পাতা:প্রবাসী (পঞ্চদশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).pdf/২৩৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

880 কলিকাতায় বলিয়া ঠিক বুঝিতে পারা যায় না। যথেষ্ট হইতেছে না বলিয়াই বোধ হয়। কেননা দৈনিক ও সাপ্তাহিক সংবাদপত্র-সকলে দুর্ভিক্ষক্লিষ্ট লোকদের সাহা ধ্যার্থ প্রার্থনাপত্র প্রত্যহ বাহির হইতেছে। খাদ্যদ্রব্য ব্যতীত ঔষধ ও চিকিৎসকেরও অনেক স্থানে বিশেষ প্রয়োজন হইয়াছে। তথায় উদরাময়, ওলাউঠ, প্রভৃতি রোগের আবির্ভাব হইয়াছে। - * . আমাদের অধিকাংশের প্রাণে যে দয়ামায়া একেবারে নাই, তাহ বলিতে পারি না। তথাপি যে আমরা প্রত্যহ নিয়মিতরূপ - আহার করিতেছি, যাহার ধাহ আমোদ প্রমোদ, তাহাও চলিতেছে, অথচ দুর্ভিক্ষগ্রস্ত স্থানসকলে লোকে অন্নাভাবে কষ্ট পাইতেছে, কেহ কেহ বা মারা পড়িতেছে ; তাহার কারণ এই যে আমরা কল্পনার দ্বারা অনাহার, অৰ্দ্ধাহার, উপবাস, অনশনে মৃত্যু, এসকল যে কি তাহ স্পষ্ট উপলব্ধি করিতে পারি না। আমাদের অনেকের অবস্থা এরূপ, যে, চেষ্টা সত্বেও একবেল একদিন বা দু-তিন দিন আহার জুটিল না, এমন অবস্থা হইবার সম্ভাবনা কম। কিন্তু বাধ্য হইয়া অনাহারে থাকিতে হইতেছে, এমন দশা না হইলেও, ইচ্ছাপূৰ্ব্বক একদিন বা দু-দিন উপবাস দিয়া আমরা দেখিতে পারি অনাহার কেমন লাগে। পুত্রকন্যা আদি থাকিলে তাহাদিগকে মৃনকল্পে একদিন খাইতে না দিয়া রাখিবার চেষ্টা করিলে কিরূপ অবস্থা হয়, আমরা পরীক্ষা করিয়া দেখিতে পারি। পাঠকের হয়ত ভাবিবেন, এ বড় বিকট সখ । কিন্তু আমরা সখ করিয়া এসব কথা লিখিতেছি না। কোন প্রকারে উপবালী লোকদের প্রতি একটু যদি প্রাণের প্রকৃত টান জন্মে, এই উদ্দেশ্বে উপায় চিন্তা করিতেছি। - যখনই দেশে অন্ধকষ্ট উপস্থিত হয়, তখনই সরকারী কৰ্ম্মচারী এবং দেশের সহৃদয় লোকদের মধ্যে, ঐ অন্নকষ্টকে দুৰ্ভিক্ষ বলা হইবে, বা খাদ্যদ্রব্যের দুমূল্যতা বা দুষ্প্রাপ্যতা বলা হইবে, সে বিষয়ে মতভেদ দেখা যায়। নাম যাহাই দেওয়া হউক, কেহ অন্নাভাবে দুৰ্ব্বল না হয় বা মারা না পড়ে, ইহা দেখা গবর্ণমেন্টের সর্বপ্রধান কৰ্ত্তব্য। গবর্ণমেণ্টও যে ইহা অস্বীকার করেন, তাহা নয়। কিন্তু প্রবাসী—শ্রাবণ, ১৩২২ ^ヘヘヘヘヘヘヘヘヘヘヘヘヘヘヘヘヘヘヘヘヘヘヘヘヘヘヘSMSMSMSMMSMMSMSMSJMMMJMSMSMSMMSMMSMSMSMSMSMS অন্নকষ্টের সময় যখন মানুষ মারা পড়ে, তখন আবার সরকারী কৰ্ম্মচারী ও সৰ্ব্বসাধারণের মধ্যে মৃত্যুর কারণ সম্বন্ধে মতভেদ উপস্থিত হয়, এবং তর্কবিতর্ক চলিতে থাকে। দেশের লোকে বলে, মানুষটি অনাহারে মরিয়াছে, সরকারী কৰ্ম্মচারী হয়ত বলেন যে সে উদরের পীড়ায় বা হৃৎপিণ্ডের ক্রিয়া বন্ধ হওয়ায় মারা পড়িয়াছে। কিন্তু ইহাও কথাকাটাকাটি মাত্র। মৃত্যুর অব্যবহিত কারণ যাহাই হউক, অম্নাভাবই যে মূলীভূত কারণ তাহাতে সন্দেহ নাই। এবং, গ্রাম্যসমিতি হইতে আরম্ভ করিয়া বড়লাটের সভা পৰ্য্যন্ত সৰ্ব্বত্র যখন গবর্ণমেণ্টের লোকেরাই প্রভূ, তখন দেশের লোকের অন্নবস্ত্রের অভাব, রোগ, চোরের উপদ্রব, প্রভৃতি যে কোন রকমে অস্থবিধ বা কষ্ট হউক, তাহা দূর করিবার জন্য গবর্ণমেন্টই যে খুব বেশী পরিমাণে দায়ী, তাহা অস্বীকার করিবার জো নাই। ভূমিকম্প বা ঝড়ের মত আকস্মিক নৈসর্গিক কারণের উপর অবহু মাহুষের হাত নাই। ত্রিপুরা জেলায় বন্যা হওয়ায় লোকের কষ্ট আরও বাড়িয়াছে । - বর্তমান দুর্ভিক্ষের একটি বিশেষত্ব এই যে ইহার সমস্ত কারণ ভারতবর্ষে আবদ্ধ নহে। ইউরোপে যে যুদ্ধ চলিতেছে, তাহাতে প্রথম অবস্থায় পাটের ব্যবসার ক্ষতি হওয়ায় চাষীরা বড় অভাবে পড়িয়াছে। অন্যান্য ব্যবসাতেও মন্দ পড়ায় বিস্তর লোক বেকার বসিয়া আছে। -- যুদ্ধে অনেক সিপাহী হত ও আহত হইতেছে L । তাহাদের পরিবারবর্গ নিরাশ্রয় হইতেছে। তাহীদের সাহায্যার্থ লক্ষ লক্ষ টাকা সংগৃহীত হইতেছে। যখন টাকা সংগৃহীত হইতে আরম্ভ হয়, তখন বড়লাট হার্ডিং বলিয়াছিলেন, যে, সিপাহীরা ছাড়া আর যাহার সাক্ষাং বা পরোক্ষভাবে যুদ্ধের জন্য বিপন্ন হইতেছে, তাহার এই সংগৃহীত অর্থ হইতে সাহায্য পাইবে। যুদ্ধে-বিপন্ন লোকদের জন্য টাকাও ত কম উঠে নাই । বৰ্ত্তমানে সমগ্ৰ ভারতবর্ষের ফও এবং ভিন্ন ভিন্ন প্রাদেশিক ফণ্ডে কত টাকা জমিয়াছে জানিনা। কিন্তু গত ৬ই মার্চের লওনে-প্রকাশিত সিমলার টেলিগ্রাম হইতে জানা যায় যে তখন মান্দ্রাঞ্জের ২৪ ল ও বোম্বাইয়ের ২৫ লক্ষ ছাড়া ৯০ লক্ষ টাকা উঠিয়াছিল। তাহার পর আরও উঠিয়াছে। ১৯৯০ খৃষ্টাব্দে ছুর্ভিক্ষের - Tr [ ১৫শ ভাগ, ১ম খণ্ড i ৪র্থ সংখ্যা ) । t - t

  • |

-


s যে ৩৯ লক্ষ টাকা সংগৃহীত হইয়াছিল, তার চেয়ে বেশী টাকা অন্ধকষ্ট নিবারণের উদ্বেতে ভারতবর্ষে কখনও উঠে নাই। আর, যুদ্ধে-বিপন্ন লোকদের জন্য ৪ মাস পূৰ্ব্বেই ; কোটি ৩৯ লক্ষ টাকা উঠা ছল। টাকা নাই একথা গবর্ণমেণ্ট বলিতে পারেন না। সুতরাং দেখা যাইতেছে, পূৰ্ব্ববঙ্গের বর্তমান দুর্ভিক্ষে একটি মাহুষেরও অনাহারে মৃত্যু হওয়া উচিত ছিল না। যাহা ঘটিয়াছে, তাহা হইতে মনে হয় সরকারী কৰ্ম্মচারীদের এদিকে কিছু क' ं ছিল। এখন দেশের লোকদের নিকট হইতেও বেশী টাকা পাইবার আশা কম। ধনীদিগকে যুদ্ধজনিত কষ্ট নিবারণের জন্য এবং অন্যবিধ সামরিক ফণ্ডে বিস্তর টাকা দিতে হইয়াছে। সিপাহীদের ও তাহাদের পরিবারবর্গের দুঃখ দূর করা রাজভক্তি ও দয়াধন্মের কাজ। কিন্তু যে-সকল গরীব লোক পূর্ববঙ্গে থাইতে পাইতেছেন, তাহারাও সম্রাট পঞ্চম জর্জের প্রজ। সুতরাং তাহাদের জন্য দান করিলে তাহা দ্বার রাজভক্তির অভাব প্রকাশ পাইবে না। দয়াধৰ্ম্মের কাজও হইবে। । - দুর্ভিক্ষের মুল -- " - - -- - এক একবার দুর্ভিক্ষ হয়, আর কিছু অর্থ সংগ্ৰহ করিয়া উপবাণী মানুষগুলিকে খাইতে দিয়া বাচাইয়া রাখা হয়। -- উচ্ছেদ। ক কার হয়। কিন্তু দুর্ভিক্ষের মুলোচ্ছেদ ইহাতে সাময়িক প্রতিকার হ দুর্ভিক্ষের মূ হয়না অথচ মূল উচ্ছেদ করা মানুষের অসাধ্য নহে। ইউরোপের প্রধান প্রধান দেশের মধ্যে কেবল রুশিয়ায় বৰ্ত্তমান যুগেও দুভিক্ষ হয়। কিন্তু ইংলণ্ড, ফ্রান্স, জামেনী, হল্যাও, প্রভৃতি দেশে দুর্ভিক্ষ হয় না। আমেরিকার সম্মিলিত রাষ্ট্রে দুৰ্ভিক্ষ হয় না। অথচ এসব দেশেও অতিবৃষ্টি, অনাবৃষ্টি, ঝড়, প্রভৃতি নৈসর্গিক বিপদ ঘটে। এসব সত্বেও যে সেসকল দেশে দুর্ভিক্ষ হয় না, তাহার কারণ, তথাকার লোকদের কেবল চাষের উপর নির্ভর নয়। যাহার চাষী, তাহারাও কৃষিবিদ্যায় শিক্ষা পাওয়ায় এবং -- --এদেশের লাঙ্গলাদির চেয়ে উৎকৃষ্ট যন্ত্র ব্যবহার করিতে পারায় আমাদের চাষীদের চেয়ে বেশী শস্য উৎপাদন করিতে পারে। অনাবৃষ্টির সময়েও ক্ষেত্রে জলসেচনের বিবিধ প্রসঙ্গ—দুর্ভিক্ষের মুল - - উচ্ছেদ 882 কৃত্রিম বন্দোবস্ত স্বসভ্য দেশসকলে ভারতবর্ষ অপেক্ষা ভাল আছে। ঐসব দেশের কৃষকেরা শস্তের আকারে ষে ধন উৎপাদন করে, তাহার যতটা অংশ নিজের ভোগ করিতে পায়, আমাদের চাষীরা নিজেদের উৎপন্ন ধনের ততটা অংশ ভোগ করিতে পায় না। তাহার পর দেশের স্বাস্থ্য ভাল না হওয়ায় চাষীর অন্যদেশের চাণীদের সমান কাজ করিতেও পারে না। এইরূপ নানাকারণে দুর্বংসরের জন্ত সঞ্চয় অল্প চাষীই করিতে পারে। সঞ্চয় অভাবে তাহারা মহাজনের আশ্রয় লইতে বাধ্য হয়। একবার মহাজনের হাতে পড়িলে তাহার আর সহজে ঋণমুক্ত হইতে পারে না।" - পূৰ্ব্বেই বলিয়াছিপাশ্চাত্য স্বসভ্য দেশ-সকলে যেদুর্ভিক্ষ হয় না, তাহার একটি কারণ এই যে তথাকার লোকের কেবল চাষের উপর নির্ভর করে না। নানা প্রকার শিল্পদ্রব্য প্রস্তুত করিয় তাহারা স্বদেশে ও বিদেশে বিক্রয় দ্বারা ধন উপার্জন করে। . আমাদের দেশেও এইরূপ হইতে পারে। ৰোন কোন লোক বা কোন কোন পরিবাৱ ৰেবল শিল্প লইয়া থাকিতে পারে; আবার স্বলবিশেষে চাষ ও সহযোগে জীৰিক নিৰ্ব্বাহ হইতে পারে। বহুকাল হইতে এইৰূপ চলিয়া আসিতেছে যে যে তাতি বা কামার সে অনেক স্থলে চাষও করে। কিন্তু এখন পাশ্চাত্য-কারখানার সঙ্গে আমাদের তাতি বা কামার টঙ্কর দিতে পারিতেছে না। স্বতরাং চাষের সময় ছাড়া অন্ত সময়ে তাতি কামার প্রভৃতি শিল্পীদিগকে বসিয়া থাকিতে হয়। কারখানার মজুরীতে দক্ষতা লাভ করিতে হইলে চাষ করা চলে না। অতএব, ফেসব দেশে গৃহে বসিয়া শিল্পী শিল্পজৰা প্রস্তুত করে, অথচ কারখানার নিকট তাহাকে পরাস্ত হইতে হয় না, সেইসব দেশের সমুদয় অবস্থা ও যাদির বিষয় অবগত হইয়া কোন কোন গৃহশিল্প ঐ প্রকারে আমাদের দেশে চলিতে পারে, তাহ স্থির করিয়া প্রচলিত করা কৰ্ত্তব্য। o সৰ্ব্বাগ্রে কৰ্ত্তব্য দেশের স্বাস্থ্যের উন্নতি করা। ষে খাটিবে সে যদি আধমরা হইয়া রহিল, তাহ হইলে ধন উৎপাদন কে করিবে ? দেশের স্বাস্থ্যের উন্নতি, এখানে তিন পুরিয়া কুইনাইন বিতরণ বা সেখানে পাচটা আগাছা - - - ...