পাতা:প্রবাসী (পঞ্চত্রিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৮৬৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

অণশ্বিন কমল b~oసి সকলকে নীচে অসিবার জন্ত। নিজে বসিয়া অতিথির সহিত কথাবাৰ্ত্ত কহিতে লাগিলেন। দেবেশ মানুষটি ছোটখাট, তবে রোগ বলিয় তাহাকে কিছু খারাপ দেখায় না। রংটা বাপের চেয়ে ফরস, এমন কি বাঙালীর পক্ষে ফরসাই । চোখে চশমা, বেশভূষায় খুব ফিট্‌ফাট । ছেলেমেয়েদের লইয়া যামিনী, মিহির, প্রভা সকলে প্রায় একসঙ্গেই নামিয়া আসিলেন। দেবেশ তাড়াতাড়ি উঠিয়া দাড়াইল, স্বরেশ্বর সকলের সঙ্গে তাহার পরিচয় করিয়া দিলেন। একসঙ্গে আধ ডজন প্রায় নমস্কার করিয়া তাহার .পর বেচার দেবেশ আবার বসিতে পাইল । সকলের অলক্ষ্যে সে একবার মমতাকে ভাল করিয়৷ দেখিয়া লইল । চশমা চোখে থাকায়, সে চট্‌ করিয়া কাহারও কাছে ধরা পড়িল না । ভাবিল মেয়েটির রং খুব ফরসা বটে, অবশু সবটাই নিজস্ব, কি তুলির কাছেও কিছু ধার করা তা বলা শক্ত। মুখটা যতটা নিখুং বলিয়৷ গুনিয়াছিলাম, তাহা ত বোধ হইতেছে ন । নাকট। আরও স্বগঠিত হইলে ভাল হইত। মুখের ভাবটাও যুবতীসুলভ নয়, ক্যাল ফ্যাল করিয়া চারিদিকে কেমন তাকাইতেছে দেখ না, ঠিক যেন কচি খুকি। অন্য মেয়েটি দেখিতে তত সুন্দরী নয়, কিন্তু মুখের ভাব দেখিয় মনে হইতেছে খুব চালাকচতুর। কিন্তু ভাবী শাশুড়ীটি ত দিব্য দেখিতেছি। এত বয়সে চেহারার এমন জলুশ সচরাচর চোখে পড়ে না । কিন্তু অতিশয় গম্ভীর প্রকৃতির দেখিতেছি । মোটের উপর মামীশাশুড়ী এবং উাহার মেয়ের ধরণ-ধারণই দেবেশের চোখে ভাল লাগিল। যামিনী এবং মমতা উভয়েই মৃন্দরী, কিন্তু এক জন যেন পাষাণ-প্রতিম, আর এক জন সবে যেন শৈশব-স্বপ্ন হইতে জাগ্রত হইয়াছে । যামিনীর প্রথম-দর্শনে দেবেশকে বিশেষ ভাল লাগিল ন। বড় বেশী রুত্রিমতা, যেন রঙ্গমঞ্চের অভিনেত, স্বাভাবিকতা কোথাও নাই। পান থেকে চণ খসিলেই যেন ইহার মাথায় আকাশ ভাঙিয়া পড়িবে। বেটু এবং স্বজিত হাসি চাপিবার প্রাণপণ চেষ্টা করিতে করিতে, অতিথি হইতে যথাসাধ্য দূরে বসিয়া রহিল । স্বরেশ্বরের কাছে ধমক থাইবার ভয়েই তাহারা ঘরে আসিয়াছিল, ন হইলে অতিথিটির সঙ্গন্ধে বিন্দুমাত্রও আগ্রহ তাহাদের মনে ছিল না । ক্রমশ: কমল শ্ৰীমুধীরচন্দ্র কর —তবু জানিলাম,–কিছু না কহিলে বাণী-- সে-কথাটি, যাহা শুধু তুমি আমি জানি মনে মনে । যে কথা নিদ্রায় জাগরণে, ধ্যানে জ্ঞানে ফিরে দুটি উন্মুখ যৌবনে । গোধূলির লাজরক্ত উচ্ছ্বসিত আলো দু-জনের মুখে পড়ি দোহারে বুঝালো “এই যে !”--কেবল এই দুটি মাত্র কথা । পুলকরোমাঞ্চপুষ্পভারঅবনত শীর্ণ তকুলতাখানি আকুঞ্চিত করি চলে গেলে –ঞ্জাধারে ছাইল বিভাবরী পশ্চাতের ব্যবধান। তবু যতটুক দেখা যায়,—দেখি। পরে ফিরাইয়া মুখ স্বধান্বিন্ধ পূর্ণ বক্ষে চলে যাই ঘরে। প্রাস্তি-ক্লাস্তি চিত্ত হ’তে কোথা যায় স’রে ! যে-সন্ধ্যা সবারই কৰ্ম্মে ফেলে যবনিকা, মোর তরে সে-ই নব জীবন ভূমিকা রচি দেয় স্বপ্নে তব । দিবা অবসানে থাকিতে কি পারি ? তাই এসেছি সন্ধানে, কোথা সে শাস্তির ছবি । -হায় রে দুরাশ ! —ঐ তো ফুরায়ে গেল লোক যাওয়া-আসা ;. গেল আলো, কালিমায় সবই গেল ঢাকি আঁখিতে মিলাল না তে কালো দুটি মাথি ! সম্মুখে শীতল রাত্রি মসীকৃষ্ণ গাঢ়, নিযুপ্ত বিচ্ছেদদাহ দীপ্ত হবে আরও ; কোথা নিদ্রা, কোথা তার স্মৃষ্টিবিস্মরণী সম্মোহ ! যেমন ছিল রয়েছে তেমনি তোমার ভাবনা । পুন আসিবে প্রভাত, আবিল বিক্ষুব্ধ করি তুলিবে নির্মাত দিবসের শতপাকে হৃদয়ের তল,— তারও পরে র’বৈ তুমি অমল কমল ॥