পাতা:প্রবাসী (পঞ্চবিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৬১৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

৪র্থ সংখ্যা ) পাৰ্ব্বতীর প্রেম (?&O এখানে যা অসুবিধা হচ্ছে, এ বিষয়ে সেখানে গেলেও একতিল কম হবে না। . মেয়েটিকে সঙ্গে নিয়ে গেলে হ’ত ? বুঝলে না " । 皓》 কিরণ উত্তর দিলেন, “বুঝি ত, কিন্তু ওকি যেতে চাইবে ?”

  • দেখ না ব'লে। ওদের কি কোনো বিষয়ে মনের জোর আছে ? দু-চার বার জোর করে বলো, কার্য্যোদ্ধার হ’য়ে বাবে । আমাদের কাছে ওদের ইচ্ছা কতক্ষণ খাটে, নীচু জা’ত ”

সেই বিষয়ে কিরণেরও সন্দেস্কমাত্র ছিল না । তিনি সুযোগের অপেক্ষায় রছিলেন ; কান্নাকাটি একটু থামিলে তবে বলিবেন । e ইহাব পরদিম কিরণ ঘুম হইতে উঠিয়৷ দেখিলেন, ময়ন। বাশের নলের কাছে ধড় পরিয়া জল ভরিতেছে । উঠানের দিকে চাহিয়াই বুঝিতে পারিলেন, কিছুক্ষণ আগে, ঝাট দেওয়া ইয়াছে । তিনি খুশী হইলেন ; এই কয়দিন ময়না কোনো কাজ করে নাই। জল তুলিয়া ময়না তরকাধীর বাগানের দিকে গেল। কিরণ ডাকিয়া কষ্টিলেন, “একটা ডালা নিয়ে ধস ত, গোটা-কয়েক সিম-বেগুন হয়েছে, আজ পেড়ে আনব ।” ময়না একটি ডাল তুলিয়া লইল । কিরণও তাঙ্গর সঙ্গে গেলেন । সিম পাড়িতে-পাড়িভে ময়না কহিল, “মা আমাকে তোমাদের কাজ করুবার জন্যে রাখবে ?” কিরণ প্রসন্নকণ্ঠে কহিলেন, “বেশ ত, থাকৃ না তুই । এই-ই ত ভাল। মিথ্যে ক'দিন কেঁদে মবুলি তোদের জাতে ত আবার বিয়ে আছে, তোদের কষ্ট কি ? আমাদের পোড়া দেশে জন্মালে তবে বুঝ তিস বিধবার দুঃখ !” ময়না শাস্তস্বরে কহিল, “কি-রকম, মা ?” কিরণ বঙ্গ-বিধবার সমস্ত বিবরণ খুব বিস্তৃত করিয়া কহিলেন, ময়না তাহার মুখ-পানে একদৃষ্টে চাহিয়া রহিল । এর পরে ময়না আর র্কাদিল না। ধীরস্থিরভাবে নিয়মের কাজগুলি করিত । বাকী সময়ট নীরব চিস্তায় কাটাইৱা দিত। মোটেই বাড়ীর বাহির হইত না । কিরণ দ্বিতীয়বার বিবাহ-সম্বন্ধে অনেক প্রশ্ন করতেন; ময়না উত্তর দিত না । বংশীর বন্ধু মান্না একদিন আসিয়ছিল ; ময়নাকে আর-একবার বিবাহ করিয়া সংসার পাতাইতে অনুরোধ করিয়াছিল, কিন্তু ময়ন স্বীকৃত হইল না । মান্না জিজ্ঞাসা করিল, “তবে খাবি কি ?” ময়না উত্তর দিল, "চাকুরি করে ।” “এই বাবুরা ত অন্ত সহরে চলে যাচ্ছে।” “আরও ত বাৰু আছে—” "সেইখানে চাকুরি নিবি ? না হয় নিলি, কিন্তু তুই ত তবু ঘরে টিকৃতে পারবিনে। সবাই তোকে জালাবে। তোর যে কেউ নেই, সে ত সকলে জানে।” সে-কথা ময়না বুঝিয়াছিল। বিবাহাৰ্থী গারোযুবকের ধে তাহাকে শান্তি দিবে না, তা সে আগেই বুঝিয়াছিল। কয়দিন সে বাড়ীর ভিতরে আবদ্ধ হইয়া থাকিবে ? চাকরি যদি নাই-ই জোটে, তখন ত বাহির হইয়া খাইবার জোগাড় করিঙে হইবে । নিজের নিঃসহায় অবস্থা স্মরণ করিয়া ভা’র কান্না পাইল । হায়, কেন বংশী ফিরিয়া আসিল না ? সে যে বলিয়াছিল সন্ধ্যার সময় ফিরিবে । কক্ষ অশ্রুসিক্ত সন্ধ্যা অতীত হইয়। গেল, বংশী আসিল না ! ময়না গিয়া কিরণকে কহিল, “মা, তোমরা আমাকে সঙ্গে নিয়ে যাবে ?” কিরণ উৎসাহিত হইয়া কহিলেন, “যাবি তুই ?” তাহার আনন্দ ও বিস্ময়ের সীমা রহিল না ; একটা কথাও বলিতে হুইল না, অনায়াসে ময়নাকে হাতে পাওয়া গেল । ময়না অন্য স্থানে পলাইয়। যাওয়া ভিন্ন উপায় খুজিয়। পাইল না। নিজেদের জাতটাকে তা’র যেন বাঘের চেয়েও মারাত্মক বলিয়া বোধ হইল । তবুও মধ্যে-মধ্যে তা’র মন বলিতেছিল, যদিই বংশী ফিরিয়া আসে । সে ত কখনও মিথ্যা বলিত, না । যদি আসিয়া তাহার আশায় ঘরে বসিয়া থাকে ? কে ভাত রাধিয়া দিবে ? সে আবার ভাবিল—“ও বলেছিল আমার কাছে আসবে, তা হ’লে আর কি ? আমি যেখানে যাবো সেইখানেই ত যাবে।” বংশী ফিরিয়া আসিয়া