পাতা:প্রবাসী (পঞ্চদশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).pdf/১৪২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

२¢b প্রবাসী—জ্যৈষ্ঠ ১৩২২ - তাই রমেশের কথা শেষ হইতে না হইতেই বৃদ্ধ বলিয়া করিয়াই রছিল। কিন্তু কি যেন ੀ। অজ্ঞাত উঠিলেন-”ন না, তবে থাক, এখন আর যেতে प्लांहेन।” নিৰ্দ্ধারিত দিনে বিমলাকে লইয়া রমেশ কৰ্ম্মস্থানে চলিয়া গেল। মাঘমাসে রেল আফিসের কয়েকটি বাবু সঙ্গীক পশ্চিম- ' ভ্রমণে যাইবার বন্দোবস্তে বড়ই ব্যস্ত হইয়াছেন। তদর্শনে রমেশের মনেও একটা প্রবল আকাঙ্ক্ষ। জাগিয়া উঠিল । গোপনে সমস্ত বন্দোবস্ত করিয়া বিমলার নিকট একদিন মনোভাব প্রকাশ করিল। বিমলা আগ্রহসহকারে জিজ্ঞাসা করিল—"পশ্চিমে কোথায় যাবে ? রমেশ– ”মাঘমাসে এলাহাবাদে একটা বড় মেলা হয়। . সে মেলাট। একটা দেখবার জিনিস। তারপর সেখান থেকে ফিরবার পথে কাশী, গয়া, বিন্ধাচল দেখে আস যাবে।" বিমলা বিস্মিত হইয়া উত্তর করিল—“আচ্ছ। তোমার নাকি খরচপত্রের টানাটানি ? মা কোন দিন কিছু বলেন ন, তিনি কত বড় আশা করে মুখ ফুটে কাশী যেতে চাইলেন-তুমি তাকে বুঝিয়ে দিলে তোমার খরচপত্রের টানাটানি। আর এখন তুমি আমাকে নিয়ে বেড়াতে যাবে, এ কথা মায়ের কানে পৌছলে তিনি কি মনে করবেন বল দেখি ?" রমেশ-"আমি টাকা খরচ করে বেড়াতে যাচ্ছি না ! রেলের পাস পেয়েছি।” বিমলা—“তা বেশ, তবে মাকেও নিয়ে এস। সবাই একসঙ্গে যাওয়া যাবে।" রমেশ কিয়ৎক্ষণ নীরবে কি চিন্তা করিয়া মানমুখে বলিল—“তবে থাক, আর গিয়ে কাজ নাই।" স্বামীর মান মুখ দেখিয়া বিমলা মুহূৰ্ত্তে কৰ্ত্তব্যবিচার ভুলিয়া গিয়া উত্তর করিল—“দেখ, রাগ কর কেন ? তুমি আমাকে যেখানে নিয়ে যাবে আমি যেতে রাজি আছি। - 9ئچچf . রমেশ–“কিন্তু আবার কি ? তোমার কোন ভয় নাই। আমি এই তোমাকে ছুয়ে বলছি—মাকে এ কথা কিছুতেই জানতে দেবো না।” বিমলার আর কোন জবাব যোগাইল না। সে চুপ তাহার শরীরটাকে কঁপাইয়। তুলিতে লাগিল । সেই সপ্তাহেই রমেশ বিমলাকে লইয়৷ পশ্চিমাত্র করিল। যাইবার কালীন আনন্দে আত্মহারা হইয়া বৃদ্ধ । মাতার কথা সে একেবারেই বিশ্বত হইল । এদিকে বৃদ্ধ মাতা অনেকদিন পুত্রের কোন পত্রাদি ন পাইয়া চিন্তিত হইয়া পড়িলেন। এক দুই করিয়া প্রায় . এক মাস হইতে চলিল, তথাপি রমেশের কোন পত্র . আসিল না। উপযুপিরি পত্র লিখিয় টেলিগ্রাম করিয়াও কোন সংবাদ মিলিল না। ডাকপিয়নকে শতবার জিজ্ঞাসা করিয়া ও বৃদ্ধ পুত্রের একখানি পত্র পাইলেন না। আহার নিদ্র ভুলিয়া পাগলিনীর মত তিনি চারিদিকে ছটিয়া বেড়াইতে লাগিলেন । দিবারাত্রি রমেশের একখানি পত্রের জন্য দুর্গ। কালীর নিকট মানত করিতে লাগিলেন। কিন্তু কই ? পত্র আসিল না । একদিন বিকালে বাহিরের ঘরে গিয়া বৃদ্ধ দেখিলেন জানালায় কাহার একখানি পত্র পড়িয়া রহিয়াছে। ক্ষিপ্ৰহস্তে পত্ৰখানি তুলি৷ লই দেখিলেন রমেশের পত্র। স্থা, এই তে রমেশের অক্ষর। পিয়ন হয়ত জানাল দিয়া ফেলিয়া গিয়াছে—এই বিশ্বাসে মায়ের প্রাণ আনন্দে নাচিয়া উঠিল। পত্রখানি বক্ষে চাপিয়া, দ্রু তপদে এক প্রতিবাণীর নিকট গিয়া বলিলেন—“দেখ তো বাবা, রমেশ কেমন আছে? নিশ্চয়ই তার অমুখ বিমুখ হয়েছে। ত না হলে সে চিঠি দিতে এত দেরি কখনও করে না।" প্রতিবাদী পত্র লইয়া ক্ষণকাল নিরীক্ষণ করিয়া বলিল- একি ? এ চিঠিতে আজ কালকার নয় ! এ আনেকদিনের চিঠি "–মায়ের প্রাণ কিছুতেই বুঝ মানিতে চাহিল না, যে, সেখান পুরাতন পত্র। বিস্মিত হইয়। বৃদ্ধ পুনরায় জিজ্ঞাসা করিলেন–“ভাল . করে দেথ কাবা, বোধ হয় আজকালকার পত্রই।" প্রতি বালী বলিল—“ন, এ অনেকদিনের—৩রা কাপ্তিকের।” —বৃদ্ধার মস্তকে যেন আকাশ ভাঙ্গিয়া পড়িল। মুহূর্জের জন্ম পায়ের তলে ভূমিকম্পন অনুভব করিলেন।'চক্ষে অlধার দেখিলেন । আহা ! তিনি যে কত বড় আশা করিয়া পত্ৰখানি লইয়া আসিয়াছিলেন। রমেশের কথা ভাবিতে ভাবিতে একটি দীর্ঘনিশ্বাস পরিত্যাগ করিয়া বুদ্ধ। সে স্থান হইতে [ ১৫শ ভাগ, ১ম খণ্ড I ২য় সংখ্যা ] - ત્તિ করিলেন। মায়ের প্রাণ পুত্রের নিকট যাইবার জন্য জাকুলি-বিকুলি করিতে লাগিল। হায়, রমেশ হয়ত তথন স্ত্রীকে এলাহাবাদে খসরু-বাগ দেখাইতেছিল। o বাড়ী ফিরিয়া বৃদ্ধ গৃহের দাবায় বসিয়া পড়িলেন। তখন কেবলমাত্র সন্ধ্য। উত্তীর্ণ হইয়াছে। ঘরে ঘরে সাঝের বাতি জলিয়াছে। বুদ্ধ। আজ সন্ধ্যার বাতি জালিতেও ভুলিয়া গেলেন । তিনি বসিফ বসিয়া ভাবিতে লাগিলেন—“রমেশের আমার হল কি ?" ভাবিতে ভাবিতে তাহার গও বাহিয়া দুইবিন্দু অশ্র গড়াইয় পড়িল। অদূরে ঠাকুর-বাড়ীর লক্ষ্মী-নারায়ণের আরতির কাসর ঘন্টার ধ্বনি মুহূৰ্বের জন্যও মানুষের মনে ভক্তির আবেগ আনয়ন করিতেছিল। বুদ্ধা সিক্তচক্ষে ভক্তি-গদগদ-কণ্ঠে বলিল—“বাবা নারায়ণ, রমেশের আমার সংবাদ আনিয়ে দাও বাবা। আমি | ধী দিয়ে তোমায় নাওয়াব বাব৷ ” সারা রাত্রি অনিদ্রাস পর ভোররাত্রে তন্দ্রাঘোরে বুদ্ধ স্বপ্ন দেখিলেন—যেন, রমেশ রোগশয্যায় পড়িয়া যন্ত্রণায় ছট্‌ফট্‌ করিতেছে ও মাঝে মাঝে—ম গো মা বলিয়া চীংকার করিতেছে। পুত্রের সেই কাতর-ডাকেই যেন বৃদ্ধার নিদ্রা ভাঙ্গিয় গেল। তাড়াতাড়ি উঠিয়া বসিয়া দুর্গানাম স্মরণ করিতে লাগিলেন । কি একট। ভাবী আশঙ্কায় তাহার জীর্ণশরীর থরথর করিয়া কাপিতে লাগিল । ভোরের স্বপ্ন সত্য হয় এই বিশ্বাসে মাতা ঠিক বুঝিলেন বে পুত্রের অস্বথ হইয়াছে। মায়ের প্রাণ আর তো ধৈর্য্য মানিল না। সেই দণ্ডেই উড়িয়া পুত্রের পাখে যাইতে চাহিল। বৃদ্ধ স্থির কাবুলেন–নিরুকে তাহার পিতার নিকট পাঠাইয়া দিয়া, সেই দিনই রমেশের নিকট চলিয়া যাইবেন। - প্রায় একমাস পরে রমেশচন্দ্র পশ্চিম ভ্রমণ করিয়া রাত্রি ১২টার গাড়ীতে কৰ্ম্মস্থানে আসিয়া পৌছিল । সে মাতালের কায় টলিতে টলিতে গিয়া নিজ বাসায় প্রবেশ করিল। আজ রমেশের এ ভাব কেন ? তাহার মুখে সে আনন্দের ভাৰ নাই। চক্ষে সে প্রফুল্লতা নাই। মুখেচোথে যেন বিষম একটা নৈরাখের ছায় পড়িয়াছে। যেন কতদিন अमिड ও অনাহারে তাহার শরীরটা আধখানা হইয়া গিয়াছে। আর তাহার সঙ্গে নাই—বিমলা । মায়ের প্রাণ २¢* পরদিন রমেশ প্রবল জরে আক্রান্ত হইল। সমস্তদিন শয্যায় পড়িয়া ছট্‌ফট্‌ করিতে করিতে কাতরস্বরে কতবার 'ম। গো মা বলিয়া যন্ত্রণ প্রকাশ করিতে লাগিল। তন্ত্ৰা- . ঘোরে কর্তবার পাশ্বোপবিষ্ট কাহাকে ধরিতে হস্ত প্রসারণ করিল। ললাটে কাহার শীতল-কোমল কর-স্পর্শ অনুভব করিতে প্ৰাণে প্রবল ইচ্ছা হইল। কিন্তু কে কোথায়? অাছে, — গৃহকোণে বিমলার অপরিহার্য্য স্মৃতিমাখান, আবরণআবৃত একটি ষ্টীল ট্রাঙ্ক, তাহার উপর একখানি আয়না, চিরুণী ও সিন্দরের কৌটা। তাহার পার্থে দুইখানি ছিন্ন ও শুন্যমলাট পুরাতন প্রবাসী মাসিকপত্র। আর আছে, অৰ্দ্ধ-শূন্য একটি কুন্তল-কৌমুদী তৈলের শিশি। বিমলার এই শেষ চিহ্নগুলি দেখিতে দেখিতে* রমেশের অস্কর-রুদ্ধ বেদনার রাশি প্রবল বেগে উছলিয়া উঠিল। সে দুই হন্তে তাহার শোক-দগ্ধ বক্ষ চাপিয়া, উপাধানে মুখ লুকাইয় ভাবিতে লাগিল—এই আমার সাধের বাসা, যেখানে বিমলাকে লইয়া কত যত্নে সুখের খেলাঘর পাতিয়াছিলাম ! কিন্তু, দুইদিনে আমার সব ভাঙ্গিয় গেল। কেন গেল! বিমলাই একদিন বলিয়াছিল যে—“মাকে কষ্ট দিয়া কেহ কখনও সুখী হইতে পারে না। মা তোমায় কষ্ট দিয়াই বুঝি আমার এ মুখ সহিল না। মা! আজ প্রায় এক মাস যে তোমার কোন খবর লই নাই –ভাবিতে ভাবিতে রোগশয্যায় শায়িত রমেশের জরতপ্ত গও বাহিয়া দুই বিন্দ্র অশ্র অতি ধীরে গড়াইয়া পড়িয়া উপাধানে মিশিয়া গেল। রমেশ একটি দীর্ঘনিশ্বাস ত্যাগ করিয়া যন্ত্রণা-ব্যঞ্জক-স্বরে বলিল—“উঃ, মা গে।" এমন সময় সে ললাটে কাহার কর-স্পর্শ অনুভব করিল। শাস্তিদায়ক । স্পর্শ মাত্রেই যেন রমেশের সকল যন্ত্রণা কোথায় সরিয়া গেল। চমকিত হইয়া রমেশ তাড়াতাড়ি উঠিয়া বসিল। লাহার দুৰ্ব্বল শরীর কঁাপিতে লাগিল । সন্ধ্যার ঈষৎ অন্ধকারে সে বেশ দেখিল—শষ্যাপাশ্বে কে নীরবে দাড়াইয়া আছে। কম্পিত কণ্ঠে রমেশ জিজ্ঞাসা করিল—“কে ?” - - —“বাব রমেশ,—আমি । বাবা তোর এমন অস্থখ করেছে, তা আমায় একটা সংবাদ দিতেও নাই!” বিস্মিত রমেশ উত্তর করিল—“এT, কে ? মা! তুমি সে স্পর্শ কত শীতল, কত