলাইয়া সে জিজ্ঞাসা করে। কালীচরণ দাড়াইয়া চিঠির গোছা নাড়িতে থাকে, আর শৈলবালার বুক টিপ, ঢিপ করিয় ওঠে—যদি তাহার বাবার চিঠি হয় ? আর যদি তাহাতে লেখা থাকে, যে, শীঘ্রই— না, অত আশা করিতে নাই। একটি গভীর নিঃশ্বাস ত্যাগ করিয়া যথাসম্ভব উদাসীনের ভাব বজায় রাখিয়া সে হাত পাতিয়া দাড়ায় । আশা বা নিরাশ মামুষের মনে । বাস্তব সেখানে পিছন ফিরিয়া থাকে। তাই সে তাহার হস্তস্থিত পত্রটির উপর দৃষ্টিক্ষেপ করিতেই একটি আনন্দোচ্ছ্বসিত অস্ফুট শব্দ করিয়া ওঠে••• তাহার বাবাই পত্র দিয়াছেন, এবং যাহ। সে কিছুক্ষণ আগে আশা করিতেও ভয় পাইয়াছিল, পোষ্টকার্ডখানির বিষয়-পৃষ্ঠায় কয়েক ছত্র স্থপরিচ্ছন্ন লেখার ভিতর দিয়া আশাতীত সম্ভাবনায় তাহাই মধুর ও প্রোজ্জল সত্যে স্পষ্ট হইয় ওঠে— আপিসের কি এক কাজে আগামী শুক্রবার তিনি কলিকাতায় যাইবেন, ফিরিবার পর্থে শনিবার বৈকালে একবার বাড়ি ঘুরিয়া আসিবেন ইচ্ছা আছে। ছেলেমেয়েদের জন্ত কাপড়চোপড়ের প্রয়োজন থাকিলে পত্রপাঠ যেন তাহাকে সংবাদ দেওয়া হয়। - দুই-তিন ছত্রই ত লেখা ! কিন্তু তাহার মনে হয়, দুইতিন বৎসর ধরিয়াও সে যেন তাহা পড়িয়া যাইতে পারে। তাহার চোখের দৃষ্টি উজ্জল হয়, তাহার ঠোট কঁাপিয়৷ ওঠে, সে চিঠিখানি তাহার পুথিপত্রের সাথে বুকে চাপিয়া ধরিয়া বাড়ির পথে ফ্ৰত অগ্রসর হয়। . . . . .