পাতা:প্রবাসী (দ্বাত্রিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৫৮৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

و راس নেত্রযুগলকে যথাসম্ভব বিস্ময়াবিষ্ট করিয়া বদন পিছন ফিরিয়া বলিল—আশ্চয্য ওষুধ দাদা, বুঝলে, অব্যখ—এখন বিয়ে-থ দিয়েছি, বেশ নিশ্চিন্তে বউ নিয়ে ঘর করছে, তোমায় বলব কি—ঘরের বাইরে পা-টি বাড়ায় না— মাইরি, ওর মা বলে—থাক্, কাজ না করুক, বেঁচে থাক—তাই ঢের, কি বল ? ঔষধটি তারিণীও জানিয়া লইল । বিশেষ কিছুই নয় ; ডুমুরদহের পীর সাহেবের কাছ হইতে শেকড় আনিয়া বাটিয়া বুকের রক্ত দিয়া একশ’টি বিল্বপত্রে ছেলের নাম লিখিতে হইবে । সেই রক্ত শুকাইতে-না-শুকাইতেই ছেলে ফিরিয়া আসে । তারপর পীর সাহেবের লোহার বালা তাহার হাতে পরাইয় দিতে হয় । মাত্র এই ৷ একটি পয়সা খরচ নাই ; স্বামী চলিয়া গেলে স্ত্রীর এবং ছেলে চলিয়া গেলে মা’র। তা মা’র পরিবৰ্ত্তে বাপের রক্তেও চলে | বদন বলিল—একশ’ট লিখতেও হবে না—বুঝলে দাদা-গুটি-পঞ্চাশেক পত্তর শেষ না-হতেই দেখবে স্থড্র মুড় ক’রে ছেলে তোমার ঘরে ঢুকছে ; কেন, আমাদের গা’র পিরোনাথের কি হ’ল... কোন এক প্রিয়নাথের কি হইয়াছিল বদন সেই গল্প করিল, কিন্তু তারিণীর কানে তাহার একবর্ণও ঢুকিল না ; তাহার মনে হইতেছিল হাতের কাছে এমন দৈব-ঔষধ থাকিতে সে কি-না ভাবিয়া মরে । গাড়ী সার বাধিয়া চলিতেছিল। বেল পড়িয় আসিয়াছে ; পশ্চিমের আকাশখানিতে সূৰ্য্য ডুবিয়া যায় যায়। রাস্তার দু-পাশে ক্ষেত ; জমি নিড়াইবার সময় ; চাষার কাজ শেষ করিয়া চলিয়া গিয়াছে। কিন্তু তারিণীর এসব দিকে নজর নাই ; আজ কোথায় নিশ্চিন্ত মনে বসিয়া বসিয়া রামায়ণ পড়িবে তা না ছেলের জন্যে— কপালের দুর্ভোগ, নহিলে গ্রামে ত এত ছেলে রহিয়াছে, জানোয়ার হইতে হয় কি তাহরটাই ! তাও দশটা নয়, পাঁচটা নয়—ওই একটি মাত্র !

  • ারিণী বলিল—ছোটবেলা থেকেই জানতাম কিছু

.巒 -- S99āు হবে না ওর, পাঠশাল শেষ ক'রে শহরের বড় ইস্কুলে ভৰ্ত্তি ক’রে দিলাম বুঝেছ—মইনে ফি মাসে গুণছি— গুণছি ত গুণছিই পড়ার নামে এই—বলিয়া তারিণী বৃদ্ধাঙ্গুষ্ঠ দেখাইল । —ত না পড়িসূ বাপু, না পড়িল্‌-লেখাপড় কি সকলের হয়—ত হয় না ...কিন্তু মাসে মাসে মাইনে দিচ্ছি—ইস্কুলে যাবি ত—কোটাঘরে বসবি ত, বেশ দিব্যি ঠাণ্ডা ঘর—চেয়ার বেঞ্চি -ত না—যখনই গেছি— দেখি, সববাই আছে আমাদের জয়চন্দোর নেই—কোথায় রদূরে রদুরে ঘুরে বেড়াচ্ছেন ; আর-জন্মে চাষ ছিল— বুঝলে কি-না ভায়—লেখা-পড়া ওর সইবে কেন ? মুকুন যে জায়গাটি নির্দেশ করিয়া দিয়াছিল ঠিক সেই জায়গাটি ; উত্তর-মুখে বটগাছ ; তাহারই বঁ-দিকে একট। রাস্ত চলিয়া গিয়াছে । আর সোঞ্জ পথটি চলিয়া গিয়াছে বরাবর চাপাতলার হাটের দিকে— বদন গাড়ী থামাইল । বলিল—দেখো—আস্তে—ই] নাবে!—ও-কিছু বলবে না—কিছু ভয় নেই। তারিণী চাদর ও ছাতি লইয়া নামিল । সারবন্দী গাড়ীর দল তাহাকে ফেলিয়। রাখিয়া আবার চলিতে আরম্ভ করিল । বদনও দেখিতে দেখিতে অনেক দূর চলিয় গেল । বাম দিকের রাস্তায় লোক-চলাচল নাই । সেই পথটা ধরিল। মুকুন্দ বলিয়াছিল—ওইখানেই শান-বাধান পুকুরের উপরকার পৈঠাতে জয়াকে বসিয়া থাকিতে দেখিয়াছে । অন্ধকার হইয়া আসিয়াছে—সরু রাস্ত ঘুরিয়া ফিরিয়া আঁকিয়া-বাকিয়া চলিয়াছে—হঠাৎ একটা মোড় ফিরিতেই নজরে পড়িল পুকুর । পুকুরের পরেই শান-বাধীন ঘাট—কিন্তু উপর নীচে কোন পৈঠাতেই কেহ বসিয়া নাই । তারিণী কাছে আসিয়া ভাল করিয়া নজর করিয়া দেখিল, উপরকার পৈঠার উপর কেবল কয়েকটা মুড়ি ইতস্তত: ছড়ান রহিয়াছে ; মুকুন্দ তাহা হইলে মিথ্যা বলে নাই । * চারিদিকে কোথাও কেহ নাই। পাড়ের বড় বড় তারিণী