পাতা:প্রবাসী (দ্বাত্রিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৩৫৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

উজি চিনলাম, ইরা ! আট বছর আগে ইরাকে যেমন দেখেছি, ঠিক তেমনি আছে! • মেয়েটি গাড়ী থেকে নেমে চাকরকে বললে, কে ? ইরার গলার স্বর একটু বলেছে। আমি এগিয়ে গিয়ে বললাম,—আমি ! চিনতে পাচ্ছ ? কেমন আছ ইরা ? বিস্মিত হয়ে সে আমার মুখের দিকে তাকালে, তারপর মান হেসে বললে,—ও আপনি ! আপনি স্থহৎদা ! আমি রেব ! —রেবা ! কত বড় হয়েছ ! ঠিক তোমার দিদির মত দেখতে হয়েছ ! দিদি কোথায় ? —দিদি । দিদি ! তার মুখ ছলছল ক’রে উঠল। — কি ? রেবা ! —দিদি ! দিদি নেই, ছ'মাস হ’ল চ'লে গেছেন। আপনি দেশে ফিরেছেন শুনেছিলাম, কিন্তু আপনার ঠিকান কারুর কাছ থেকে জানতে পারলাম না, একটু খবর দিতে পারিনি । —8 | —আসুন ! —ন, আর বসব না, আমি যাই, রাতের ট্রেনেই দিল্লী যেতে হবে। সে কি বলতে যাচ্ছিল, আমার মুখ দেখে ভয় পেলে । একটু পরে বললে,—আজই রাতে যেতে হবে। আচ্ছা চলুন, আপনাকে ষ্টেশনে পৌছে দিয়ে আসি । দাড়িওয়াল চাকরটা মোটরে স্বটকেস বেডিং তুলে দিয়ে সেলাম করলে। এতক্ষণ সে ছিল কোথায় ! বাড়ি ছেড়ে মোটরকারে বার হলাম। বিষ্টি আরম্ভ হ’ল ; ঝোড়ো হাওয়া নদীর এপার থেকে ওপার পর্য্যন্ত মৰ্ম্মভেদী হাহাকারে আর্তনাদ করছে। পেছন ফিরে চাইতে জনশূন্য তৃণশূন্য প্রাস্তরের এক প্রাস্ত হতে অপর প্রান্ত বিদীর্ণ ক’রে বিদ্যুৎ চমকে উঠল ; তার তীব্র চঞ্চল আলোয় দেখলাম, বাড়ির ওপর সেই শীর্ণ কৃষ্ণ বৃহৎ বৃক্ষটি নেই, ঝড়ে ভেঙে পড়েছে। বুঝলাম, তারই ভেঙে d سده ۹ हैब्र ૭૨? পড়ার শব্দে আমি ঘরের নীরব অন্ধকারে চমকে লাফিয়ে উঠেছিলাম, প্রাণ পেয়েছিলাম। শুধু সে গাছের কয়েকটি - শুকনো ডাল বাড়ির পাশে ঝড়ের বাতাসে বড় করুণভাবে জুলছে যেন কোন রোগিণীর অস্থিার দীর্ঘ আঙুলগুলি মড়ে মড়ে হাতছানি দিয়ে ডাকছে, অন্ধকারে আকাশে হাতড়ে হাতড়ে যাকে খুজছে তাকে পাচ্ছে না। সেদিকে আর চাইতে পারলাম না, দু'চোখে জল ভরে এল, সামনে গর্জমান অন্ধকারের দিকে চেয়ে রইলাম। রেবাও চুপ করে আমার গা ঘেসে বসে রইল। সারা পথ কোন কথা হ’ল না । ষ্টেশনে আমাকে নামিয়ে রেব বললে,—দিল্লী হতে ফেরবার পথে নাম চাই কিন্তু । —যদি সময় পাই । —ন, কোন ওজর শুল্ব না ; এবার এলেন, একটু বসলেনও না। চাকরটা ড্রয়িংরুম খুলে দিয়েছিল ? –Ěl, —আলো জেলে দিয়েছিল । জানেন ওটা গাজা না আফিম কি খায় সন্ধ্যেবেলা । —তা ছাড়িয়ে দাও না কেন ? —ছেড়ে গেলে ত! ছাড়াতেও পারি না। ও দিদির বড় প্রিয় ছিল ; দিদিকে বড় ভালবাস্ত ; দিদি মারা যাবার পর ও সারারাত ভূতের মত সারাবাড়ি ঘুরত। আচ্ছ, ওকে দেখে মনে হয় ও গানের কিছু বোঝে ? —কেন বল ত ? —জানেন, দিদির গানের ও এক মস্ত সমজদার । গত বছর দিদি কয়েকটা গান রেকর্ডে দিয়েছিলেন। —-শুনিনি । —গ্রামোফনটা ওর জালায় রাখা দায়, যখনই স্ববিধে পায়, ও দিদির গানের রেকর্ড বাজায়, কিছু বলাও যায় না, বকুলে ফ্যালফ্যাল করে এমন চেয়ে থাকে। আমি আর কিছু বলতে পারলাম না। দিল্লী থেকে ফেরবার পথে এলাহাবাদে নিশ্চয় নামব, কথা দিকে রেবার কাছ থেকে বিদায় নিলাম ।