পাতা:প্রবাসী (দ্বাত্রিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৩৯৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ভাত্র একজন সুখী অপরে দুঃখী এই যে প্রত্যক্ষ ঘটনা ইহার কারণ কি ? কেন এই অসামঞ্জস্ত ? যদি মানিয়া লইতে পরিতাম যে ইহাই স্বাভাবিক প্রাকৃতিক নিয়ম তবে গোল মিটিয়া যাইত। পৃথিবীতে কোন দুই বস্তুরই অবস্থা এক প্রকারের নহে তবে মামুষের অবস্থাই বা এক প্রকার হইবে কেন ? সোনা কেন সোন, লোহা কেন লোহী, চন্দন ও পঙ্ক কেন এক নয়—এ সব প্রশ্ন কেহ করে না ; তবে মাচুষের বেলাই এ প্রশ্ন হয় কেন ? ইহার কয়েকটি কারণ আছে । প্রথমতঃ মানুষ কষ্টে পড়িলেই তাহা হইতে উদ্ধারের চেষ্টা করে ও পরের স্থখ দেখিয়৷ তাহার মনে মাৎসর্য্য ভাবের উদয় হয় এজন্যই সে পরের অবস্থার সহিত নিজের অবস্থার তুলনা করে। যে বিজ্ঞানবিৎ সাম্যবুদ্ধিযুক্ত র্তাহার মনেও এই প্রশ্ন উঠিবে সত্য, কিন্তু তাহার কাছে পঙ্ক ও চন্দন এক নহে কেন, আর দুই ব্যক্তির অবস্থা এক প্রকারের নয় কেন, এই দুই প্রশ্নই সমান। এই সমস্যাই ঋবির মনে পৃথিবীতে নানাত্ব কেন প্রশ্ন তুলিয়াছিল। ঋষিরা তাহার যে উত্তর দিয়াছেন তাহ অতি আশ্চৰ্য্য । তাহারা ধ্যানযোগে দেখিলেন 'নেহ নানাস্তি কিঞ্চন’ অর্থাৎ পৃথিবীতে নানাত্ব নাই। এক ও অদ্বিতীয় সত্তা মাত্র আছে । মায়াবশে আমরা নানাত্ব দেখি। সাধারণ বুদ্ধিতে এ উত্তর প্রহেলিকাবৎ ও অবিশ্বাস্ত । সাধারণ মানুষ নানাত্ব উড়াইয়া দিতে পারে না । ইট কাঠ পাথরে নানাত্ব থাকুক তাহাতে কিছু আসে যায় না, কিন্তু স্বর্থী ও দুঃখীর ভিতর যে পার্থক্য তাঁহ৷ অবহেলা করা যায় না। এজন্যই অন্ত সব বিষয়ে নানাত্ব স্বাভাবিক স্বীকার করিয়া মানুষের বেলাই তাহার কারণ অনুসন্ধানের দরকার হয় । ইহাকে স্বাভাবিক বলিয়া মানিয়া লইলে জীবন দুৰ্ব্বহ হয় ; অতএব প্রশ্ন উঠে কেন এই অবিচার ? পঙ্ক ও চন্দনের প্রভেদ যেমন এক অজ্ঞাত ও অজ্ঞেয় শক্তির প্রভাবে উৎপন্ন, বিভিন্ন মানুষের অবস্থাভেদও সেইরূপ অজ্ঞেয় শক্তির প্রভাবে উৎপন্ন মানিতে পারিলে কথঞ্চিৎ শাস্তি হইত ; কোন কোন সাধকের মনে এই ভাব জাগে সত্য, কিন্তু সাধারণ মানুষের কাছে এই অজ্ঞেয় শক্তি সৰ্ব্বশক্তিমানের শক্তিরই এক অংশ। সে ভগবানকে একেবারে অজ্ঞেয় গীত \ጫፅ বলে না, ভগবানের অন্ততঃ দুইটি গুণ সম্বন্ধে সে স্থিরনিশ্চয় ধারণা পোষণ করে। একটি তাহার সর্বশক্তিমত্ত্বা ও দ্বিতীয়টি তাহার পরমকারুণিকত। পরম কারুণিক ভগবানের রাজত্বে এক ব্যক্তি সুখী ও এক ব্যক্তি দুঃখী কিরূপে হইতে পারে । ভগবান যখন করুণাময় তখন এজন্মের দুঃখ পরজন্মে ঘুচিবে। এ জন্মেই বা দুঃখ কেন ? তাহার উত্তর গত জন্মের পাপের ফলে । ভগবান করুণাময়ও বটেন ন্যায়বানও বটেন । এ জন্মে দুষ্কাৰ্য্য করিয়া যে আপাততঃ সুখ ভোগ করিতেছে পরজন্মে সে নিশ্চয়ই কষ্ট পাইবে । ইহাই অনেকের সাধু পথে থাকিয়া কষ্টভোগ করিবার সান্তুনা । জন্মান্তরবাদ মানিলে ভগবানের কারুণিকতা ও ন্যায়বত্ত বজায় রহিল ও অবস্থাভেদের সন্তোষজনক ব্যাখ্যাও পাওয়া গেল । কিন্তু দুঃখের সহিত বলিতে হইতেছে, সাধারণের কাছে পুনর্জন্মবাদের এই বিচার গ্রাহ হইলেও বিজ্ঞানীর কাছে তাহা যুক্তিসহ বলিয়া বিবেচিত হইবে না । বিজ্ঞানী বলিবেন নানাত্ব মানিলে ভগবানকে পরমকারুণিক, ন্যায়বান ও সৰ্ব্বশক্তিমান বলা যায় না। পরমকারুণিক মানে যিনি সামান্য কষ্টও নিবারণ করেন । একজন পোলাও-কালিয়া থাইতেছে ও আর এক জনের সামান্য শাকান্ন জুটিতেছে না। এতটা প্রভেদ দূরে থাক, তোমার রোলস-রইস মোটরকার আর আমার মিনার্ভা-কার ও সেজন্তু আমার যে ঈর্ষার কষ্ট ভগবান পরমকারুণিক ও ন্যায়বান হইলে তাহাও নিবারণ করিতে বাধ্য। পৃথিবীতে যতদিন তিলমাত্র কষ্টও কাহারও মনে থাকিবে ততদিন ভগবানকে পরমকারুণিক বলা চলিবে না। পরমকারুণিক ব্যক্তি যদি অক্ষম হন তাহ। হইলে তাহাকে দোষ দেওয়া যায় না । কিন্তু ভগবান সৰ্ব্বশক্তিমান । তাহার দোষক্ষালনের উপায় নাই । পিতা পুত্রকে তাহার মঙ্গলের জন্য শাসন করেন বা কটু দেন, ভগবানও সেইরূপ আমাদের মঙ্গলের জন্যই আমাদের কটু দেন ; এ যুক্তিও নিতান্ত অসার । ছেলেকে মিষ্ট কথা বলিয়া সৎপথে আনিতে পারিলে তাহাকে পিতা কখনই তাড়না করেন না। অষপ্ত মিষ্ট কথায় সৎপথে আন অসম্ভব হইলে বা অন্য উপায় না জানা থাকিলে তাড়নায় দোষ নাই। সৰ্ব্বশক্তিমান