পাতা:প্রবাসী (দ্বাত্রিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৪৮২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

৭৬২ S99āు রাত্রি কখনও জাগরণে কখনও নিদ্রার মধ্যে এক অপূৰ্ব্ব আনন্দের অনুভূতি মনকে আচ্ছন্ন করিয়া রহিল। চৈতন্যচরিতামুতে কুলীন গ্রামবাসীকে বৈষ্ণবের লক্ষণ সম্বন্ধে মহাপ্রভু যাহা উপদেশ দিয়াছিলেন বলিয়া লিখিত আছে, সেই কথাটিই বার-বার মনে পড়িল – “যাইরে দেখিলে মুথে আইসে কৃষ্ণনাম তীরেই জানিবে তুমি বৈষ্ণবপ্রধান ।" এক এক জন মহাপ্রাণ মাঝে মাঝে পৃথিবীতে আবিভূতি হন, তাহার নিজের জীবনের আলো দিয়া অন্ধকারে মগ্ন শত শত জনের দৃষ্টিপথের বাধা দূর করিয়া দেন। আমরা যেন চোখ থাকিয়াও দৃষ্টিহীন, সৰ্ব্বসম্পদের মধ্যে থাকিয়াও দরিদ্র, গৃহে থাকিয়াও বিদেশীর মত জীবন কাটাই । শুধু তাও নয় এই ভাবে নিজের অধিকার হইতে বঞ্চিত হইয়া যে জীবন কাটাইতেছি তাহাও নিজে জানি না । তাই নিবেদিতার দৃষ্টির আলোর অনেক কিছুই নুতন করিয়া দেখিতে পাইয়। অবাক হইয়া ভাবিয়াছি, “একি, এ ত এমন ভাবে আগে জানি নাই, আগে দেখি নাই ?” নিবেদিতার রামায়ণ আলোচনায় আমরা রামায়ণের প্রত্যেক চরিত্রের বিশিষ্টত নূতনভাবে অনুভব করিয়াছি, মহাভারতের চরিত্রগুলির সম্বন্ধে সেইরূপ অমুভব করিয়াছি। আর যখন তিনি ইতিহাস পড়াইতেন, তাহার সেই ইতিহাসের অধ্যাপনা তাহার ছাত্রীদের মনের সম্মুখে যেন এক নূতন রাজ্যের হুয়ার খুলিয়া দিত। দেশের উপর ভালবাসা ও জাতীয়তা যে মাঙ্গুষের জীবনকে কতখানি উন্নত করে তাহা তিনি সজীব চিত্রের মত র্তাহার ছাত্রীদের চোখের সম্মুথে আঁকিয় দিতেন। রাজপুতানার ইতিহাস র্তাহার বিশেষ প্রিয় ইতিহাস ছিল । দেশের জন্য জীবন উৎসর্গ করিতে মৃত্যুভয়হীন রাজপুত যোদ্ধার যে উৎসাহ সেই উৎসাহের বর্ণনা করিতে গিয়া তিনি উৎসাহে ও আননে এত মাতিয়া উঠিতেন যে তিনি যে স্কুল ঘরে ছাত্রীদের ইতিহাস পড়াইতেছেন , সে-কথা যেন ভুলিয়াই যাইতেন । তিনি অনর্গল বলিয়া যাইতেন, তাহার বাংলা ভাষায় অপটুত্ব সত্বেও তাহার কথা বুঝিতে ছাত্রীদের কিছু বুধি হইত না। ওই শোন, একলিঙ্গদেবের মন্দিরদ্বারে জয়ধ্বনি, "ভগবান একলিঙ্গের জয় হোক ৷” রাজপুত যোদ্ধাগণ যুদ্ধে চলিয়াছেন, হয় তাহার দেশের স্বাধীনতা রক্ষা করিবেন, না হয় মরিবেন, আজ র্তাহারা এই পণ করিলেন ! তাহদের কপালে দেখ ওগুলি কিসের ফোটা ? ওগুলি দধি ও চন্দনের ফোটা ! তাহাদের জননীগণ, ভগিনীগণ ও পত্বিগণ ঐ জয়তিলক তাহাদের কপালে পরাইয়া দিয়াছেন । সেই সব বীররমণী বলিয়াছেন, “যাও বীর যুদ্ধে যাও, তোমার দেশকে বাহুবলের দ্বারা রক্ষা কর, নতুবা দেশের জন্ত প্রাণ দাও। আনন্দের সহিত বীরের যাহা কাজ তাহাই সাধন কর, এবং আমরাও বীররমণীর যাহা কাজ তাহা করিব।” রমণীগণের ঐ সকল উৎসাহ-বাক্য বীরগণকে আরও অধিক আনন্দিত ৪ বলশালী করিয়াছে। ঐ দেখ,ভগবান একলিঙ্গের পুরোহিত মন্দির হইতে বাহির হইলেন। তিনি বৃদ্ধ হইয়াছেন, কিন্তু তথাপি সতেজ ও উন্নতদেহ রহিয়াছেন। তঁfহার মস্তকের কেশ শুভ্ৰ, পরিধেয় বস্ত্রও শুভ্র । পূজনীয় সেই ব্রাহ্মণ একলিঙ্গের আশীৰ্ব্বাদী অর্ঘ্য আনিয়াছেন, তাহ। সকল বীরকে দিতেছেন ও সকলে সুমে মস্তক নত করিয়৷ গ্রহণ করিতেছেন এবং মস্তকাবরণ উষ্ণীষে তাঙ্গ রাখিতেছেন । যুদ্ধে জয় অথবা মাতৃভূমির জন্য বীরের ন্যায় জন্য মৃত্যুলাভ—ঐ শ্রেষ্ঠ অৰ্ঘ্য এই আশীৰ্ব্বাদই বহন করিয়৷ আনিয়াছে । আঃ! অতি গৌরবান্বিত এই ভারতভূমি, গৌরবান্বিত ভারতীয় বীরগণ এবং গৌরবান্বিত ভারতের কন্যাগুলি ! মাস্থ্য ইহা অপেক্ষা আর অধিক সৌভাগ্য কি কল্পনা করিতে পারে, এইরূপ বীরের মত বাচাই সকল প্রকার বঁাচার মধ্যে শ্রেষ্ঠ এবং বীরের মত মরাই মৃত্যুর মধ্যে শ্রেষ্ঠ । আবার জয়চাদের বিষয় বলিতে গিয়া নিবেদিতার প্রসন্ন মুখ দুঃখে মান হইয়া যাইত। নিবেদিতা বলিতেন, “জয়চাঁদ একজন রাজপুত যোদ্ধা, কিন্তু তিনি শত্রুর পদতলে দেশের সন্মান বিক্রয় করিলেন । ইহা কিরূপে ঘটিল ? কেবল ঈর্ষার জন্য ! ঈর্ষ মহাপাপ খল সপের মত র্তাহার কানে মন্ত্রণ। দিল, “দেশশত্রুর আশ্রয় লও ও তাহার সাহায্যে নিজের শক্রকে ধ্বংস কর । হায়, কি দুঃখের বিষয়! জয়চাদ ক্ষত্রিয় হইয়া ইহা ভুলিলেন যে