পাতা:প্রবাসী (দ্বাত্রিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৫৪৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

আশ্বিন শৃঙ্খল ۹۹ سوا কলম সংগ্ৰহ করিয়া আনিয়া দেশে পিতাকে চিঠি লিখিতে বসিল | o সে আজ বুঝিয়াছে, ভালবাসিয়া পৃথিবীর কোনও জিনিষকে অন্তরের পরম পরিচয়ের মধ্যে সে কখনও লয় নাই, নিজেরও মধ্যে অপরিচয়ের নিবিড় অন্ধকার এমন করিয়া তাই তাহাকে বারম্বার আচ্ছন্ন করে । স্থির করিয়াছে, এবারে হৃদয়ের রুদ্ধদ্বার সবকয়টাই খুলিয়৷ দিতে হইবে । জীবনে যাহ। কিছু আসিবে, সমাদরে ডাকিয়া আনিয়া মনের চতুৰ্দ্দিকে দাড় করাইয়া দিবে। সৰ্ব্বদা সচেতন উপলব্ধিকে জাগ্ৰত করিয়া রাখিবে । পৃথিবীকে, পৃথিবীর মানুষকে ভালবাসিবে। কিন্তু চিঠি লিখিতে বসিলেই অজয়ের মাথায় ধেন বাজ পড়িত। ঐতিহাসিক তথ্য এবং কবিতা ভিন্ন আর-কিছু যে কাগজের পাতায় কেমন করিয়া লেখা যাইতে পারে ইহ। সে কিছুতেই ভাবিয়া পাইত না । "শ্রীচরণেষু” পৰ্য্যন্ত লিখিয়া কলম হাতে করিয়া ক্রমাগত স্ব-হাতের আঙ্গুল-কয়টাকে মাথার রাশাকৃত চুলের মধ্যে সে চালনা করিতে লাগিল, অনেক ভাবিয়া ৪ কি করিয়া যে, মুরু করিবে তাহ স্থির করিতে পারিল ন। সুভদ্র আসিয়া তাহাকে উদ্ধার করিল, বলিল, “প্ৰভা তোমাকে ভাইফোটার প্রণামী এই কাপড়থান পাঠিয়েছে।” অজয় উঠিয়া কাপড়টি লইল । বাহিরের কোলাহলে আবৃত হইয়। ছোটঘরটিতে যে-একটুখানি স্তব্ধতা বিরাজ করিতেছিল তাঁহারই মধ্যে কয়েক মুহূৰ্ত্ত নীরবে নতমস্তকে দাড়াইয়া থাকিয়া মৃদুরবর্কিনী কল্যাণীর কল্যাণ-ইচ্ছাকে সে সমস্ত মন দিয়া অমুভব করিল । । ফিরিয়া লিখিবার ডেস্কে বসিতে যাইবে এমন সময় হাতের ছড়িটা দিয়া ভেজানো দরজাটাকে ঠেলিয়া খুলিয়া বিমান আসিয়া ঘরে ঢুকিল। দরজার দিকে ফিরিয়া কহিল, “এস নন্দ !” ননলাল বাহিরে দাড়াইয়া অত্যন্ত ইতস্তত: করিতে লাগিল । বিমান আবার কহিল, "এস না, ওখানে দাড়িয়ে কি করছ ?” তখন সাবধানে বাদামী রঙের ক্যানভাসের জুতাজোড়া খুলিয়া বাহিরে রাথিয়, পাপোষে পা রগড়াইয়া অত্যন্ত আড়ষ্টকাতর ভাবে কাপেটবিছানো ঘরটিতে ঢুকিয়া পড়িল । বিমান কহিল, “ইনি সুভদ্র বন্দ্যোপাধ্যায়, আমার বন্ধু । আর ইনি অজয় রায়, লেখক ।” নন্দ অজয়ের লেখা পড়িয়াছিল। তাহার সঙ্গে পরিচিত হইবার সৌভাগ্যে বিহ্বল হইয়া অত্যন্ত সলজ করুণ মুখে হাসিতে লাগিল । সুভদ্র কহিল, "পরিচয়টা একতরফা শেষ কোরো না ।” নন্দের সম্পূর্ণ নামটা বিমানের মনে ছিল না, তবু বেশ সপ্রতিভ ভাবেই কহিল, “এ নন্দলাল। আমার বিশেষ পরিচিত। আই-এস-সি পড়ে।” নন্দ লজ্জিত মুখে কহিল, “আই-এ ” সে-রাত্রে শুইয়া শুইয়া অজয়ের নিজেকে নিজের কাছে রূপকথার রাজপুত্রের মত অপরূপ রহস্যময় বলিয়া বোধ হইল । পারসীক উড়ন-গালিচার মড একখানি জরিপাড় ঢাকাই ধুতিকে আশ্রয় করিয়া তাহার মন কোন সুদূর সৌন্দৰ্য্যলোকে উধাও হইয়া গেল এবং সেখানে রাশি রাশি রঙীন মেঘের মধ্যে বিচরণ করিয়া বেড়াইল । সে জানিত তাহাদের দেশের সামাজিক প্রথা অমুখায়ী অল্পবয়স্ক অতিথিকে পরিধেয় উপহার দেওয়া অত্যন্তই সাধারণ এবং স্বাভাবিক ব্যাপার । ইহা খুবই ভাব যাইতে পারে, যে, সে তাড়াতাড়ি চলিয়া আসাতে আতিথেয়তার এই যেটুকু ক্রটি রহিয়৷ গিয়াছিল, সুভদ্রের মাতা ভাইফোট। উপলক্ষ্য করিয়া প্রভাকে দিয়া তাহ সারিয়া লইয়াছেন । কিন্তু তাহার লোলুপ মন কিছুতেই এই ঘটনাটিকে সামান্ত বলিয়া মানিতে চাহিল না । একটি স্নিগ্ধ তরুণ মনের মধ্যে ভাইফোটার পবিত্র সুন্দর উৎসবালোকিত আসনটিডে তাহার স্থান হইয়াছে, প্রভা তাহাকে ভাবিতেছে, সেখানে তাহার মনের সৌন্দর্ঘ্য-প্রস্রবণে সে অবগাহন করিতেছে, স্নেহমণ্ডনে স্নিগ্ধ হইতেছে, ইহা ভাবিতে তাহার হৃদয় স্পদিত হইতে লাগিল। কাপড়খানিকে বালিশের নীচে রাখিয়া সে শুইল। নিদ্রাভঙ্গে সমস্তরাত কি স্বপ্ন দেখিয়াছে তাহা মনে আনিতে পারিল না, কিন্তু দেখিল, তাহার সমস্ত দেহযন মধুময় হইয়া আছে। ( ক্রমশ: )