পাতা:প্রবাসী (পঞ্চবিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৯১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

१२ অনিলের মুখে হর্ষ বা সন্তোষের একটু চিহ্নও ফুটে উঠ ল না,সে র্যাকেট খানা নিয়ে একটা অতি তুচ্ছ সামগ্রীর মতন তক্তপোষের একপাশে রেখে দিলে। দাদার অসাধারণ আত্মত্যাগে মহীয়ান ও অমূল্য সেই স্নেহনিদর্শনটির প্রতি লক্ষ্য না ক’রেই অনিল ব’লে উঠ ল— দাদা, তুমি এসেছ ভালোই হয়েছে, আমি তোমার কথাই ভাব ছিলাম...•••••• অনিল ত’ার স্নেহ-উপহারকে উপেক্ষা করাতে অনলের মনে যে দুঃখ জেগে উঠতে পাবৃত, তা আত্মপ্রকাশ করবার অবকাশই পেলে না ; এমন সামগ্ৰী উপহার পেয়েও অনিলের আনন্দ না হওয়াটা অনলের কাছে এমন অস্বাভাবিক বিসদৃশ বোধ হয়েছিল যে তা’র বিস্ময় ও কৌতুহল সমস্ত মন জুড়ে ফেলে দুঃখকে সেখানে আমলই পেতে দিলে না। বিস্মিত আশাহত অমল অনিলকে জিজ্ঞাসা করলে—তোর কি হয়েছে রে ? অনিল মাথা নীচু করে মুখ ভার করে বললে—আমি টেস্ট একৃজামিনেশনে ফেলু করেছি ; আমাকে অ্যালাও করে নি•••••• অনেকখানি আনন্দ পাবার আশায় একদিনের জন্য অনল দেশ ছেড়ে এসেছিল। এসেই এমন দুঃসংবাদে তা’র মনটা অভ্যস্ত দ’মে গেল ; তবু সে মুখে উৎসাহ ও আশ্বাস দিয়ে বললে—তাতে আর কি হয়েছে? আর-এক বছর ভালো ক’রে পড়েী- • • • • • • • অনিল এবার মাথা তুলে দৃঢ়স্বরে বললে—আমি এখানে আর পড়ব না-----•••• * > অনল বিস্মিত হ’য়ে অনিলের মুখের দিকে চেয়ে রইল ; দেশে পড়ার অনিচ্ছা হওয়াতে অনিল গত বৎসর কলকাতায় এসেছিল ; এবার আবার কলকাতা ছেড়ে ম্যাটিকুলেশন পরীক্ষা দিতে আর কোন দেশে যে অনিল যেতে চাইবে তা ঠিক আন্দাজ করতে না পেরে অনল অবাকৃ হ’য়ে রইল । অনিল বলতে লাগ ল—আমি আমেরিকায় যাবো...... অনিলের টাদ-চাওয়া অসম্ভব আকাজক্ষা শু'নে অনল আশ্চর্ষ্য হ’য়ে ব’লে উঠ ল—আমেরিকায় যাবে ? কল প্রবাসী-বৈশাখ, ১৩৩২ [ ২৫শ ভাগ, ১ম খণ্ড কাতার পড়ার খরচই জোগাতে পারা যায় না, আমেরিকার খরচ জোগাড় হবে কোথা থেকে ? অনিল বললে—ভারতবর্ষের অনেক ছেলে ত সেখানে গিয়ে নিজে উপার্জন ক’রে লেখা-পড়া শিখছে । অনল মনে-মনে অবিশ্বাসের চাসি হেসে ব’লে উঠ ল— “কে ? তুমি নিজে উপার্জন করে লেখাপড়া শিখবে ?” কিন্তু মুখে প্রকাশ্বে সে বললে—কিন্তু সেখানে গিয়ে পৌছতেও ত পাথেয় ও পুজিতে অস্তত হাজার-খানেক টাক চাই ? অনিল ব’লে উঠল—আমাদের বাড়ী আর জমিজায়গায় আমার অংশ আমাকে ভাগ । ক’রে দিন, আমি তাই বেচে পুজি ক’রে নিয়ে জাহাজের খালাসী কি খানসাম যা-হয়-কিছু-একটা হ’য়ে যাবোই যাবো...••• অনিলের মুখে সৰ্ব্বাগ্রে সম্পত্তি-ভাগের প্রস্তাব শুনে অমল মৰ্ম্মাহত হ’ল । কিন্তু মুখে বললে—কোনো কাজই ক্ষণিক উত্তেজনার বশীভূত হয়ে হঠাৎ করা উচিত নয় । শান্ত হ’য়ে কিছুদিন ভেবে-চিন্তে দেখ, তা’র পর যা ভালো মনে হয় কোরো । অনিল অসহিষ্ণুভাবে ব’লে উঠ ল—আমি পনর দিন ধরে এই কথাই কেবল ভাব ছি, এ আমার স্থির সঙ্কল্প । এর নড় চড় নেই। অনল বললে—আচ্ছ, আমি মোটে একদিনের ছুটি নিয়ে এসেছি, আমাকে আজকেই ফিরে যেতে হবে । তুমিও কেন আমার সঙ্গে চলে না ? তোমার ত এখানে আর কোনো কাজ নেই ? অনিল বললে—আমাকে যাবার উপায় খুঁজে বা’র করতে হবে । এখন অ’মি এখান থেকে কোথাও যেতে পারব না । - অনল বললে—আচ্ছা, আমি শিগগীর একদিন এসে তোমার সঙ্গে দেখা করব । অনল তখনই অনিলের মেস থেকে বিদায় হ’ল ; অনিল দাদাকে একটু বিশ্রাম করতেও বললে না, তা’র খাওয়া হয়েছে কি না এবং এখন সে কোথায় যাবে তাও জিজ্ঞাসা করলে না। অনল বাড়ী ফিরে গেল। তা’র সকল কাজের মধ্যে