পাতা:প্রবাসী (পঞ্চত্রিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৪৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

NLo আইভি দুই হাতে রবার্ট-এর ইটু জড়াইয়া ধরিল এবং অশ্রীতে দুই চক্ষু প্লাবিত করিয়া কেবলই বলিতে লাগিল, "রবার্ট, রবার্ট, আমার প্রির রবার্ট, এবং এই বলিয়া চুম্বনে চুম্বনে রবার্টকে প্লাবিত করিয়া দিল । মুথেন্দ্রলাল বাবু প্রেমের এই বিচিত্র অভিনয় দেখিয়া বিচলিত হইলেন । বহু বৎসর ব্যাপিয়া তিনি আলুপিন হইতে ষ্টীম এপ্লিন পৰ্য্যস্ত রেলের মাল-তালিকা-পুস্তকের যাবতীয় পদার্থের সহিত আস্তেীপান্ত পরিচিত ছিলেন ; কিন্তু নরনারীর হৃদয়-উদ্ভূত এই অপূৰ্ব্ব উচ্ছ্বাসের সন্ধান তিনি কোন তালিকাতেই খুজিয়া পাইলেন না । ইহাই কি ভালবাসা—এই নারী কি চায় ? রবার্ট কিঞ্চিৎ বিরক্ত হইয়া জিজ্ঞাসা করিল,—‘বাবু, সুখেঞ্জলাল, এ আপনার ঘরে প্রবেশ করিল কেন ? ‘তোমাকে দেখিতে। মিস আইভি জনিত তুমি রাত্রিতে এ-ঘরে শোও ; তাই সে প্রায় প্রতি রাত্রেই এই বাংলোর চারিদিকে ঘুরিয়া বেড়ায়, আমি কালও ইহাকে দেখিয়াছি।’ “এ আপনি বিশ্বাস করেন ?” “নিশ্চয়ই করি । আইভি তোমাকে ভালবাসে ; তুমি তাহাঁকে গ্রহণ কর।’ ‘বাবু সুখেঞ্জলাল, আপনি সরল হৃদয় হিন্দু, আমাদের সমাজের কথা জানেন না । এখানে ভালবাসার মুল্য বেশী নয় । আজি আইভি আমাকে ভালবাসে, কাল সে আর এক জনকে ভালবাfসবে ।” সুখেঞ্জলাল বাবু ও আইভি একসঙ্গে বলিয়া উঠিল, “মিথ্যা কথা।” রবার্ট বলিতে লাগিল, “আমিও একদিন আইভিকে ভালবাসিতীম ; তখন আমি উপার্জন করিতাম, এখন কাহাকেও ভালবাসিবার মত আর্থিক অবস্থা আমার নয় । বিশেষতঃ একদিন এক জনকে ভালবাসিলেই কি তাহাকে চিরজীবনের জন্ত গ্ৰহণ করিতে হইবে ? আমরা রোমান ক্যাথলিক ; বিবাহবিচ্ছেদ হওয়া বড় কঠিন ; এজন্ত চিরজীবনের জন্ত কাহাকেও সহজে গ্রহণ করিতে চাই না ? “কিন্তু গ্ৰহণ করিতে হইবে । আমরা মানুষ, প্রেমকে আমাদের চিরস্থায়ী করিতে হইবে।” SN98R “কিন্তু প্রেম এক জনের প্রতি চিরস্থায়ী নাও হইতে পারে।” "রবার্ট তুমি আমার পুত্রের বয়সী। আমার নিজের জীবনে ভালবাসার সঙ্গে পরিচয় হয় নাই, যদিও বিবাহ আমি তিনবার করিয়াছি ; কিন্তু এ-কথা আমি বলিতেছি নরনারীর জীবনে ভালবাসাই শেষ কথা নয় ; প্রজাস্বাক্টই আসল। যতই তুমি ভালবাস, যতই তুমি প্রেমের জয়গান কর, অনাদিকাল হইতে যত নারী যত পুরুষকে, যত পুরুষ যত নারীকে ভালবাসিয়াছে তাহার কোন পরিচয় আজ আর জগতে নাই ; আছে শুধু সস্তানসস্ততি । একদিন অffদজনক ও আদি জননী জীবনের যে দীপশিখা জtলাইয়াছিলেন, তাহ আজও অনিৰ্ব্বাণ ; সেই আলোকশিথা তোমাকেও জ্বালাইয়া রাখিতে হইবে। আজ তুমি যুবক, ভাবিতেছ ভালবাসাই সব ; কিন্তু তা নয়। তুমি জান ভগবান মানুষ স্বষ্টি করিলেন, বিশ্বসংসারে তাহার কোন সার্থী ছিল না । ভগবান নারী স্বষ্টি করিলেন, বলিলেন, ‘ফলবান হও ; আপনাকে বদ্ধিত কর।” নরনারীর সম্পর্কের সেই প্রথম কথা, সেই শেয কথা । ‘উপরের দিকে চাহিয়া দেথ ।" রবার্ট ও আইভি দেওয়ালের দিকে চাহিয়া দেখিল আদি-দম্পতির তৈলচিত্রের সম্মুখের সন্ধ্যাকালে প্রস্তম্বলিত দ্বীপশিখ। তখনও মুদ্ধ উজ্জ্বল হইয়। জলিতেছে । বাহিরে রাfত্র প্রভfত হইতে দেরি নাই । সমস্ত জগৎ স্বষ্টির সম্ভাবনায় পরিপূর্ণ। আলো-অন্ধকারের সন্ধিস্থলে আদিজনকজননীর পদতলে দাড়াইয়া রবার্ট ও আইভির মনে হইতে লাগিল ঐ যে ক্ষুদ্র দীপ উহা যেন লক্ষ বৎসর যাবৎ জ্বলিতেছে ; উহার শিখা ধেন সহস্ৰ সহস্ৰ যোজন দূর হইতে তাহদের শির আলোক বর্ষণ করিতেছে। তাহাদের সাধ্য নাই উহাকে নিৰ্ব্বাপিত হইতে দেয় । যুগে যুগে যত নরনারী তাহীদের রক্তদেহ ঢালিয়া এ-শিখাকে অনিৰ্ব্বাণ রাধিয়াছে তাহারা যেন সমস্বরে বলিতেছে— ‘সাবধান, এ-দীপ নিবিতে দিও না ’ রবট" পদতলে আসীন আইভির দিকে চাহিল এবং হুখেঞ্জলাল বাবুকে বলিল, “কিন্তু মুখেঞ্জলাল বাৰু স্ত্রী কিংবা সস্তান প্রতিপালন করিবার সামর্থ্য আমার নাই । আমি এখনও নিজের গ্রাসাচ্ছাদনের জন্ত পিতার মুখাপেক্ষী ; আপনি কি