বিষয়বস্তুতে চলুন

পাতা:প্রবাসী (প্রথম ভাগ).djvu/৩৫৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

৮ম ও ৯ম সংখ্যা ।] \ . দেবতার দৃষ্টিপাতে পবির প্রসাদ হাতে, ফিরে এস ভাগ্যবতী, আপন আলয়, বিশ্ববাসী-দ্বারদেশে, যাচকের সম এসে, মেগে লবে সে অমৃত প্রেমশাস্থিময় ! রামচন্দ্রের বিরহ । ৰামচন্দ্র হিন্দুস্তানবাসীর আদর্শ পুরু। রামের ন্যায় পুত্র, রামের ন্যায় ভ্রাতা, রামের ন্যায় স্বামী, রামের ন্যায় রাজা –হিন্দুস্তানে ইহাই শুভাগীর চরম কামনা । এই বিশাল ভারতবর্ষে রাম’ নাম ঐকোর অমোঘ মন্ত্র । মারাঠা, বাঙ্গালী, পাঞ্জাবী, রাজপুত, এই নামোচ্চারণের সঙ্গে ভক্তি ও প্রীতিতে উচ্ছ,সিত হইয়া উঠিবেন। এখনও প্রতিরুথানকালে শতশত কণ্ঠে রামনাম উচ্চারিত হয় । এখনও শতশত মুমূর্য ব্যক্তি রামনাম উচ্চারণ করিয়া মৃত্যন্ত্রণা ভুলিয়া যায়। রামের প্রতি এই প্রীতি, হিন্দুজাতির চরিত্রকে একদা একনিষ্ঠ কৰ্ত্তব্যপরায়ণতার পুণ্য উপাদানে গঠন করিয়াছিল। উনষোড়শ বর্ষ বয়সে রামচন্দ্ৰ “চলকপালকুগুলা” তাড়কাকে বধ করিয়া তপোবনের শান্তি অব্যাহত করেন, ধনুজ্যারোপণে কর্কশ-পাণি প্রবীণ কিন্তু বিফলকাম রাজন্তবর্গের সম্মুখে বিরাট হরধনু ভঙ্গ করেন এবং ক্ষত্রিয়বধে নিরত ছদ্ধর্ষ পরশুরামকে পরাস্ত করিয়া দ গুবিধান করেন । এইরূপে শোবীৰ্য্যসম্পন্ন রামচন্দ্র অনতিক্রাস্তকৈশোরেই ভুবনবিজয়ী প্রতাপের পুৰ্ব্বাভাস প্রদান করেন। কিন্তু হিন্দুস্তান শারীরিক বলের সম্মান করিলেও তাহার পূজা করে না। বুত্র, হিরণ্যকশিপু, গয়াসুর, কংস এদেশে পূজা পায় নাই । রাজপদে অভিষেকোদ্যত রামের বনে যাইতে হইবে । চন্দনচর্চিত অভিৰেকমানোজ্জল প্রকুরকাস্তি রামচন্দ্র সহস। শুনিলেন, তাহার পৈত্রিক সিংহাসনে স্থান নাই, কাঙ্গাল,র বেশে বনে জঙ্গলে জীবনের শ্রেষ্ঠভাগ অতিবাহিত করিতে হইবে । তিনি কৈকেয়ীকে বলিলেন, “একথা একটা বেশী কি ? দেৰি, আমি ত পিতার আদেশে বিষ ভক্ষণ করিতে পারি, অনলে প্রবেশ করিতে পারি ; কিন্তু অজ পিত প্রবাসী ૨૨ છે আমাকে পূর্বের স্তায় অভিনন্দন করিতেছেন না কেন ? তিনি ভূতলে বদ্ধদৃষ্টি হইয়া মলিনভাবে অঞ বর্ষণ করিতেছেন কেন ? এ দৃশু আমার সহ হয় না।" পুত্র এবং পিতার এই দুইখানি চিত্র জগতের কোন শ্রেষ্ঠ চিত্রকরের তুলিতে অঙ্কিত হইয়া থাকিবার যোগ্য । যিনি প্রফুল্লমনে রাজপদে প্রতিষ্ঠিত হইতেছিলেন, তিনি প্রফুল্লমনে বনে চলিলেন । বিচিত্ৰকুসুমশোভা বড়মঞ্জরীশালী নগরাজী, কচিং বেণীকৃত জল, কচিং আবৰ্ত্তশোভা গঙ্গাধারা, নানাপুষ্পরজোধূস্ত পাৰ্ব্বত্য আকাশ–এই সরস প্রাকৃতিক দুগু দেখিতে রামচন্দ্র চলিলেন ; তিনি মণির মুকুট ফেলিয়া আসিয়াছিলেন, কিন্তু সত্যের কিরীট মাথায় ধারণ করিয়া বনবাসী হইলেন । ভরত র্তাহার মুকুটবিলীন রাজ শ্রীর প্রভ দেখিয়া চমৎকৃত হইয়াছিলেন, অধ্বশ্ৰমজনিত একটি স্বেদবিন্দুও তাহার শ্ৰীমুখপঙ্কজ ম্লান করে নাই । রাম চলিয়া গেলেন ; বিমলিন অযোধ্যাপুরীর চিত্র শোকে সকরুণ হইয়া উঠিল। সে দিন—“পুত্ৰং প্রথমজং লন্ধা জননী নাভ্যনন্দত” । বনবাসিগণ অনভ্যস্তবনশ্রম সত্যভাষী পুরুষশ্ৰেষ্ঠের রূপমুধা পান করিয়া সুখী হইল। দভাকুরনিৰ্ব্বাপেক্ষ মৃগযুথ কর্ণ নয়ন ধনুপাণি রামমূৰ্ত্তি দেখিতে লাগিল— তাহারা ভয় করিল না । কিন্তু তথাপি আশঙ্কা হইতে পারে, বুঝিবা কবির হস্তে রামচরিত্র কতকট নারসাভাবাপন্ন হইয়া পড়িল । পঞ্চদশ বর্য বয়সে ভয়ঙ্করী রাক্ষসীকে বধ করিতে হইবে, রামচন্দ্র ধনুৰ্ব্বাণ হস্তে লষ্টয় প্রস্থত । খুব সমারোঙ্গের সঠিত রাজ্যভিষেকের উদ্যোগ চলিল রাম অভিষেকের জঙ্গ স্নান করিয়া প্রস্তুত । নিয়তির বিধান অন্তরূপ হইল সিংহাসনে তঁাচার স্থান নাই, চতুর্দশ বৎসর কাল পশুগণের সঙ্গে জঙ্গলে বাস করিতে হইবে, রাজ তক্তটি ছোট ভাইকে ছাড়িয়া দিতে হইবে ; রাম অম্লানমুখে তাঙ্গাতেই সন্মত। এ রাম কেমন ? কাষ্ঠপুত্তলিকার মত নন কি ? দেবভাব যদি অতি বেশী হইয়া পড়ে, শোক দুঃখ প্রভৃতি মনুষ্য-মুলভ ভাব যদি কাহারও চরিত্রকে একেবারেই স্পর্শ করিতে না পারে, তৰে সে চরিত্র যেন আমাদের সহানুভূতি হইতে দূরবর্তী হইয়া পড়ে।