পাতা:প্রবাসী (পঞ্চত্রিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/৭৭৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

स्वोछुम আমার দাদারা দুই একজন বিশ্ববিদ্যালয়ের সিংহদ্বার একটুখানি পেরিয়ে ফিরে এসেছেন ডিগ্রিবর্জিত নিভৃতে। সেটা ভালো করেছেন তা আমি বলি নে। কিন্তু তার ফল হয়েছিল এই যে, ডিগ্রিলাঞ্ছিত শিক্ষা ছাড়া শিক্ষার আর কোনো পরিচয় গ্রাহ নয়, এই অন্ধ সংস্কারটা আমাদের ঘরে থাকতেই পরে নি। আমার ভাইরা দিনরাত নিজের ভাষায় তত্ত্বালোচনা করেছেন, কাব্যরস আস্বাদনে ও উদ্ভাবনে তারা ছিলেন নিবিষ্ট, চিত্রকলাও ইতস্তত অঙ্কুরিত হয়ে উঠেছে, তার উপরে নাট্যাভিনয়ে কারো কোনো সঙ্কোচমাত্র ছিল না। আর সমস্ত ছাড়িয়ে উঠেছিল সঙ্গীত। বাঙালীর স্বাভাবিক গীতমুগ্ধতা ও গীতমুখরতা কোনো বাধা না পেয়ে আমাদের ঘরে যেন উৎসের মত উৎসারিত হয়েছিল। বিষ্ণু ছিলেন ধ্রুপদীগানের বিখ্যাত গায়ক। প্রত্যহ শুনেছি সকালে সন্ধ্যায় উৎসবে আমোদে উপাসন-মন্দিরে তার গান, ঘরে ঘরে আমার আত্মীয়ের তন্থর কাধে নিয়ে তার কাছে গান চর্চা করেছেন, আমার দাদারা তানসেন প্রভৃতি গুণীর রচিত গানগুলিকে আমন্ত্রণ করেছেন বাংলা ভাষায়। এর মধ্যে বিস্ময়ের ব্যাপার এই, চিরাভ্যস্ত সেই সব প্রাচীন গানের নিবিড় আবহাওয়ার মধ্যে থেকেও তারা আপন মনে যে-সব গান রচনায় প্রবৃত্ত হয়েছেন তার রূপ তার ধারা সম্পূর্ণ স্বতন্ত্র, গীতপণ্ডিতদের কাছে তা অবজ্ঞার যোগ্য। রাগরাগিণীর বিশুদ্ধতা নষ্ট করে এখানেও তারা ব্রাত্যশ্রেণীতে ভূক্ত হয়েছেন। গান বাজনা নাট্যকলাকে অক্ষুণ্ণ সম্মান দেবার যে দীক্ষা পেয়েছিলেম তার একটা বিশেষ পরিচয় দিই। আমার ভাইঝিরা শিশুকাল থেকে উচ্য অঙ্গের গান বিশেষ যত্নে iশখেছিলেন। সেটা তখনকার দিনে নিন্দাহঁ ন হলেও বিস্ময়ের বিষয় ছিল। আমাদের বাড়ির প্রাঙ্গণে প্রকাগু নাট্যমঞ্চে শিক্ষা ও সংস্কৃতিতে সংগীতের স্থান AN9 র্তারা যেদিন গান গেয়েছিলেন সেদিন সামাজিক হাওয়া ভিতরে ভিতরে অত্যন্ত ক্ষুব্ধ হয়েছিল। সৌভাগ্যক্রমে তখনকার দিনের খবরের কাগজের বিষদাত আজকের মতো এমন উগ্র হয়নি, তাহলে অপমান মারাত্মক হয়ে উঠত। তার পরে এই জাতীয় অত্যাচার আরো ঘটেছিল। এর চেয়ে উচ্চ সপ্তকে নিন্দা পেয়েও সঙ্কোচ বোধ করি নি। তার কারণ কেবলমাত্র কলেজি বিষ্ঠাকে নয় সকল বিদ্যাকেই শ্রদ্ধা করবার অভ্যাস আমাদের পরিবারে প্রচলিত ছিল । আমাদের দেশের শিক্ষা-বিভাগ কলাবিদ্যার সম্মানকে শিক্ষিত মনে স্বাভাবিক ক’রে দেবেন এই নিবেদন উপস্থিত করবার অভিপ্রায়ে এই ভূমিকামাত্র আজ প্রস্তুত করে এনেছি। আর ধা-কিছু আমার করবার আছে সে নানা অসামর্থ্য সত্ত্বেও আমার বিদ্যালয়ে আমি প্রবর্তিত করেছি। মানুষ কেবল বৈজ্ঞানিক সত্যকে আবিষ্কার করে নি, অনিৰ্ব্বচনীয়কে উপলব্ধি করেছে । আদিকাল থেকে মামযের সেই প্রকাশের দান প্রভূত ও মহার্ঘ। পূর্ণতার আবির্ভাব মায়ব যেখানেই দেখেছে কথায়, স্বরে, রেখায়, বর্ণে, ছন্দে, মানব সম্বন্ধের মাধুর্ঘ্যে, বীৰ্যে, সেইখানেই সে আপন আনন্দের সাক্ষকে অমর-বাণীতে স্বাক্ষরিত করেছে; শিক্ষার্থী যারা তারা সেই বাণী থেকে বঞ্চিত না হোক এই আমি কামনা করি ; শুধু উপভোগ করবার উদেশে জগতে জন্মগ্রহণ করে সুন্দরকে দেখেছি, মহৎকে পেয়েছি, ভালবেসেছি ভালবাসার ধনকে, এই কথাটি মাহুষকে জানিয়ে যাবার অধিকার ও শক্তি দান করতে পারে এমন শিক্ষার সুযোগ পেয়ে দেশ ধন্ত হোক, দেশের মুখ দুঃখ আশা আকাক্ষ অমৃত অভিষিক্ত গীতলোকে অমরত্ব লাভ করুক।* SSAS SSAS SSAS SSAS SSAS SS SS * বাংলার দক্ষিসঙ্গের প্রথম অধিবেশনে ৮ই ফেব্রুয়ারী ১৩৩৬ দত্ত